All Menu

ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কের শেকড় অনেক গভীরে

কলকাতা, ভারত, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গত ১৫ বছরে আমরা সেটা দেখতে পাই। ভারত- বাংলাদেশের সম্পর্কের শেকড় অনেক গভীরে। দুই বাংলার এক আত্মা- ধমনীতে প্রবাহিত একই রক্ত, একই ভাষা-সংস্কৃতি, ভাতৃত্বের বন্ধনে একাত্ম আমরা। সবদিক দিয়ে এখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক খুবই ভালো সাংস্কৃতিক বন্ধনটা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ও ভারতের জনগণ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ভালোলাগা, সব দিক দিয়ে অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে। আমরা যে মাতৃভাষায় কথা বলি, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরার- সেটাতো আরো গভীরে। সেই সম্পর্কটা সূচনা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই অর্জিত হয় মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি এবং সে ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে অর্জিত হয় বাঙালির চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ হলো। বঙ্গবন্ধুর ওপর পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’ করেছেন। এর ১৪ খন্ড বাংলাদেশে বেরিয়ে গেছে। সেখানে দেখতে পাচ্ছি ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভেঙে দু’টি রাষ্ট্র হলো। এর মধ্যে তদানীন্তন তরুণ শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর পাকিস্তানের নজরদারি কী রকম ছিল সেটা ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’ এ দেখতে পাই। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) কলকাতার দ্য বেঙ্গল ক্লাবে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘ আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও বাঙালির আত্মত্যাগ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘের সভাপতি শিশির বাজোরিয়া এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কলকাতাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের উপ হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৭ সালের ২৭ নভেম্বর করাচিতে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকায় এ খবর পৌঁছামাত্রই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খাজা নাজিমুদ্দিনের বাসভবনের সামনে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করে। এর কিছুদিন পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সাংগঠনিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ঢাকায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক আন্দোলন করেন। বারবার গ্রেফতার হন, জেলখানায় যান। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করে- বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়, প্রথম ২১শে ফেব্রুয়ারি-কে শহিদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, এই দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে এবং শহিদ মিনার তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। এ স্বাধীনতা অর্জনে ভারতবর্ষ তথা ভারতের জনগণের অবদান সবসময় স্মরণ করি, মর্যাদার সাথে দেখি। কারণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের জন্য ভারতের প্রায় ১২ হাজার সেনা সদস্য শহীদ হয়েছেন। এটা আমরা কখনো ভুলে যাই না, শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরার মানুষ বাংলাদেশের এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। আমরা ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। আমরা বুঝতে পারছি এক কোটির অধিক লোককে আশ্রয় দেয়া, এর ব্যবস্থাপনা কত কঠিন। খাদ্য, শিক্ষা চিকিৎসাসহ আরো কত কিছু। সেরকম একটি বিশাল দায়িত্ব শুধু ভারত নেয়নি এবং আমাদের বিজয় অর্জনের জন্য চারিদিক দিয়ে সমর্থন দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগারে বন্দী ছিলেন। তাকে মুক্ত করার জন্য ভারত সরকারের ভূমিকা অসামান্য। ভারতের সে ভূমিকা না থাকলে কি হতো আমরা জানি না। তাদের ভূমিকাকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সে জিনিসগুলো উপলব্ধি করেন এবং ধারন করেন বলেই ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কটা অনন্য উচ্চতা গেছে। ৭৫এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে বাংলাদেশে ছায়া নেমে এসেছিল। বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কটা তিক্ততায় পরিণত করেছিল। এটা আমাদের জন্য ভালো হয়নি। এত তিক্ততায় চলে গিয়েছিল যে প্রতিবেশীর সাথে সে সম্পর্কটা অবিশ্বাসের জায়গায় চলে গিয়েছিল। সীমান্ত এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদীর ঘটনাগুলো কি পরিমাণে তৎপরতা চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগুলো এখন শূন্যের কোঠায় এসেছে। “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোন সন্ত্রাসবাদের জায়গা দেয়া হবে না। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সন্ত্রাসী ততপরতা চালাতে দেয়া হবে না।” এটা প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার। এ ধরনের অঙ্গীকার তিনি শুধু করেননি , নিয়ন্ত্রণ করেছেন, দমন করেছেন এবং আজকে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত সেখানে কোন উত্তেজনা নেই। খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কিছু কিছু ঘটনা ঘটে সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমাদের ট্রেড, দৈনন্দিন জীবনে আলু পিয়াজ এর সমস্যা, ভারত সরকার সাথে সাথে এলসি ওপেন করে দিয়েছে। পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ, মুর্শিদাবাদের মায়া নৌরুট চালু করেছি। ভারতের ক্রুজ ভেসেল ‘গঙ্গাবিলাস’ ১১০০ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ হয়ে ৫২ দিনে আসামে গিয়ে যাত্রা শেষ করেছে। রামগড়, আখাউড়া, বিবির বাজার, ভোমরা, বাংলাবান্ধা স্থলপথে যোগাযোগ উন্নত হয়েছে। রেল যোগাযোগ হচ্ছে। ট্রানজিট ট্রানশিপমেন্ট পাইলট প্রকল্প ট্রআয়আল রান হয়েছে। যে কোন সময় ভারতের সাতটি রাজ্যে যাতায়াত করতে পারবে এবং সেই এলাকার জনগোষ্ঠী উঠে আসবে। এতে বুঝা যাচ্ছে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে কত মধুর। আমি আজকে কলকাতায় ভাষাগুলোকে ধরে রাখার জন্য আলোচনা করছি। ভারতের অনেক ভাষা রয়েছে। এখানে একটি সংগীত পরিবেশিত হয়েছে- মানবতার জয় হোক‌। এটা বাংলাদেশ চায় কারণ ১৯৭১ সালে এবং ৭৫এর ১৫ ই আগস্ট মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অপরাধ হয়েছে বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা মানবতার পক্ষে কাজ করছেন, পৃথিবীর শান্তির পক্ষে কাজ করছেন। ভারতবর্ষে এত বড় একটা পরাশক্তি। সেই ৪৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কেউ বলেনি ভারত আক্রমণশালী। ভারত সব সময় শান্তির পক্ষে কথা বলেছে। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সূচনা হয়েছে ভারত থেকে। সারা পৃথিবীতে শান্তি ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ভারত যেভাবে কাজ করছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ সরকার সেভাবে কাজ করছে‌। আমরা সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি‌। মেলবন্ধন গুলো আজকে হচ্ছে। এগুলো আরও হবে। পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে। বাংলাদেশে হবে। বন্ধনগুলো আরো করতে হবে। বাংলাদেশীদের চিকিৎসা সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অন এরাইভেল ভিসার বিষয়ে বাংলাদেশস্থ ভারতের হাইকমিশনার এবং কলকাতাস্থ বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার এর সাথে কথা হয়েছে। এ বিষয়টি বিশেষ করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অন এরাইভেল বিষয় খুবই প্রয়োজন। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মাতৃভাষা এবং নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকার ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেছে। বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা সংরক্ষণ ও তাদের মর্যাদা রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পৃথিবীর সকল মাতৃভাষা সংরক্ষিত থাক, নিরাপদ থাক- এটা প্রতিমন্ত্রী কামনা করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top