বুকে হাত রেখে বলুন আপনি যতখানি যোগ্য, আপনার যা মেধা, আপনি যে পরিবার ও পরিবেশের কিংবা আপনার যা চেষ্টা তার থেকে সবগুলো বেশি থাকা সত্ত্বেও আপনার কোন পরিচিত আপনার মত সম্মান পায়নি, চাকুরি হয়নি কিংবা ব্যর্থ থাকেনি? যদি থেকে থাকে তবে আপনি ভাগ্যে বিশ্বাস করতে শুরু করেন। কেবল চেষ্টাই যদি সাফল্য এনে দিতে পারতো তবে আপনাকে বর্তমান অবস্থানে পাওয়া যেতো না। যে স্রষ্টা আপনাকে অসীম নেয়ামত দিয়েছেন, অনেকে মধ্য থেকে আপনাকে পছন্দ করেছেন এবং সম্মান এনে দিয়েছেন- কখনোই তাঁর নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হবেন না। সব সময় মনে রাখবেন যিনি সম্মানিত করতে পারে তিনিই আবার ধ্বংস অনিবার্য করতে পারেন। যিনি ক্ষমতা দিতে পারেন তিনিই আবার সেই ক্ষমতা কেড়েও নিতে পারেন। আপনার হৃদয়ে অহংকার ভর করলে, দম্ভ আসলে এবং ঔদ্ধত্য দেখালে তিনি আপনা ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন। অতীতেও এমন অনেককে দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও বিপর্যস্ত করবেন।
যিনি আপনাকে অনেক দিয়েছেন, চাওয়ারও অধিক দিয়েছেন এমনকি প্রত্যাশারও বেশি দিয়েছেন তার বিরুদ্ধাচারণ করা গোমরাহি। যারা নিঃস্বার্থভাবে আপনার জন্য প্রার্থনা করেছে, যারা শুভকামনা জানিয়েছে কখনোই তাদের হক নষ্ট করবেন না। কাউকে ঠকানোর চিন্তা মাথাতেও আনবেন না। যে পদে থাকেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি আপনাকে যেভাবে রাখে কখনোই নিজেকে অমানুষ হিসেবে জাহির করবেন না। সাহায্য করার সক্ষমতা নাও থাকতে পারে কিন্তু মানুষের জন্য হাসিমুখ উপহার দিতে যাতে কার্পণ্য না করেন। সবার সাথে সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ভালো ব্যবহার করুন। ভালো ব্যবহার আপনার জন্য সদকাহ। আপনার ভুল থেকে পরিত্রাণের স্বয়ংক্রিয় টুল। আপনার সহস্র ব্যস্ততার মাঝেও অপরের উপকার করতে ভুলে যাবেন না। মনে রাখবেন আপনার যা হয়েছে, আপনি যা পেয়েছেন তা কেবল আপনার যোগ্যতায় পাননি। এর পেছনে কারো প্রার্থনা আছে, কারো অধিকার লুকায়িত আছে কিংবা অতীতের কোন ভালো কাজ আছে। আজ যা রেখে যাবেন- ভবিষ্যত আপনাকে সেসবই ফিরিয়ে দেবে।
ক্লাসের সেই ভালো ছাত্রগুলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ভালো মানুষগুলো আজ আপনার অবস্থানে নাই, অনেকেই পৌঁছাতে পারেনি। তাদেরকে যদি মূল্যায়ন করতে ভুলে যান, বন্ধুত্বের সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটান তবে জীবনের মিছিলে আপনি বড্ড একা হয়ে যাবেন। ক্ষমতা, পদ-পদবী কিংবা মেধা মৃত্যু পর্যন্ত থাকে না। জীবনের দু’প্রান্তে দীর্ঘ অবসর থাকে। সেই অবসর বিষাদের হবে যদি পাশে মানুষ না আসে। কত ফুল মুকুলেই ঝরে যায়। কত ফল পাখিদের পেটে যায়। কত ক্ষমতা মাটিতে শুষে খায়। কাজেই বিনয় বিনয়। নিজেকে অনেক কিছু মনে করা ক্ষুদ্রত্বের প্রকাশ। আপনাকে অপরে বড় বলুক- সেভাবে কাজ করে যান। যে মানুষ একা ঘুরে শুতে পারতো না, কান্না ছাড়া কোন ভাষা ছিল না আবার প্রস্রাব-পায়খানার ওপর কন্ট্রোল থাকবে না। সেই মানুষ তার পক্ষের দিনে অতীত-ভবিষ্যত ভুলে গেলে, ভাগ্য-নিয়তি অস্বীকার করলে দুঃখ বাড়বে সয় কমবে না। ভুল না শোধরালে বাড়তে বাড়তে পতনের পাহাড় হয়!
