নরওয়ের সাথে বাংলাদেশের সরাসরি নৌযোগাযোগ স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হকোন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন রবিবার (১০নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির সোনালী প্রবেশদ্বার। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ। সরকার চট্টগ্রাম বন্দরসহ অন্যান্য সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সাথে সফলভাবে নৌবাণিজ্য পরিচালনা করে আসছে।
বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্য বিশেষ করে আরএমজি (রেডিমেড গার্মেন্টস) পণ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে নরওয়েতেও বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। নরওয়েসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্যান্য দেশসমূহ থেকে বাংলাদেশও বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী নিয়মিত আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশের আরএমজি পণ্য ইতোমধ্যে নরওয়ের বাজারে গুরুত্বের সাথে স্থান করে নিয়েছে।
বর্তমানে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহতে কার্গো পৌঁছাতে ৪০ থেকে ৪৫ দিন বা তার বেশি সময় লাগে। নরওয়েতে সরাসরি নৌযোগাযোগ স্থাপিত হলে চট্টগ্রাম থেকে নরওয়ের যেকোনো বন্দরে ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব। এতে গড়ে ১৮ থেকে ২৩ দিন কম সময় লাগবে। এতে মালমাল বহন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। তাই বাংলাদেশ ও নরওয়ের মধ্যে এ বিষয়ে একটি বিশেষ নৌ-চুক্তি স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা।
নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হকোন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন উপদেষ্টার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক, উন্নয়ন সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। নরওয়ের বিভিন্ন কোম্পানি জাহাজ শিল্পসহ অন্যান্য সেক্টরে বাংলাদেশে কাজ করতে আগ্রহী। রাষ্ট্রদূত গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেছেন বলে উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং মোংলা, পায়রাসহ অন্যান্য বন্দরও পরিদর্শনের আহ্বান জানান। উপদেষ্টা আরো বলেন, নরওয়ে সরকারের মতো বাংলাদেশ সরকারও সমুদ্রে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনতে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে বন্দরগুলোকে ডিজিটাইজেশনের আওতায় আনতে অটোমেশন প্রক্রিয়া চালু করা হচ্ছে। নরওয়ে সরকার বাংলাদেশের বন্দরগুলোকে গ্রিন পোর্টে রূপান্তরিত করতে সহযোগিতা করবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা।
নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এ সকল বিষয়ে বাংলাদেশকে নরওয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি জাহাজ চলাচলের বাতিঘর নির্মাণসহ জাহাজে বিদ্যুতায়ন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। উপদেষ্টা আসন্ন ২০২৫ সালে আইএমও নির্বাচনে বাংলাদেশের পক্ষে নরওয়ের সমর্থন প্রত্যাশা করেন।
এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আব্দুর রউফ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম, মন্ত্রণালয় এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।