বিধান দাস, নিজস্ব প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: উৎপাদনের দিক দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ গম উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত ঠাকুরগাঁও। সরকারও ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে গম কেনে সর্বাধিক। উত্তরের ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি এবং আবহাওয়া গম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। তাই ঠাকুরগাঁও জেলায় গমের আবাদ বরাবরই ভালো হয়। তবে গম চাষ লাভজনক না হওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা, ঝুঁকছেন ভুট্টা চাষে। গমের থেকে ভুট্টার দাম বেশি পাওয়ায় ঠাকুরগাঁও জেলায় গত পাঁচ বছরে ১৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে কমেছে গমের আবাদ। কৃষকদের অভিযোগ, ক্ষেত প্রস্তুত থেকে শুরু করে গম রোপণ, সার, কীটনাশক, সেচ এবং গম কাটা মারার খরচ বেড়েছে। এদিকে বাজারে ন্যায্য মূল্য পাওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে কম খরচে উৎপাদন বেশি হওয়ায় গমের পরিবর্তে দিন দিন আবাদ বেড়েছে ভুট্টার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের পরিসংখ্যান মতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ঠাকুরগাঁও জেলায় ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন হয়েছে ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে ঠাকুরগাঁও জেলায় ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১ লক্ষ ৯৪ হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন গম । ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৭২১ মেট্রিক টন গম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঠাকুরগাঁও জেলায় ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন হয়েছে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৭৯ মেট্রিক টন এবং চলতি মৌসুমে তথা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঠাকুরগাঁও জেলায় ৩১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন হয়েছে ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৬৬৬ মেট্রিক টন। যাতে দেখা যায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ কমেছে ৮৪ হাজার ১৯ মেট্রিক টন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কৃষক আশরাফুল আলম বলেন, কয়েক বছর আগে গম চাষ করতাম। গমে লাভ কম হওয়ায় এখন ভুট্টা আবাদ করি। একইভাবে ঐ এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম, নুর আলম, দিলীপ কুমাররাও গম ছেড়ে ঝুঁকেছেন ভুট্টা চাষে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং গ্রামের কৃষক শাকিল হোসেন বলেন, গমের চেয়ে ভুট্টা ও আলুর উৎপাদন বেশি হয়। দামও ভালো পাওয়া যায়। এক বিঘা জমিতে গম আবাদ করতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর উৎপাদিত গম বিক্রি করে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। অন্যদিকে এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করে পাওয়া যায় ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। যেটি অনেক লাভজনক। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের কৃষক মোমিনুল হক জানান, গমের আবাদ করি ফলনও ভালো হয় কিন্তু দাম পাই না। সরকার যদি ন্যায্য দাম দেয় তাহলে অনেক কৃষকই আবারো গম চাষে আগ্রহী হবে। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আলমগীর কবির বলেন, রবি মৌসুমে অন্যান্য ফসল বিশেষ করে ভুট্টা, শাকসবজি ও ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাওয়া এবং এগুলোর দাম ভালো পাওয়ার কারণে কৃষকরা এসব ফসলের দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে দিন দিন ঠাকুরগাঁও জেলায় গমের আবাদ কমে আসছে। তারপরও ঠাকুরগাঁও জেলায় যে গমের আবাদ হয়েছে তা সারা বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। আমরা কৃষি বিভাগ গম চাষীদের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত উচ্চ ফলনশীল গমের জাত এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে আসছি।গমের আবাদ বৃদ্ধির জন্য যুগোপযোগী হাইব্রিড জাত সহজলভ্য এবং মূল্য ভালো পেলে আশা করা হচ্ছে গমের আবাদ আবারো বৃদ্ধি পাবে এ জেলায়।
প্রধান বার্তা সম্পাদক ও চেয়ারম্যান: মো. আতিকুর রহমান
ভাইস-চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টর: তানভীর আমের হোসেন (নুমান)
প্রধান সম্পাদক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক: মো. রফিকুল ইসলাম
রিপোর্টিং ও প্রধান কার্যালয়: নাহার ম্যানশন (সি-৯), ১৫০ মতিঝিল সি/এ, ঢাকা – ১০০০। বাংলাদেশ।
ফোন: +88 09611-378696 , ইমেইল: [email protected]
© ২০২৪ ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত