ময়মনসিংহ ব্যুরো, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: প্রায় ৫ বছর পর আগামী ১১ মার্চ ময়মনসিংহে আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষা ও সংস্কৃতির নগরী ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে উচ্ছ্বাসের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বিভাগ জুড়ে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা ময়মনসিংহের চলমান উন্নয়ন ধারায় আরও নতুন কিছু সহযোজন ঘোষণা হতে পারে প্রধানমন্ত্রী এই সফরে। ময়মনসিংহ নগরীর ১৪ বছরের উন্নয়ন ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি ময়মনসিংহ-বাসীকে একগুচ্ছ প্রকল্প উপহার দিবেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা চলছে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে। আগামী ১১ মার্চ শনিবার বিকেলে তিনি ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় জনসভায় ভাষণ দিবেন। এর আগে ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর একই মাঠে সমাবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪ বছর ২ মাস পর এবার বদলে যাওয়া ময়মনসিংহ নগরীকে দেখবেন দেশরত্ন œ শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ময়মনসিংহ ঘুরে গেছেন। তারা ময়মনসিংহ নগরী, ময়মনসিংহ জেলা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের উন্নয়নের চিত্র ও সমস্যার তালিকা নিয়ে ঢাকায় ফিরেছেন। ময়মনসিংহ নগরীর ১৪ বছরের উন্নয়নের তথ্য পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুশি ও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উইংয়ের এক কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে। সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহের জনসভা থেকে নগরবাসীকে একগুচ্ছ প্রকল্প উপহার দেওয়ার পাশাপাশি ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, শেরপুর ও জামালপুর জেলা-বাসীকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প উপহার দেবেন। ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই সফর দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আরও উজ্জীবিত হবে। দলের সভানেত্রীর আগমনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই পাল্টে গেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির দৃশ্যপট। চাঙা হয়েছে দলটির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোও। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে ইতোমধ্যে একাধিক প্রস্তুতি সভা করেছে কেন্দ্রীয়, জেলা, মহানগর ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতারা। পাশাপাশি প্রচার-প্রচারণার চালাচ্ছেন নেতৃবৃন্দ। তাদের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর এই সমাবেশে দশ লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটবে। দীর্ঘ প্রায় পাঁচবছর পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ময়মনসিংহ আগমনকে ঘিরে যেন বইছে অনেকটাই উৎসবের আমেজ। রং বেরংয়ের ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে ছেয়ে গেছে নগরীর প্রধান সড়কগুলো। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে ময়মনসিংহ। নাগরিক সংগঠনগুলো জানাচ্ছে বিভিন্ন দাবী নামা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু নিজে এসব বিষয় তদারকি করছেন। প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের সড়কগুলো অবৈধ দখল মুক্ত করা হয়েছে। সড়কপথের পাশের দেয়াল গুলোতে রং এর কাজ, ফুটপাতে রং, ভাঙা সড়ক সংস্কার, পথের ধুলা বালি সরানোর কাজও চলছে জোরেশোরে। সৌন্দর্য বর্ধন করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থল সার্কিট হাউস ও আশেপাশের এলাকা। সার্বিকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে প্রশাসনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে, ১১ মার্চকে ঘিরে নাগরিক সংগঠনগুলো তাদের দাবী দাওয়া পেশ করেছে। জন-উদ্যোগ নামে সংগঠন প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১৮ দফা এবং নাগরিক আন্দোলন নামে সংগঠন ২৩দফা দাবী নামা পেশ করেছে। জন উদ্যোগের আহবায়ক এড. নজরুল ইসলাম চুন্ন বলেন-স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা ১৮ দফা দাবী জানিয়েছেন। নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরল আমীন কালাম বলেন, নাগরিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন সার্ভিসের সংখ্যা বৃদ্ধি, শিশু হাসপাতালের নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু, বিভাগীয় নগরী স্থাপন, এসকে হাসপাতালের উন্নয়ন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, ময়মনসিংহ-সিলেট ট্রেন সার্ভিস চালু ইত্যাদি বিষয়ে দাবী জানানো হয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে কর্মীদের মাঝে ব্যাপক প্রাণসঞ্চার হয়েছে। নেতাকর্মীরা জনসভা সফল করতে মাঠে কাজ করছে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বাদ্য বাজনা সহকারে সমাবেশ যোগ দিবেন। স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ হবে ১১ মার্চ। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নগরীকে নতুন ভাবে সাজানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ময়মনসিংহ নগরী। এই সমাবেশ বিভাগের নেতাকর্মীদের এক মিলন-মেলায় পরিণত হবে।নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে উদগ্রীব হয়ে আছে। বিভাগ-বাসীর জন্য উন্নয়নের বার্তার পাশাপাশি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও বিশেষ বার্তা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে সোমবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরীর জেলা জাসদ কার্যালয়ে বিভাগীয় মহা-সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে ১৪ দলের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জয় নিশ্চিত করতে হলে অতীতের ন্যায় ১৪ দলের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা অপরিহার্য বলে মনে করছেন নেতৃবৃন্দ। এ সময় নেতৃবৃন্দ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষের শক্তিকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হলে ১৪ দলের ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী ভূমিকা থাকতে হবে। এজন্য চাওয়া পাওয়ার কোন হিসেব না করে দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সবাইকে সচেষ্ট থেকে কাজ করতে হবে। আর এ কারণেই আগামী ১১ মার্চ ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রীর বিভাগীয় মহা-সমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে হবে। এ লক্ষ্যে ১৪ দলের সকল নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ জেলা জাসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন। এ সময় জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাদিক হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহম্মেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিতুর রহমান শান্ত, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সুজিত বর্মণ, মহানগর জাসদের সভাপতি সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু, জেলা জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী সফরকে ঘিরে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো ময়মনসিংহ নগরী। টহল এবং তল্লাশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মেদ ভুঞা বলেন, নগরীর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে কয়েক ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাদা পোশাকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জনসভার দিন শহরজুড়ে তিন হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে। উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ ময়মনসিংহে এসেছিলেন। প্রায় ৫ বছর পর আগামী ১১ মার্চ আবারও তিনি ময়মনসিংহে আসছেন।
প্রধান বার্তা সম্পাদক ও চেয়ারম্যান: মো. আতিকুর রহমান
ভাইস-চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টর: তানভীর আমের হোসেন (নুমান)
প্রধান সম্পাদক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক: মো. রফিকুল ইসলাম
রিপোর্টিং ও প্রধান কার্যালয়: নাহার ম্যানশন (সি-৯), ১৫০ মতিঝিল সি/এ, ঢাকা – ১০০০। বাংলাদেশ।
ফোন: +88 09611-378696 , ইমেইল: [email protected]
© ২০২৪ ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত