স্বামীর কাছে বউ ছাড়া জগতের সব নারী এবং বউয়ের কাছে স্বামী ছাড়া জগতের সব পুরুষের দাম যদি আপগ্রেডেশন হয় তবে শান্তি পালিয়েছে। যেখানে পারস্পরিক সম্মান এবং মূল্যায়নের ভাটি লেগেছে সেখানে সম্পর্কটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। স্বামীর কাছে একমাত্র এবং কেবলমাত্র প্রায়োরিটিতে তার বউয়ের থাকা উচিত আবার বউয়ের কাছে স্বামীও তেমনি। তৃতীয়পক্ষ যখন বুদ্ধিদাতা হয়, সুখ-দুঃখের সিদ্ধান্তের নির্ধারক হয় তখন সমর্কের সরলতা হারিয়েছে। দাম্পত্যে তালমিল থাকবে আবর গোলমেলে হবে। দেহ ও মনের প্রয়োজনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুধরে নেবে। তবে দু’জনার সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে তৃতীয়জন ডাকলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্পর্কের সৌন্দর্য নষ্ট হবে। কুবুদ্ধি দেওয়ার লোকের অভাব নাই। সমাজে যত বিচ্ছেদ, দু’জনের অমিল কিংবা মনের অশান্তি সেসবের বেশিরভাগের ক্ষেত্রে তৃতীয়পক্ষের অসৎ উদ্দেশ্যে দেওয়া কথিত সৎ পরামর্শ দায়ী। এমনকি এসব কুপরামর্শ রক্তের আপনজন থেকেও আসতে পারে। তাছাড়া ঘরে ঘরে ঝগড়াঝাটি হলে, দূরত্ব বাড়লে মধ্যস্থতাকারী পড়শীর কিছুটা কদর বাড়ে।
দু’জনের যত সমস্যা, দাম্পত্যের যা অমিল তা যতদূর সম্ভব নিজেদের আলোচনায় মিটিয়ে নেওয়া উচিত। মান-অভিমান ভাঙানোর প্রশ্নে, রাগ-ক্ষোভ বিতাড়িত করার ক্ষেত্রে একজন আক্রমনাত্মক হলে বাকিজনের রক্ষণাত্মক হওয়া জরুরি। দু’জনের মেজাজ তিরিক্ষি না হলে কোন ধরনের বিপত্তি বাঁধার কোন সম্ভবনা নাই। সেক্রিফাইসের মডিফায়েড নাম সংসার। যেখানে একজন আরেকজনকে বুঝবে, সহ্য করবে এবং সম্মান করবে। একজন শিশুসুলভ আচরণ করলে আরেকজনের ম্যাচিউরড আচরণ করা খুব দরকারি। রাগ-ক্ষোভ, শোক-ভোগের ভারসাম্য না হলে সে সম্পর্কের সুখ বাড়ে না। পাড়াপড়শির মেকি উদযাপন দেখে, সামাজিকমাধ্যমে ছদ্মবেশী সুখের ছড়াছড়ি দেখে সেসবের সাথে জীবনকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। নাটক-সিনেমা আর জীবনের বাস্তবতা এক নয়। সংসারের চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দু’জন দু’জনাকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরলে তবে শান্তি আসবে।
সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি দরকার বিশ্বাস। পাহারা দিয়ে কারো জন্য কাউকে বিশ্বস্ত রাখা যায় না। আত্মগরজে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। চারপাশে আকর্ষণীয় অপশন হাজির হবে, বাহারি বিজ্ঞাপনে মন বিষিয়ে দেবে কিন্তু তাতে হারিয়ে যাওয়া যাবে না। যে কথা রাখে না তার জন্য কেউ বিশ্বস্ত থাকে না। প্রকৃতির একটা ব্যালেন্সনীতি থাকে। ঠকালে ঠকতেই হবে। ঠক-ঠকানোর এই মেলা দু-দিন আগে পরে জমতে পারে তবে রবের ঘোষণার ব্যতিক্রম হয় না। ঠকানোর মানদন্ড কেবল শরীর-মনের অপব্যবহার নয়। এটানআরও বিস্তীর্ণ পরিসরে হতে পারে। রিজিক ফুরিয়ে যাওয়া, সময় বদলে যাওয়া কিংবা স্বস্তি হারিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেও শাস্তি বন্টিত হতে পারে। মানসিকতায় যিনি যেমন মানুষ তার জন্য ঠিক অনুরূপ সত্য ও সময় অপেক্ষা করছে। সঙ্গীর ক্ষেত্রটিও এই সত্য অতিক্রম করতে পারে না।
জীবনটা সুন্দর যদি সাজানো যায়। দাম্পত্য বন্ধুত্বের খেলাঘর হতে পারে আবার অশান্তির জেলখানাও হতে পারে। একটা ভুল মানুষ সব স্বপ্ন ওলট-পালট করে দিতে পারে। সেজন্য মানুষ চেনা জরুরি। যতক্ষণ পর্যন্ত দু’জনের সম্পর্ক-সমস্যা নিজেরা সামলে রাখা যায়, ফয়সালা হয় ততক্ষণ ঘরের খবর পরকে দেওয়া ঠিক নয়। নিজেদের দুঃখ অপরকে জানালে তা যেমন বাড়ে তেমনি সুখ অতিমাত্রায় প্রদর্শন করলেও তাতে নজর লাগে। টুকটাক সমস্যায় যে শুভাকাঙ্খীর দারস্থ হন সে আপনাদের দু’জনের জন্য কতোখানি কল্যাণকামী তা মেপে নেওয়া উচিত। বদ মতলব যাদের থাকে তাদের কাছে সমস্যা তুলে দেওয়া মানে আরও হাজারও সমস্যার বীজ বপন করা। এই শ্রেণির মানুষের থেকে সমাধান আশা করার চেয়ে আদালতের বারান্দায় ঘোরা উপকারের। তাতে কিঞ্চিৎ সম্মানহানি ঘটলেও অন্তত সম্পর্কহীন হতে হয় না।
টুকটাক সমস্যাহীন সংসার হয় না। প্রত্যেক সংসারের সাথে সন্তান এবং আরও কিছু মানুষ জড়িয়ে। বিচ্ছেদের কথা ভাবা সহজ তবে এরচেয়ে শ্রীহীন আর কিছুই নাই। যত ত্যাগ করে হোক থাকার জন্য শেষ চেষ্টা করা উচিত। আজ যা অসুন্দর তা চিরকাল অসুন্দর থাকবে কিংবা আজ যা সুন্দর তা চিরকাল সুন্দর থাকবে- এমন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। সময় বদলায়, ভাগ্যও বদলায়। সময়ের সুফল পেতে সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ হচ্ছে- ধৈর্য। প্রত্যেকটা সম্পর্কের ভিত্তি বিশ্বাস। কারো আচরণেই যাতে সেটা নড়বড়ে না হয়। একটা মানুষ- যে জীবনের সাথে জুড়ে গেছে তাকে বোঝা জরুরি। ইগো ত্যাগ করতে না পারলে সম্পর্কে সুদিন ফেরে না। মোটামুটি অমিলে অমিলে যে মিল তার যোগফলেই দাম্পত্য। মেনে নিতে হয় এবং মানিয়ে নিতে হয়। সংসারের চেয়ে সুন্দর আর কিছু নাই। কারো কুপরামর্শ এড়িয়ে দু’জনের যাত্রা হোক সুন্দরের সাথে। পারস্পরিক সম্মান এতো অধিক হোক যাতে একজন আরেকজনের শূন্যতায় ছটফট করবে। যেখানে তৃতীয়পক্ষের অনুপ্রবেশ চিরকাল নিষিদ্ধ থাকবে।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]
প্রধান বার্তা সম্পাদক ও চেয়ারম্যান: মো. আতিকুর রহমান
ভাইস-চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টর: তানভীর আমের হোসেন (নুমান)
প্রধান সম্পাদক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক: মো. রফিকুল ইসলাম
রিপোর্টিং ও প্রধান কার্যালয়: নাহার ম্যানশন (সি-৯), ১৫০ মতিঝিল সি/এ, ঢাকা – ১০০০। বাংলাদেশ।
ফোন: +88 09611-378696 , ইমেইল: [email protected]
© ২০২৪ ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত