ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার ৯ জুন ‘আন্তর্জাতিক আরকাইভস দিবস’ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছে:
“আন্তর্জাতিক আরকাইভস সংস্থা ২০০৭ সালের বার্ষিক সাধারণ সভায় সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার দিন ১৯৪৮ সালের ৯ জুন তারিখ ‘আন্তর্জাতিক আরকাইভস দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস আন্তর্জাতিক আরকাইভস সংস্থার সদস্য হিসেবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও ‘আন্তর্জাতিক আরকাইভস দিবস’ পালন করছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এ উপলক্ষ্যে আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন জ্ঞান পিপাসু, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সচেতন মানুষ ছিলেন। জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে ৩০ লাখ বীর শহিদের রক্ত ও
২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনের আত্মত্যাগ এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান-আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য সাহসিকতার বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলাদেশ’ এ রূপান্তরিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। একই সাথে তিনি বাঙালির বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস, গর্বিত ঐতিহ্য ও আবহমান সংস্কৃতির তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণের বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছিলেন। সেই প্রেক্ষাপটে তিনি রাষ্ট্র কাঠামো পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সকল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ১৯৭২ সালে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগার ‘বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস’ প্রতিষ্ঠা করেন। জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে শেরেবাংলা নগরে জাতীয় আরকাইভসের জন্য ২ একর জমি প্রদান করেন এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য স্থায়ী ভবন নির্মাণের সকল উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর এদেশের অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো এই প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিতে কোনো উদ্যোগ নেয় নাই। বরং তারা আমাদের গর্বিত ইতিহাস বিকৃত করেছিল এবং এদেশ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল। ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের পর আমরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরি। ২০০১ সালের ১৪ জুন জাতীয় আরকাইভস ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। গত সাড়ে ১৫ বছরেও আমরা জাতীয় আরকাইভসের অবকাঠামো ও পরিষেবা উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ২০১৬ সালে আমরা অনেকগুলো নতুন পদ সৃষ্টি করেছি এবং আরকাইভস ও গ্রন্থাগার পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করেছি। আমরা বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ও স্থায়ী দলিল-দস্তাবেজ সংগ্রহ, সংরক্ষণসহ দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ‘বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভস আইন, ২০২১’ জারি করেছি। সনাতনী/পুরাতন নথিপত্র ডিজিটাইজেশন করার কার্যক্রম চালু করেছি। যার ফলে আমাদের গবেষক, লেখক, সাহিত্যিক, প্রোফেশনাল, শিক্ষার্থী, সংস্কৃতি কর্মী, গণপ্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, নীতি নির্ধারক ও সর্বোপরি সাধারণ জনগণ নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে। আজকের সৃষ্ট নথিপত্রই আগামী দিনের ঐতিহাসিক দলিল তথা মূল্যবান আরকাইভ উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। আরকাইভস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করাই ‘আন্তর্জাতিক আরকাইভস দিবস’ উদ্যাপনের মূল উদ্দেশ্য। আমি বিশ্বাস করি, আরকাইভ এবং আরকাইভিস্টগণ সামাজিক দায়বদ্ধতা, স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে এবং ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। আমি আশা করি, আমাদের আরকাইভিস্টগণ তাঁদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও দক্ষতা প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভসকে আরো সমৃদ্ধশালী আরকাইভস হিসেবে আত্মপ্রকাশে নিজেদের নিয়োজিত করবেন।
আমি ‘আন্তর্জাতিক আরকাইভস দিবস ২০২৪’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।