ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: মঙ্গলবার (০৪ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) সকাল ১১টায় জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়ন এর উদ্যোগে তোপখানা রোডস্থ হোটেল রয়েল প্যালেসে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুর্শিদা আখতার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মমতাজ বেগম, প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তি যোদ্ধা আবুল হোসাইন, উপদেষ্টা মোস্তফা আলমগীর রতন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেত্রী আমেনা বেগম, মিনারা বেগম, কাজী রেনু প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত, বঞ্চিত শ্রমশক্তির নাম গৃহ-শ্রমিক। যাদের শ্রমের কোন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নাই। অথচ এই শ্রমশক্তি শত শত বছর ধরে সমাজ সংসারে আমাদের সঙ্গে একত্রে বসবাস করে আসছেন। যাদের শ্রম ছাড়া নাগরিক জীবন অচল। এই শ্রমশক্তির ৯৫ ভাগই হচ্ছে নারী ও শিশু। সরকারি কোন পরিসংখ্যান না থকলেও সারাদেশে এর পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ। বাংলাদেশের শ্রমখাতে সবচেয়ে বেশী নারী ও শিশু এই খাতে কর্মরত। যারা সূর্যোদয় থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে নাগরিক সেবা দিয়ে চলেছেন। যাদের শ্রমের অর্থমূল্য পরিমাণ (৫০০০০০০০০০০০) প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। অথচ এই আয় বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে গণ্য করা হয় না। এই শ্রমিকদের জীবন দক্ষতা ও পেশাগত উন্নয়ন করতে পারলে এই আয়ের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে। এর জন্য রাষ্ট্রীয় আইন নীতিমালা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার বিকল্প নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০১৫ সালে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করলেও বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ নাই। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ ধারা-১ এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ বাংলাদেশের সকল শ্রমজীবি মানুষের জন্য ধারায় (ণ) বলা হয়েছে গৃহ-শ্রমিকদের জন্য এই আইন প্রযোজ্য নয়। এর চেয়ে নিষ্ঠুর রসিকতা কি হতে পারে। আমরা যারা গৃহ-শ্রমিকদের সংগঠিত করি তারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি, বাংলাদেশ শ্রম আইনের ধার-১ (ণ) বাতিল করে গৃহ শ্রমিকদেরকে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অপরদিকে ২০১১ সালে আইএলও ‘গৃহ-শ্রমিকের জন্য শোভন কাজ’ শীর্ষক কনভেনশন-১৮৯ গ্রহণ করলেও আজঅব্ধি সরকার কনভেনশনটি অনুসমর্থন করেনি। আইনি সুরক্ষা না থাকার কারণে প্রতিবছর শতাধিক গৃহ-শ্রমিক অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের এই মৃত্যু-দায় সরকার ও রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। সম্প্রতি সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশে বেশ কয়েকজন শিশু গৃহ-শ্রমিক কর্মস্থলে শারীরিক নিপীড়নের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে আদিবাসী শিশু গৃহ-শ্রমিক প্রীতি উরাও অন্যতম। আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে নিহত শিশু শ্রমিক পরিবার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত। আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করা হবে। আমরা আরো জানতে পেরেছি উক্ত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ে বৃদ্ধি করা হবে কিন্তু এই সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মধ্যে গৃহ-শ্রমিকরা অন্তর্ভুক্ত হবেন না। কারণ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি মূলত গ্রামীণ দরিদ্রদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। কিন্তু গৃহ-শ্রমিকদের জন্ম গ্রামে হলেও কর্ম শহরে। সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে গৃহ-শ্রমিকরা অন্তর্ভুক্ত হবে না বলে আমাদের আশংকা। তাই আমরা দাবি করছি বাজেটে গৃহ-শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা-খাতে থোক বরাদ্দ এবং তাদের নিবন্ধন ও নিরাপত্তার জন্য অবিলম্বে গৃহ-শ্রমিকদেরকে শ্রম-আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে দেয় বিগত করোনা মহামারিতে গৃহ-শ্রমিকরা কি নিদারুণ দুঃখ কষ্টের মধ্যে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেছে। আমরা সার্বজনীন পেনশন স্কিমে গৃহ-শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা বিধান চালু করতে হবে। আমরা অবিলম্বে গৃহ-শ্রমিকের জন্য প্রণীত আইএলও কনভেনশন ১৮৯ দ্রুত অনুসমর্থন এবং শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তির।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।