আড়ালে আপনাকে নিয়ে সমালোচনায় যারা ব্যস্ত, আর সেই নিন্দার আসরে যারা হা-হু করে মশলা ঢেলে রসদ যোগায় তাদেরকে ইগনোর করুণ। জাস্ট ঝেড়ে ফেলুন, সে অংশ মন থেকে মুছে নিন এবং সামনে এগিয়ে যান। কারো অনুপস্থিতিতে তার নিন্দা করা কা-পুরুষোচিত কাজগুলোর একটি।
যাদের সাহস আছে, যারা বন্ধু তারা আপনাকে একান্তে ডেকে দোষ ধরিয়ে দেয়, ভুল উপলব্ধির কিংবা শোধরানোর পরামর্শ দেবে। অথচ যারা অন্যের নিন্দা করে, বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা দোষ বলে তারা একবারও ভাবে না যে, তাদের নিয়েও কোথাও নিন্দার মাহফিল হতে পারে! পরের যে কথা শুনে আপনার খারাপ লাগে সে কথা অন্য কারো সম্পর্কে তুললে তারও মন খারাপ করে!
ভালো মানুষের চেয়ে খারাপ মানুষদের থেকে বেশি শেখা যায়। ভালো লোকের থেকে কেবল ভালোটুকু শেখা যায় কিন্তু মন্দ মানুষের থেকে জানা যায় আমার কি কি ত্যাগ করা, এড়িয়ে যাওয়া উচিত। কেননা ভালোর সীমা আছে কিন্তু মন্দ অসীম। খারাপ মানুষদের কু-অভ্যাসগুলো, গন্ধমাদন আচরণগুলো নিজের থেকে দূরে সরাতে পারলে তবেই জীবন সুবাস ছড়াবে।
কাউকে নিয়ে তার অনুপস্থিতে চর্চা করা, তার যে দোষ নাই সেগুলো রসিয় রসিয়ে বর্ণনা করা অকর্মণ্যদের রুটিন। অথচ পেছনে যদি কিছু করতেই হয় তবে সেটা প্রশংসা হওয়া উচিত। সত্য-মিথ্যা যাই হোক তাকে আড়ালে রেখে সেগুলো নিয়ে রহস্য তৈরি করা, পালক যুক্ত করা, হেয় করার মানসিকতায় উত্থাপন করা ভালো মানুষদের আচরণ নয়।
সহকর্মীকে নিয়ে পরচর্চায় তার অবস্থান কতোখানি নড়বড়ে করে সেটা বিতর্কের প্রশ্ন রাখে কিন্তু আপনাকে যে কতোখানি নিচুতে নামায় তা আন্দাজও করতে পারছেন না! যে দলের সাথে একজনকে নিয়ে নিন্দার আসর জমে সেই দলের কাছে আপনার অনুপস্থিতে আপনাকে নিয়ে হাস্যরস সরব হয়! কাজেই আপনি অন্যকে নিয়ে আসর জমানো বাদ দিলেই কেবল আপনার সমালোচনা বাদ যাবে-সে আশা করতে পারেন!
পেছনে কারো সম্পর্কে কিছু বলে তাকে দমানো যায়? যদি ভুল থেকেও থাকে তবে কাউকে শোধরানো যায়? ভুল বলতে ধরিয়ে দিতে ইচ্ছা হলে যার ভুল তাকেই বলা উচিত, তার নজরে আনা উচিত। এতে সে সাময়িকের জন্য মন খারাপ করতে পারে কিন্তু যদি সে তার ভুল বুঝতে পারে তবে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ হবে, আপনার সামনে বিনীত পাবেন। আর কিছু না হোক অন্তত ধন্যবাদ পাবেন। যদি কিছুই না পান তবে নিজে নিজে আত্মতৃপ্ত হতে পারবেন। অন্তত আপনার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন।
ঝি’কে মেরে বউকে বোঝানোর যে চল সেটা অচল করা দরকার। সদলবলে অন্তরালের আলাপনে আসামিকে অনুপস্থিত রেখে হাসাহাসি করলে পাপের ভাগ ভারী হতে পারে, ফরিয়াদি খুশি হতে পারে কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন ঘটে না। বরং যাকে নিয়ে সব আয়োজন সে আঁধারেই থেকে যায়! পাপ কেটে তার পুণ্য শূন্য থেকে পূর্ণ হয়!
কারো দোষ জনসমক্ষে বলার আগে যদি ব্যক্তি টু ব্যক্তি বলার সুযোগ থাকে, তাকে সাবধান করা যায়, শোধরানোর পথ দেখানো হয় তবে তার চেয়ে উত্তম আর কিছুতে নাই। একজন বন্ধু হিসেবে, সহপাঠী-সহকর্মী এবং সহমর্মী হিসেবে এটুকু দাবি সবার প্রতি সবার থাকে! আমাকে অন্ধকারে রেখে আমাকে শিরোনাম করে আসর জমালে তাতে আমার কোন উপকার হয় না। যদি সে বার্তা আমার পর্যন্ত না পৌঁছে তবে সমালোচকদেরও পক্ষেও কোন ফায়দা আসে না। আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার সবার থাকে! যুক্তি দু’ধারী তলোয়ারের ন্যায় সামনে-পিছনে সমানে কাটে!
পরচর্চার পরিণাম ভয়াবহ। নিজেকে অপরাধী হিসেবে দাঁড় করায়। মানসিকভাবে অসুস্থ করে এবং পরের ভালো সহ্য করার শক্তি লোপ করে। কারো অন্তরালে তার কোন নেতিবাচক দিক নিয়ে আসর বসালে সে ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। অন্যদিকে সমালোচনার যে ইস্যু তা যদি টার্গেটের সাথে সংশ্লিষ্ট না হয়ে তার বিরুদ্ধে অপবাদ হয় তবে সেটা গিবত। এর পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।
কারো সম্পর্কে সামনাসামনি বলার সৎ সাহস হোক। কা-পুরুষোচিত আচরণ, কারো বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচারের প্রবণতা থেকে মুক্ত থাকার মানসিকতা অর্জনের মধ্যেই একজীবনের সার্থকতা। কাউকে যতটুকু দেবো সেটুকু কালের আবর্তে ফেরত আসবে। ভালো-কিছু বিনিয়োগ করলে ভালো ফলাফল আসবে আর সৎপথ বিচ্যুত হলে আঁধার-কালো গ্রাস করবে। আমাদের মুক্তি অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
রাজু আহমেদ।
কলাম লেখক।
[email protected]
www.bnc24.com
©2013-2024 Copyright Broadcasting News Corporation All Rights reserved.