ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়ারলেসের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল এবং দলের লোকেরা তা দেশের সব জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল। কিন্তু তাকে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হবার আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান যা ইপিআর এর ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম-টেলিপ্রিন্টার এবং দলের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর এই ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হয়। কোন এক মেজর একটি ড্রামের উপর দাঁড়িয়ে বাঁশিতে ফুঁক দিল আর অমনি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল! এভাবে একটি দেশ স্বাধীন হয় না। এখনো ইতিহাস বিকৃতির সেই ভাঙা রেকর্ড তারা (বিএনপি) বাজিয়েই যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (২৭ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি আগে আক্রমণকারী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হতে চাননি বিধায় অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ধাপে ধাপে সবরকম প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলেন। ২৫ মার্চ অকস্মাৎ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরীহ জনগণের ওপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) এর ওয়্যারলেস যোগে দেশব্যাপী প্রচার করা হয়। সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ চারজনের কাছে এই বার্তাটি আগেই পাঠিয়ে দেওয়া ছিল। ওয়্যারলেস ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশে যখন ইপিআর মেসেজ পাঠাচ্ছিল তখন ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজার বাগ পুলিশ লাইনের পাশাপাশি পিলখানা এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনও পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করে, গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম-টেলি প্রিন্টার ও পুলিশ স্টেশনের মাধ্যমে মাধ্যমে সারাদেশে এই বার্তাটা ছড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে সারাদেশে এটি প্রচার করে এবং সুবেদার শওকতসহ বার্তা প্রচারকারীরা ধরা পড়ে যায় এবং নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। আর এই ইতিহাসকে ৭৫ এর পরে বিকৃত করা হয়েছে। প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করে একটি ভিন্ন ইতিহাসকে সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য তৎকালীন সরকার বাংলাদেশকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে একেক জনকে এক একটি সেক্টরের দায়িত্ব দেয়। সেক্টরের যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি আহত হওয়ার পর জিয়াউর রহমান একটি সেক্টরের দায়িত্ব পান। জিয়াউর রহমান সেখানে-তো একজন বেতন-ভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বেতন-ভুক্ত কর্মচারী ছিল জিয়াউর রহমান। তাছাড়া জিয়া একজন সামান্য মেজর ছিলেন। এখান থেকে মেজর জেনারেল পর্যন্ত পদোন্নতি কিন্তু তাকে আওয়ামী লীগ সরকারই দিয়েছে। আর স্বাধীনতার আগে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার হিসেবে কার্যাদেশ পেয়ে পূর্ববঙ্গে দায়িত্ব পালন-রত ছিলেন, তার জন্ম ছিল কলকাতায়, এরপর পরিবার করাচীতে চলে যায় এবং তার লেখাপড়া ও সেনাবাহিনীতে যোগদান সবকিছুই পাকিস্তানে ছিল। কাজেই তার মনে ঐ পাকিস্তানটাই রয়ে গেছে আর তার প্রমাণও আছে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমু, দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদের মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান খান, দলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা জেলা সভাপতি বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.আবদুস সোবহান গোলাপ ও সহ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আওয়াল শামীম।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।