।।এক।। কল্পনা করুন, কোন অফিসে সেবা নিতে গেছেন। সেখানের অফিসার খুব ভাবলয়? কথা ছোঁয়ানোই যায় না টাইপের মুড? হতাশ হবেন না বরং হাসুন। একজন অযোগ্য মানুষ স্বীয় যোগ্যতার চাইতে বড় পদ পেয়েছে। এসব মানুষের চেয়ার পাছার তলে বেশিদিন টেকে না। অযোগ্য মানুষ যখন তার যোগ্যতার চেয়ে বড় দায়িত্ব পায় তখন সে বিনয়ী হওয়ার বদলে অহংকারী হয়ে ওঠে। নিশ্চিত জানবেন, অহংকার পতনের মূল। যিনি ভাব নিয়েছে, অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে কিংবা ভালো আচরণ করেনি- তার পতনের শব্দ আপনি শুনবেন। জীবনের কোথাও না কোথাও এরা আটকাবেই। এমনভাবে ধরা খাবে যে পরিবারসহ অপমানিত হবে। শেষ বয়সে, দুর্নীতির মামলায় আদালত-জেল দৌড়াদৌড়ি করবে!- পরিনতি কল্পনা করতে পারছেন?
যে মানুষ ক্ষমতা পেয়ে, দায়িত্ব পেয়ে মানবিক আচরণ হারায় তাকে খেসারত দিতেই হয়। যে মানুষ অহংকারী সে সৎ হলেও কিচ্ছু আসে যায় না। সততার অহংকার ভিন্ন রকম। সৎ কখনোই অসৎ লোক কিংবা নিয়মনীতির সাথে আপোষ করে না। তবে হরেদরে সবার সামনে খারাপ আচরণ করা, কাউকে সেবা বঞ্চিত করা, অহেতুক বসিয়ে রাখা এসব মানুষের পতনকে ত্বরান্বিত করে। খোদা যে ভাগ্য দিয়েছে, সরকার/কর্তৃপক্ষ যে দায়িত্ব দিয়েছে তা বিনয়ের সাথে পালন না করে মানুষকে হয়রানি করলে- তাকেও জীবনে হয়রান হতে হবে। দুনিয়াতেই সব হিসাবনবকাশ মিটিয়ে দেওয়া হবে না। মানুষের সাথে যেমন আচরণ করবেন কাল কেয়ামতে প্রভূও ওই বান্দাহের সাথে তেমন আচরণ করবেন। তখন বুঝা যাবে কে কতোখানি হরিদাস পাল! কেয়ামতে সব ঘটবে ভেবে হাল ছেড়ে দিয়েন না! দুনিয়াতেই বড় বড় আলামত প্রকাশ পাবে!
।।।দুই।।
এমন একজন মানুষের কাছে সেবার জন্য গেছেন যিনি আপনাকে সৎ পরামর্শ দিতে কার্পণ্য করেনি। মনোযোগ দিয়ে সমস্যা/আবদার শুনেছেন, সাথে চমৎকার আচরণ করেছেন। সামর্থ্যে থাকলে সমাধান দিয়েছেন কিংবা সাধ্যের বাইরে থাকলে হাসিমুখে অপারগতা জানিয়ে বিদায় দিয়েছেন। নিশ্চিত জানুন, এমন মানুষের প্রত্যেক পদক্ষেপ ইবাদত। এই বিনয়ী স্বভাব তাকে আরও বহুদূর নেবে। ক্যারিয়ারে-জীবনযাপনে আরও বহু পালক লাগবে এবং ব্যক্তিত্বের সুগন্ধি ছড়াবে। জীবনে সম্পদ সবকিছু নয়; তিনি মানুষের মন থেকে সম্মান পাবেন। মনে রাখবেন, সম্পদের নয়, কর্মের বিচার হবে! যিনি জাত-পাত না ভেবে, আমির-ফকির ভেদাভেদ না করে সামান্য মানুষটিকেও প্রাপ্য সম্মান দিয়েছেন তাকে প্রার্থনার জন্য কপাল মাটিতে স্পর্শ না করালেও চলে! বরং তার প্রত্যেকটি কথায় পূণ্য লিপিবদ্ধ হয়। যে মানুষকে সম্মান জানাতে পারে তাঁর সম্মান মহান প্রভূ আরও বাড়িয়ে দেন। বিনয়ীকে রব সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন; কৃতজ্ঞতার প্রকাশককে তো বটেই!
কাউকে অহেতুক হয়রানি না করা, মনোযোগ দিয়ে আবেদন/আর্জি শোনা- এসব প্রকৃতার্থের সেবা। মানুষটি কেমন তা তাঁর কথা ও আচরণে ফুঁটে ওঠে। যে মানুষ মহৎ সে অবশ্যই বিনয়ী হয়। কারো যোগ্যতা কম থাকলে, মেধা সাদামাটা হলেও- বিনীত চরিত্র তাকে সর্বসাধারণের কাছে পূজণীয় করে তোলে। অর্থ দিয়ে, বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কতজন মানুষের মন জয় করা যায়? কতজনকে সাহায্য করার আর্থিক সঙ্গতিও-বা থাকে? অথচ মানুষের সাথে দু’দন্ড হেসে কথা বললে, অল্প অল্প ভালোবাসা দিলে কিংবা একটু সদাচারণ করলে তাঁর জন্য মনের মনিকোঠা থেকে দোয়া আসে। মানুষের মনে জমে থাকা এই সম্মান বিনীত মানুষের/ভালো মানুষের ভাগ্য খুলে দেয়। বিপদাপদ কমিয়ে দেয়। পরকালের পুরস্কার তো থাকেই।
।।তিন।
ঔদ্ধত্যপূর্ণ হয়ে দেখতে পারেন- লাভ নাই। ভাব নিয়ে চলতে পারেন- সত্যিকারের আপন হিসেবে কাউকে পাবেন না। মানুষ মুখ দিয়ে যে ভালোবাসা দেখায় তারচেয়ে মনের মধ্যে পুষে রাখা ভালোবাসা শ্রেয়তর। কাজেই একটু একটু করে বেশি বেশি মানুষের সাথে মিশতে চেষ্টা করুন- ভালো লাগবে। কেউ যদি আপনাকে সহজে পায় সে আপনাকে ভরসার আশ্রয় মনে করে। যারা বিনীত হয় তারা যে কত উঁচুতে ওঠে, কত কত সম্মান পায় তা একজন দেমাগে পরিপূর্ণ মানুষের পক্ষে আন্দাজ করাও মুশকিল। যারা থাকে মাটির কাছাকাছি তাদের নাম-সম্মান আকাশ ফুঁড়ে উর্ধ্বাকাশে পৌঁছে যায়। সরলতার মত সৌন্দর্য আর কিছুতেই নাই। সৌন্দর্যের সরলতা আমরণ উপভোগ করা যায়। বিনয় মানুষকে আরও বেশি সম্মানিত করে। মানুষের ভালোবাসায় আম-জনতার হৃদয়ে জায়গা দেয়।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।