ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ২৩ মে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০২১’ প্রদান উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০২১’ প্রদান করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। আমি এ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত শিল্প উদ্যোক্তাগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৬-৫৭ সালে তৎকালীন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও গ্রাম সহায়তা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকাকালীন সর্বপ্রথম এ অঞ্চলে শিল্প প্রসারে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে শিল্পায়নের গুরুত্ব অনুধাবন করে তিনি ১৯৫৭ সালে ইস্ট পাকিস্তান স্মল এন্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ (ইপসিক) প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতার পরে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে শ্রমঘন শিল্পায়নের ধারা বেগবান করে টেকসই ও সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিতে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার দেশব্যাপী শিল্পখাতের কার্যকর বিকাশে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত শিল্পায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় শিল্পনীতি-২০২২ ও খাতভিত্তিক পৃথক নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে। আমাদের সরকারের গৃহীত শিল্পনীতি ও কর্মসূচির ফলে দেশে টেকসই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পখাত দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান ক্রমেই জোরদার হচ্ছে।
শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিকাশের জন্য বিনিয়োগকারীদের কর সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। সারাদেশে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিসিকের ৮২টি শিল্পনগরী/শিল্পপার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন সম্ভব হচ্ছে এবং নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক অগ্রগতির বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে এগিয়ে আছে। জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ইতোমধ্যে ৩৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা মধ্যম আয়ের দেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
সারাবিশ্বে চলমান শিল্পবিপ্লবের ধারা শিল্প উৎপাদনে ব্যাপক প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এনেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক টেকনোলজির ব্যবহার শিল্প উৎপাদনের ধারা পাল্টে দিয়েছে এবং পূর্বের তুলনায় উৎপাদনশীলতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও শিল্পকারখানায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবা শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে। এ ধারা এগিয়ে নিতে আমরা সব ধরনের নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছি। এতে করে দেশের শিল্পখাত উজ্জীবিত হচ্ছে এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পায়নের ধারা বেগবান হচ্ছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’ প্রদান আমাদের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও নীতি সহায়তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমি মনে করি, এ স্বীকৃতির মাধ্যমে শিল্প উদ্যোক্তাগণ নিজ নিজ কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের উৎকর্ষ সাধন ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে অনুপ্রাণিত হবেন। তাঁরা নিজ নিজ শিল্পকারখানায় উৎপাদিত পণ্যের গুণগতমান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করে রপ্তানি বৃদ্ধিতেও অবদান রাখবেন। ফলে একদিকে যেমন উদ্যোক্তাগণ ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবেন, অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি, শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়াস আরো জোরদার হবে বলে আমার বিশ্বাস।
শিল্পায়নের চলমান এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সাল নাগাদ জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।
আমি, ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার-২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।