All Menu

৭ম গ্লোবাল ফ্যাটি লিভার ডে উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংগৃহীত চিত্র।

ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ১৩ জুন ‘৭ম গ্লোবাল ফ্যাটি লিভার ডে’ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন:
“সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও ১৩ জুন, ২০২৪ ‘৭ম গ্লোবাল ফ্যাটি লিভার ডে-২০২৪’ উদ্‌যাপন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। দিবসটিতে আগামী দুই বছরের জন্য প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘Act now, Screen Today!’ –যা অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে ২০২০ ও ২০২১ সালে পরপর দু’বছর ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ন্যাশ দিবস’ হিসাবে উদ্‌যাপিত হয় যা বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বের ন্যাশ তথা ফ্যাটি লিভার সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
আমাদের সরকার লিভার রোগসহ অন্যান্য ঘাতক ও সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধ এবং চিকিৎসাসেবার উন্নয়নে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আমরা রাজধানী ঢাকায় শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছি। এর ফলে স্বল্পব্যয়ে পরিপাকতন্ত্র, লিভার এবং প্যানক্রিয়াস সংক্রান্ত জটিল রোগসমূহের আধুনিক এবং উন্নত চিকিৎসা প্রদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে। আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজি বিশেষায়িত হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এসকল হাসপাতালে এসংক্রান্ত অন্যান্য বিশেষায়িত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। লিভার চিকিৎসা এবং প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য দেশীয় বিশেষজ্ঞদের বিদেশে প্রেরণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞগণ লিভার রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তারা জাপান ও কিউবার বিশেষজ্ঞদের সাথে যৌথভাবে ন্যাসভ্যাক নামে হেপাটাইটিস-বি চিকিৎসায় একটি নতুন ওষুধ উদ্ভাবন করেছেন। লিভার চিকিৎসায় ইমিউনথেরাপিসহ সকল ওষুধ দেশেই উৎপাদন করা হচ্ছে এবং এগুলো বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এদেশে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসায় স্টেমসেল থেরাপি, টিপস, প্লাজমা এক্সচেঞ্জ, লিভার ডায়ালাইসিস, টেইস ইত্যাদি আধুনিক চিকিৎসার প্রচলন করা হয়েছে। আমাদের লিভার বিশেষজ্ঞরা ফ্যাটি লিভার ও লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় ইনস্টিটিউটের সাথে যৌথভাবে হার্বাল মেডিসিনের ব্যবহার সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকার নতুন নতুন চিকিৎসা প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সাড়ে তিন বছরের সরকারে স্বাস্থ্যকে সংবিধানের মূল অধিকারের অংশ হিসেবে সংযোজন, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্বদান, নতুন নতুন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, চিকিৎসকদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ গঠনসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে আমরা স্বাস্থ্যখাতে প্রথম সেক্টর কর্মসূচি গ্রহণ করি। ফলে এমডিজিতে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়। সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ শিশু মৃত্যুহার হ্রাসের জন্য এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড ফর ইমপ্রুভিং দ্যা লাইভস অব উইমেন এন্ড চিলড্রেন, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড ফর ডিজিটাল হেলথ ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট পুরস্কার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে পোলিও নির্মূল সনদ অর্জন করে। তাছাড়া, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)-এর সফলতার জন্য গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাকসিন এন্ড ইমুনাইজেশন (গ্যাভি) আমাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ও দু’বার গ্যাভি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। গত ১৫ বছরে আমরা স্বাস্থ্যখাতের আমূল পরিবর্তন করেছি। জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি- ২০১১ অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকার সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কোভিড অতিমারি প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
আমরা ২৩টি নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। এছাড়া, দেশে ৪৭টি বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। আমরা সাধারণ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছি। সাড়ে আঠারো হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এসকল পদক্ষেপের ফলে চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে, বেড়েছে দেশের মানুষের গড় আয়ু।
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার না খাওয়া, কায়িক পরিশ্রম না করাসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্বব্যাপী ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আমি আশা করি, গ্লোবাল ফ্যাটি লিভার ডে-২০২৪ উদযাপন এ বিষয়ক জনসচেতনতা সৃষ্টিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে। আমরা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্যখাতে ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো-ইনশাল্লাহ ।
আমি ‘৭ম গ্লোবাল ফ্যাটি লিভার ডে-২০২৪’-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top