কেউ আর গ্রামে থাকতে চায় না! কারণ গ্রাম দেখতে সুন্দর কিন্তু থাকতে খারাপ। হেতু- মানুষ খারাপ। টক্সিক, আরও কি কি জানি ইংরেজিতে বলে! কথা সত্য, আমিও মানি! অনেক বউও তাদের স্বামীদের সেই পোষ্ট পড়ার জন্য দিছে। আমিও চতুর্থ পক্ষ থেকে পেয়েছি! পড়েছি এবং চিনেছি! সেটাই হরদম শেয়ার হচ্ছে। যারা শেয়ার করছে তাদের মধ্যে যাদেরকে চিনি তারা এই ক’দিন হলো গ্রাম থেকে শহরে ভাড়া বাসায় বাসের মর্যাদা অর্জন করেছে!
আচ্ছা, মর্যাদা না বলে মুরোদ বললে কেমন হয়? তাদের সন্তানেরা পৃথিবী বলতে দুই কক্ষের মত বিশাল আকৃতির বাসাকেই বোঝে! এখানে দেহ বাড়তে বাড়তে তাদের মন আকাশের মত প্রশস্ত হবে! ছাদ পর্যন্ত উদার হবে। শহরের আধুনিক বাসার ছাদ তো ছনের ছাউনির মত নরম নয়। তবে কি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নাদের আলীর মত মাথা ছাদ ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করতে পারবে? কী-সব ভাবছি? শহরের মানুষের কাছে এসব হাস্যকর!
আসি আসল কথায়! সেই মুরোদের অন্তরালের গল্পে- কেউ কেউ দুর্নীতি, ঘুষ কিংবা নানাবিধ অন্যায় করে শতাংশ চারেক জমি কিনে কোনমতে আশ্রয় বানিয়েছে! সবাই? উহু, অনেকেই। ভোটার তালিকায় ঠিকানা এখনো গ্রামেই আছে। সেটা পরিবর্তন করতে পারেনি! মজাফজা বাদ! গ্রামে বাস না করার সমাধান কী? গ্রামে যারা বাস করে তাদের ধ্বংস করার জন্য ভূমিকম্পও তো যথেষ্ট নয়! সুনামি হলেও তো দুই পাঁচটা প্রাণ বেঁচে যাবে! কী করি উপায়?
গ্রামে যারা আছে তাদের সবাইকে শহরে নিয়ে আসতে হবে? তাহলে তো শহরও নষ্ট হয়ে যাবে! গ্রামে আমার মা-বাবা বাস করে, সেই শেকড়ের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে? সেটা না হয় করলাম কিন্তু তাদের অভিশাপ শহরের পথ চেনে না? বাপু, আমি ভীতু, পারবো না। আমার দাদার কবরের কাছে বছরে একটা দিন আমাকে দাঁড়াতে হবে। তাদের ঘাম জড়ানো অর্থে কেনা সম্পদ ভোগ করে বড় হয়েছি। আমার সন্তানেরা শহরে থাক। আমার জন্য গ্রাম রেখো। মানুষ হিসেবে না-হয় আমাকে টক্সিক জেনো!
গ্রামের মানুষ পচে গেছে! কথা সত্য! তবে শহরের মানুষ থেকে পচা গন্ধ বেশি কেন পাই? নাকে সমস্যা হয়তো! গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকা স্বার্থপর আর মেরুদণ্ডহীনরা সম্মানের মনে করতে পারে। ওই বাবুই পাখি বলদ! “কাঁচা হোক তবু ভাই নিজের বাসা!” যেখানে পারিবারিক কোন ফিলিংস নাই সেখানে যৌবন রঙ্গরসে ভালো কাটতে পারে কিন্তু বুড়ো হলে, অক্ষম হলে সন্তান লাথি দিয়ে রাস্তায় বের করে দিবে! বৃদ্ধাশ্রমের জায়গা কি শহরে হবে নাকি গ্রামে বাউন্ডারি দিয়ে রাখবো? বৃদ্ধাশ্রমের ইংরেজি ওল্ড’ হোম লিখলে সেটা কী সহীহ হবে?
কোন সূচকেই গ্রামে বসবাসকে এগিয়ে রাখার সুযোগ নাই! অন্ধের কাছে সূচক কীসের! গ্রামের মানুষ মূর্খ। তারা সূচক বোঝে না। ঝগড়া করে আবার বুকে টেনে নেয়। স্বার্থের কাছে সহানুভূতি, সহমর্মিতার প্রশ্ন ও আবেদন অবান্তর! গ্রামে অনেক সমস্যা আছে- ঘটনা সত্য কিন্তু কাদামাটির সাথে বিচ্ছিন্নতার ভাবনা মানুষকে কী পরিমাণ পশুতে পরিণত করতে পারে তা দাম্পত্যে ভাঙন, পিতৃত্বের অসম্মান আর ভ্রাতৃত্বের অমর্যাদা দেখে আন্দাজ করতে না পারলে কিছু বলার নাই! শহরের ফ্ল্যাটে ফ্লাটে আলাদা দুনিয়ায় অলিগলি ভরে উঠুক।
গ্রামের মানুষগুলোর নামে যে সকল অভিযোগ তুলে গ্রামে না থাকার পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়েছে সে যুক্তি মূর্খের! গ্রামে বাস করা গণ্ডমূর্খের মত মূর্খের না! ভোগবাদীতা মানুষকে এমন পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে যে- গ্রামের মানুষ কেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বোঝে না সেটা তাদের মস্ত অপরাধ! পরচর্চার অসুখ গ্রামে বিদ্যমান বটে, ভিলেজ পলিটিক্সের অসাধুতা এখানে আছে বটে তবে কারো বিপদে সবাই এগিয়ে আসা, এক উঠোনে গল্পে মজা কিংবা আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আসা-যাওয়ার যে বন্ধন সেটায় মনুষ্যত্বের উপস্থিতির সাক্ষ্য দেয়। আপনার গ্রাম ভালো লাগে না তো একবারও যাইয়েন না কিন্তু শেকড়কে অস্বীকার করার দরকারও তো নাই! তাও যদি যৌক্তিকভাবে হতো! আহা!
আমার গ্রাম ও শহর- দু’টোই লাগবে। দু’টোই আমার। দু’জায়গাতে বিস্তর সুবিধা এবং টুকিটাকি অসুবিধা আছে। তাই বলে আমার বাপ-দাদার ভিটা, আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠার জায়গাকে আমি অস্বীকার করতে পারি না। আমার সন্তানকে গ্রাম ভালোবাসাতে ব্যর্থ হতে পারি কিন্তু অনুরোধ করে যাবো যাতে আমার কবর গ্রামেই হয়। নির্বোধের মরদেহ শহরে ভূগর্ভস্থ করে দামি জমির অপব্যয় ঠিক হবে না। আমি আমার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে সামনে এগুতে চাই না। আপনি চান চলে যান। মিথ্যা দোষারোপ না করলেই হয়। এখনো গ্রামে মন্দের চেয়ে ভালো কাজের সংখ্যা বেশি। ভালো মানুষের যদি হিসাব কষেণ তাতেও শহর থেকে গ্রাম পিছিয়ে থাকবে না।
ভয় কি গ্রামের মানুষকে? নাকি রাসেল’স ভাইপারের কথা শুনেছেন! রাসেল’স ভাইপারকে দোষারোপ করে গ্রাম ছাড়লে পাপ কম হবে। তবে সাপ আপনাকে গ্রামে না পেলে শহরের দিকেও যেতে পারে! আপনার মনের মধ্যে পোষণ-কৃত বিষাক্ত সাপের সাথে বিষধর সাপ সাক্ষাৎ করতে গেলো! ব্যাপারখানা কেমন হবে? যত্নআত্তি কইরেন!
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]
প্রধান বার্তা সম্পাদক ও চেয়ারম্যান: মো. আতিকুর রহমান
ভাইস-চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টর: তানভীর আমের হোসেন (নুমান)
প্রধান সম্পাদক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক: মো. রফিকুল ইসলাম
রিপোর্টিং ও প্রধান কার্যালয়: নাহার ম্যানশন (সি-৯), ১৫০ মতিঝিল সি/এ, ঢাকা – ১০০০। বাংলাদেশ।
ফোন: +88 09611-378696 , ইমেইল: [email protected]
© ২০২৪ ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত