কল্পনাতে যত ভালোভাবে ভালোবাসা যায় বাস্তবতায় ততটা পারা যায় না। ভাবনায় মনকে যত বিস্তৃতিতে ছড়ানো তত আলোর দেখা ভালোদের কাছে মেলে না! যার সুখের যে অংশটুকু তার অনেকটুকু নিয়ে আমাদের কল্পনার জগৎ। সিনেমাটিক দৃশ্য বাস্তব জীবনে দু-একবার হয়তো আসে। সুতরাং যেভাবে ভাবি সেভাবেই পাবো- এই আশায় বসে থাকলে দুঃখ বাড়তেই থাকবে। বরং যেভাবে পেয়েছি সেখান থেকে সর্বোচ্চ সুন্দরটুকু গ্রহন করতে পারলে তবেই জীবনে সুশোভিত সৌন্দর্যের ফুল ফুটবে। কারো সাথে তুলনা করে নিজের জীবনে দুঃখ টানা মানে জীবনকে পঙ্গু করা। আমরা ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারি না; বড়জোর চেষ্টায় পরিবর্তন করতে পারি। অলীক কল্পনার জগতে ডুবে থাকলে সুখেরও যে অসুখ হবে। যে রঙ্গমঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করছি সেখানে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টাটুকু জরুরি।
আমি ফুল-লতা-পাতা ভেবে যে জীবন কাটিয়ে দিতে পারি তবে যখন বাস্তবতার মুখোমুখি হবো তখন কাস্তে-লাঙল ধরতেই হবে। দুঃখের জমিন চাষ করে, নিড়ানি দিয়ে সুখের ফসল কাটতে হবে। আমার যোগ্যতা আমার সম্মান-আসন নির্ধারণ করে। কল্পনায় রাজা-মহারাজা সেজে বসে থাকতে পারি কিন্তু দুপুর বেলায় ভাত-লবনের জন্য, লজ্জা নিবারণে কাপড়-আশ্রয়ের জন্য সংগ্রাম না করে পারি না। কেবল সুখের আশায় মিছিলে অংশ নিলেও দুঃখের নদীটাকে পাড়ি দেওয়ার স্বভাবটুকুন থাকতে হবে। কারো ভরসার আকাশ হয়ে, বিশ্বাসের সাগর হয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আস্থার ছাপ রাখতে হবে। একা ভালো থাকা যায় না। জীবনের প্রয়োজনে হরেক মানুষের সাথে তাল মেলাতে হয়। মানিয়ে নেওয়ার যুদ্ধে বিজয়ী বীরের বেশ ধারণ করতে হয়
অপছন্দের স্বভাবের কিংবা অসুন্দরভাবে চলার মানুষটির গল্প আপনার জীবনের সাথে জড়িয়ে যেতে পারে। হারানোর নয় বরং মানানোর নামই জীবন। যে অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ের সাথে আপনার তিক্ত সাক্ষাৎ তাকেও ধীরস্থিরভাবে মোকাবেলা করুন- আপন হয়ে যাবে। সুখ যে কীসে- আমরা আদতে জানিই না। কাঙ্ক্ষিত চাকরি, সুন্দর সঙ্গী কিংবা পক্ষের সময়- এসব অনুগ্রহ না হয়ে গজবও হতে পারে যদি নসীবে না থাকে। আপনার কীসে মঙ্গল তার খোঁজ আপনার থেকেও আরেকজন রোজ বেশি রাখে। যা ভাবেন তা না হলে, যা আশা করেন তা না পেলে কিংবা যেভাবে ছুটতে চান সেভাবে সম্ভব না হলে- যদি ভেঙে পড়েন তবে আপনিই হারবেন। অথচ হারার জন্য আপনার জন্ম হয়নি। সবকিছু আপনার চাওয়ামত হবে না বটে কিন্তু সবকিছু যদি আপন করে নিতে পারেন তবে শান্তির ফুল ফুটবে।
প্রত্যেক প্রাপ্তির জন্য বিনিয়োগ করতে হয়। যে রেখে যাবেন তা ফিরে পাবেন। সুখের আশায় থাকতে হবে বিশ্বস্ত। অতীতে বপন করতে হবে ভালোকাজ এবং মানুষের সামনে মেলে ধরতে হবে হাসিমুখ। কাউকে ঠকিয়ে কিংবা কাঁদিয়ে অভিশাপের বোঝা মাথায় নিয়ে বেশিপথ পাড়া দেওয়া যায় না। মনের মধ্যে পবিত্রতা না থাকলে সবািছু আপনার বিরুদ্ধে চলবে। আপনি যা আশা করেন তা না পেয়েও আরও সুখ পাওয়া যায়- যদি সময়কে বুকে ধরে আলিঙ্গন করতে পারেন। অভিযোগ কমে গেলে, হাতাশা দমিয়ে নিলে কিংবা উচ্চাকাঙ্ক্ষা যোগ্য ছাপিয়ে না গেলে সব পরিবেশে মানানোর ক্ষমতা মেলে। কোমল হৃদয়ের মানুষ হোন- অসম্ভবও সম্ভব হবে। কল্পনায় মানুষকে শত্রু না বানিয়ে বরং কাল্পনিক জগতেও বন্ধুত্ব কামনা করেন। অস্থিরতা স্থায়ীভাবে কমে আসবে। মনের কাছে যে বার্তা কর্তা হিসেবে রাখবেন তাই সুদসমেত ফেরত পাবেন। ফেলে আসা পা ভবিষ্যতে হাঁটতে শেখায়।
পৃথিবী দু’দিনের। মন্দ দিনটা কেটে যেতে ভালোর সাথে দেখা হবেই। বিপরীত ব্যাপারেও প্রস্তুতি রাখতে হবে। কাজেই প্রত্যাশার পারদ চড়া করে সামান্য সামান্য সুখের পরশ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা কোনমতেই ঠিক হবে না। পছন্দমত সবকিছু হয়নি তো কি হয়েছে! সুখ কুড়ানোর দক্ষ কারিগর হোন! জীবনে সুখের সঞ্চয় বৃদ্ধি পাবে। যে পাথর আপনার দিকে তেড়ে এসেছে সেটার রূপ বদলিয়ে শান্তির পায়রা করুন। মানুষের যে আচরণ অপছন্দনীয়, যে কথা সহ্যাতীত তা আপনার ভালো আচরণ ও সুন্দর কথার দ্বারা পাল্টে দিন। আপনি পরশ পাথর হলে মরিচাধরা লোহাও তার স্বভাব পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে। সবার আগে নিজের পরিবর্তন জরুরি। পৃথিবীতে সুখী মানুষের চাওয়া সবচেয়ে কম। কম চেয়েছে বলেই তারা সবচেয়ে দামী জিনিস পেয়েছে। কল্পনাতেও বাস্তবতার ছোঁয়া থাকুক। আমি সুন্দর হয়ে উঠলে জাগতিক সব অসুন্দর তার তলে চাপা পড়তে বাধ্য। মনের শুদ্ধতায় পথের রুদ্ধতা অপসারিত হোক। একটু সুখের আশায় মানুষ লক্ষ মুহূর্ত বাঁচুক। অন্ধভাবে পক্ষ নেওয়ার অসুস্থতা ফুরালে মানুষ ফুল হয়ে ফুটবে।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]
প্রধান বার্তা সম্পাদক ও চেয়ারম্যান: মো. আতিকুর রহমান
ভাইস-চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টর: তানভীর আমের হোসেন (নুমান)
প্রধান সম্পাদক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক: মো. রফিকুল ইসলাম
রিপোর্টিং ও প্রধান কার্যালয়: নাহার ম্যানশন (সি-৯), ১৫০ মতিঝিল সি/এ, ঢাকা – ১০০০। বাংলাদেশ।
ফোন: +88 09611-378696 , ইমেইল: [email protected]
© ২০২৪ ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত