চাকুরি হতে অবসরের পরে কিংবা চাকুরির শেষ শেষ সময়ে সমাজের অনেকেই ফেরেশতার ভাব ধরেন! জামাতে নামাজ পড়ে কপালে দাগ ফেলে দেন, লম্বা লম্বা চিল্লা মারেন! বিশাল তসবি নিয়ে ঘোরেন! সততা-নৈতিকতা বিষয়ক বয়ান দেন! কেউ কেউ নামের আগে হাজী লাগানোর আয়োজন করেন! ধর্মের মোটা মোটা বই মুতাওয়ালা করেন! সুযোগ পেলেই ধর্মীয় মারকাজে দু’চার কথা বলেন! ওয়াজ-নসিহতের শেষ নাই! মসজিদের সভাপতি, মাদ্রাসার সেক্রেটারি, মাহফিলের ডোনার আরও কত কি! এর একটি কাজও খারাপ কাজ না! তবে সমস্যা তো অন্য জায়গায়!
কেবল বুড়োকালে ধর্মে ডুবে যেতে বলা হয়নি! সমস্যা এটাও না! বেতনের চেয়ে ঘুষ বেশি খাওয়া, ফাইল আটকিয়ে মানুষকে জিম্মি করা, সৎভাবে দায়িত্ব পালন না করা, সেবা গ্রহীতাকে নানাভাবে হেনস্তা করা, অফিসের সময়ে নিজের কাজে ব্যয় করা-এসবের বিনিময়ে কতশত ভালোকাজ করলে একেকটি পাপ মোচন হবে? কারো অধিকার হরণ করে মসজিদের মধ্যে সারাজীবন ঘুমিয়ে থাকলেও তাতে কাজের কাজ কিচ্ছু হবে কিনা-সে ফতোয়াতে মুফতি দরকার নাই! বিবেক জবাব দিয়ে দেবে! সে সময়টায় অনুশোচনা কিংবা প্রায়শ্চিত্ত-কোনটাই কাজে আসবে না
নিজের কাজ সঠিকভাবে পালন করা, হালাল জীবিকায় দিনাতিপাতের চেয়ে বড় কোন ইবাদাত নাই। পেটে হারাম, ভোগে হারাম নিয়ে লম্বা লম্বা তসবি টিপলে আঙুলের চামড়া পুরু হতে পারে, সেজদায় রাত কাটিয়ে দিলে জমিন নিঁচু হতে পারে কিন্তু পাপ মোচন হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব ক্ষমা করতে পারেন কিন্তু কারো হক ঠকালে সেটা খোদা মিটিয়ে দেবেন না!
ক্ষমতায় থেকে, চেয়ারে বসে কারো সামান্যতম অধিকার যদি হরণ করা হয়, জিম্মি করে বাড়তি পয়সা নেয়া হয়, দায়িত্বকালে ফাঁকি দিয়ে যদি কারো সময় নষ্ট করা হয় তবে কোন সুফিগিরি সেই পাপের কপাল মুছতে পারবে না! আল্লাহ কেবল মসজিদে নন বরং অফিসেও থাকেন। তিনি দেখেন কিন্তু তড়িৎ কিছু বলেন না। ঢিল দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না! জেনেশুনে পাপ করে বারবার তওবা করলে সে পাপ মাফ হয় না। পাপ যে বাপেরেও ছাড়ে না!
অবসরের পর এতো ইবাদাতের দরকার নাইতো! আবশ্যিক আমলগুলো তরক না করলেই হলো! ইবাদাত তো কর্মকালে করা উচিত ছিল। পাপ থেকে তো তখন বাঁচা দরকার ছিল! শরীরের মধ্যে পাপের অর্থে কেনা খাদ্য প্রবেশ করলে, কারো রক্ত বিক্রি করা টাকা ভোগ করলে সে রক্ত অপবিত্র-দুষিত হয়। অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থের যা কিছু তার সবটাতেই পাপ জড়িয়ে থাকে। পাপের টাকায় দান আরও বেশি পাপ বাড়ায়!
আপনাকে কেউ বলেনি মসজিদে দান করতেই হবে! ঘুষ খেয়ে সে টাকায় মসজিদ করে দিবেন আর তাতে সওয়াব হবে? কাজের অবসরে গিয়েছেন এবার জীবনের অবসরে গেলেই বুঝতে পারবেন জীবনের মজা কারে কয়! খালি কী ওপারে? জীবদ্দশায় কিছু কিছু আলামত মিলবে! মানসিক অশান্তি, পারিবারিক উপেক্ষা, সন্তানদের অবহেলা, প্রিয়জনদের অবজ্ঞা ধীরে ধীরে সব পাবেন! পাপের অর্থে বারাকাহ নাই! ওটা যেভাবে আসে ঠিক সেভাবেই যায়! মধ্যখানে আপনাকে দোষী বানায়!
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]
প্রধান বার্তা সম্পাদক ও চেয়ারম্যান: মো. আতিকুর রহমান
ভাইস-চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টর: তানভীর আমের হোসেন (নুমান)
প্রধান সম্পাদক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক: মো. রফিকুল ইসলাম
রিপোর্টিং ও প্রধান কার্যালয়: নাহার ম্যানশন (সি-৯), ১৫০ মতিঝিল সি/এ, ঢাকা – ১০০০। বাংলাদেশ।
ফোন: +88 09611-378696 , ইমেইল: [email protected]
© ২০২৪ ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত