কতবার যে বড় দুঃখে হেসে দিতে হয়, অপবাদ কিংবা মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হতেই হাসি বেরিয়ে আসে, ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে হাসতে হাসতে পিছু হটতে হয়-এখানেও হাসি আছে কিন্তু খুশি আদৌ থাকে? রোজকার তালিকায় লোক দেখাতে হাসতে হয়, দুঃখ লুকাতে লুকাতে রাত হয়! বড্ড ভালো থাকার অভিনয়ে হাসিমুখে মিশতে হয় অপ্রিয়ের বাজারে! ভালো থাকার মিথ্যা অভিনয়ে বসাতে হয় হাটবার! মনের দহন আড়াল করে, ঝড় লুকিয়ে কিংবা দুঃখ ভোলা বিজ্ঞাপনে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হয় দক্ষ কারসাজিতে! কখনো কখনো মনের দুঃখেও বিশাল মুখে হাসতে হয়!
আবার কতবার যে সুখে চোখে পানি আসে। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে হয়, এতো সুখ আমায় দিলা খোদা? নিজের অর্জনে, সন্তান-স্বজনের প্রাপ্তিতে, ভালো মানুষের সাথে বন্ধুত্বের কৃতজ্ঞতা চোখের কোণে প্রশান্তির আশু চিকচিক করে ওঠে। খুশি আর হাসি-সম সূত্রে গাঁথা হলেও সব হাসির উৎস সুখের আবেশে নয়! কখনো কখনো যন্ত্রণাও হাসিতে হালকা করতে হয়। ভালোবাসার বিরাট প্রাপ্তিতেও মাঝে মাঝে দুচোখ হয়ে ঝর্ণা নামে!
আমাদের ভালো থাকার অভিনয় যতখানি নিরেট ততখানি ভালো কি আদৌ আছি? কত দুঃখ বুকে চাপা পরে, হতাশার দীর্ঘশ্বাসে ছায়া পড়ে সময়ের ঘাড়ে, তারপরে আমরা প্রদর্শন করি সুখের ব্যঞ্জন! শোনাই খোশ সংগীত! লৌকিক নাচে কাঁপিয়ে দেই মাটি! খাঁটি কোথায়? হয়তো শেষ খাটিয়ার যাত্রা শেষে!
তুলনা করে ঠকিয়ে দেই প্রকৃতপক্ষের সুখীজনকে! অন্যের সাথে তুলনা তো তারাই বেশি করে যারা নিজের অবস্থানে ভালো নাই! সন্তুষ্টির যায়গাটি নড়বড়ে হলে সে দরকারে-অদরকারে অসুখের সাগরে সাঁতরায়! ছলনার আত্মতৃপ্তি আসে,আর বিকারের বাতাসে ভাসে! বাহ্যিকতায় ঝুলিয়ে রাখে কপটতা আর ভুলিয়ে দেয় সোজা পথ! অসত্যের স্পর্শ বুলিয়ে বাগাতে চায় মিথ্যা আশ্বাস!
বাহির দেখে, বর্ণ দেখে, বুলি শুনে কাউকে সুখের ভেলায় তুলে রাখা যায় না! উচিত কি-না জানি না! কার মধ্যে কি আছে, কোথায় সে ভাঙছে কিংবা মনের মধ্যে কি চলছে তা মিলেমিশে বুঝতে হয়! খুঁজতে হয় দরদ নিয়ে। বিশ্বাস রাখতে হয়, ভরসা করতে হয় আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে। আমাদের নিত্যকার হাসিতে বেজায় কৃত্রিমতার রসদ থাকে! মিথ্যামিথ্যি ভালো আছি দেখিয়ে আমরা অন্যের সুখকে বিষ-বাষ্পীয় সংক্রমণে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করি! ভালোর চর্চা যতটা করি তার অধিক করি হিংসা-বিদ্বেষের চাষ! অর্থপূর্ণ হাসিতে কাঁপিয়ে দিতে চাই অপরের ভালো থাকার আবাস!
একজনমের সব কষ্ট সাথে নিয়েও হাসতে হয়। তারপরেও আরও কিছুদিন বাঁচার স্বপ্ন দেখতে হয়। আমরা সব লুকিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিংবা অপরের মুখোমুখি হয়ে হাসির রেখা টেনে বলি-ভালো আছি। সব ভালো আছির অর্থ খুশি থাকা নয়। একসময় নিজের কাছেই নিজে ধরা পড়ে যাই!
কখনো কখনো জীবনের রেসে পরাজিত হয়ে হাসিকে অবহেলা করতেও হাসতে হয়। তবুও পথে শেষে পৌঁছাতে পোঁছাতে সান্ত্বনার চেষ্টায় একটু একটু সুখের তালাশ করি! আফসোসে বলি, যদি আরেকটু ভালো থাকা যেতো! হায়! যদি কেউ আর একটু ভালো রাখতো। সেই আশায় বাকি জীবন হেসেই যাবো!-হয়তো জয়ের হাসি নয়তো পরাজয়ের! খুশি হওয়ার খায়েশ একদিন মিটবে! সেদিন সুখেই হাসবো।-হয়তো আমাকেই ভালোবাসবো!
রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।
[email protected]
www.bnc24.com
©2013-2024 Copyright Broadcasting News Corporation All Rights reserved.