মানুষের অহংকার খাটে না অথচ সেটাই মানুষ বেশি করে। মানুষ জানাতে চায় সে অনেককিছু। আসলে মানুষ তো কিছু না। নাথিং! ঘুমের মধ্যে মারা যায়, কণ্ঠে পানি আটকে বিষম খায়! মানুষ লোহার চেয়ে শক্ত নয়, পাথরের চেয়ে স্থায়ী নয় কিংবা বাতাসের চেয়ে ক্ষিপ্র নয়। অথচ এই সবকিছুকে যিনি মানুষের অধীন করে দিলেন, মানুষের সেবায় নিয়োজিত করলেন- সেই স্রষ্টার আনুগত্য অস্বীকার করলেও তিনি ছাড় দিতে পারেন কিন্তু ছেড়ে দিবেন না। জানার পরেও না মানার জন্য একদিন কৈফিয়তের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। পালনীয় ছিল অথচ অস্বীকার করেছে- কারন দর্শাতে হবে। কারো অধিকার হরণ করলে, কাউকে অসম্মান-অপমান করলে- খোদা নিশ্চয়ই কঠোর দন্ড দিবেন। যত নেয়ামত পেয়েছি, যা ভোগ করেছি- এর বিনিময়ে কিছুই দিতে হয়নি। অথচ যদি এসবের ঋণ অস্বীকার করি তবে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
আমি যা তা অনেককিছু না। আমার চেয়ে অনেক বেশি জানে এমন মানুষ আছে। রুপে-গুণে অনন্য সৃষ্টির অভাব নাই। কোন কোন ফুল মানুষের চেয়ে সুন্দর। নিজেকে অনেক কিছু মনে করা, অহংকারে যোগ্যতাও জাহির করা কিংবা কাউকে অকারণে আঘাত করা- এসব মানবীয় মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যিনি অনেকের মাঝে আমাকে সম্মানিত করেছেন, দায়িত্ব দিয়েছেন কিংবা অনেকের চেয়ে যোগ্য করেছেন তার উদ্দেশ্যের অবমাননা যাতে না করি। আমার দ্বার যাদের কল্যাণ হবে, যাদের উপকার আমার কথা ও কাজের সাথে জড়িত- সে কাজে কখনো কৃপণতা করার দুঃসাহস না দেখাই। যে বারাকাহ আমার চাওয়া-পাওয়ার সাথে জড়িয়ে আছে তা যাতে স্রষ্টা গোস্বা করে কেড়ে না নেন, আমার প্রতি রাগান্বিত না হন- সে চেষ্টা অব্যাহত থাকুক। বরং আমার সামর্থ্য যাতে আরও বাড়িয়ে দেন সেই প্রার্থনা করি। আমার দ্বারা আরও অধিক মানুষের উপকার হোক। কোনদিন কারো অবদানের প্রতি অকৃতজ্ঞ না হই- এই হোক আমার শপথ। যতদিন বেচে ততদবন কল্যাণকর হবো- দীপ্ত শপথ।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]
প্রধান বার্তা সম্পাদক ও চেয়ারম্যান: মো. আতিকুর রহমান
ভাইস-চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টর: তানভীর আমের হোসেন (নুমান)
প্রধান সম্পাদক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক: মো. রফিকুল ইসলাম
রিপোর্টিং ও প্রধান কার্যালয়: নাহার ম্যানশন (সি-৯), ১৫০ মতিঝিল সি/এ, ঢাকা – ১০০০। বাংলাদেশ।
ফোন: +88 09611-378696 , ইমেইল: [email protected]
© ২০২৪ ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত