ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ২৭ জুলাই ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) ২০২০’ সম্মাননা প্রদান উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রথমবারের মতো ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) ২০২০’ সম্মাননা প্রদান করতে যাচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানাই। যাঁরা এ স্বীকৃতি পাচ্ছেন তাদেরও জানাচ্ছি আন্তরিক অভিনন্দন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম অনুধাবন করেছিলেন জ্ঞাননির্ভর আধুনিক কৃষিই উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রথম সোপান। তাই তিনি স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালের ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, “নতুন করে গড়ে উঠবে এই বাংলা। বাংলার মানুষ হাসবে। বাংলার মানুষ খেলবে। বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে। বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে। এই আমার জীবনের সাধনা, এই আমার জীবনের কাম্য।” তিনি বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২৫ বিঘা পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফসহ উন্নত কৃষি উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে কৃষি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে কৃষির উন্নয়নে অনুপ্রেরণা যোগাতে কৃষি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ প্রবর্তনের পাশাপাশি কৃষিবিদদের সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে কৃষির আধুনিকীকরণ ও সার্বিক উন্নয়নে কৃষিবান্ধব নীতি ও সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমরা আধুনিক কৃষি শিক্ষার প্রসারে নতুন নতুন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করেছি। কৃষিক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করেছি। একই সাথে জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। কৃষি বাতায়ন, কৃষক বন্ধু ফোন সেবা (৩৩৩১), কৃষকের জানালা, কৃষি কল সেন্টার (১৬১২৩) ইত্যাদির মাধ্যমে কৃষকদের সাথে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। ফলে বন্যা, খরা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবনসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভাসমান চাষ, বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদন, ট্রান্সজেনিক জাত উদ্ভাবন, পাটের জেনোম সিকুয়েন্স উন্মোচন ও মেধাসত্ব অর্জন সম্ভব হয়েছে। বর্তমান সরকার সার, বীজসহ সকল কৃষি উপকরণের মূল্যহ্রাস, কৃষকদের সহজশর্তে ও স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা প্রদান, ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুযোগসহ তাঁদের নগদ সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। এসব কর্মসূচির ফলে আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। আমরা দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। এতে কৃষিনির্ভর শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী ও দ্রুত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে সফল হয়েছি। এ সেতুর মাধ্যমে নদী বিধৌত উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য সম্পদ আহরণ এবং সারাদেশে দ্রুত বাজারজাতকরণের ফলে এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের জীবনমান আরো উন্নতি হবে। আমাদের সরকার গৃহীত কৃষিবান্ধব নীতি ও কার্যক্রমে দানাদার খাদ্য, মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে। ধান, পাট, আম, পেয়ারা, আলু প্রভৃতি ফসল ও ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ ৮টি দেশের মধ্যে রয়েছে। এ সকল কার্যক্রমে অবদান রাখছেন, তাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গকে আজ ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) ২০২০’ হিসেবে ঘোষণা ও সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে দেশে কৃষিপেশার মর্যাদা আরো সমুন্নত হবে এবং কৃষির উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমাদের লক্ষ্য বর্তমান প্রয়াসকে আরো গতিশীল করে ২০৩০ সালের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার উন্নত, সুখী, সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
আমি ‘কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি)’ হিসেবে স্বীকৃত সকল ব্যক্তিকে আবারও অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং সে সাথে অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।