All Menu

গিবত ও গুজবে জর্জরিত সমাজ

যারা কথায় কথায় ধানাই-পানাই কয়, মিথ্যাতে বেসাতি সজায় তারা বসের কাছে, বউয়ের আঁচে, বাইরের ছাঁচে বেশ রমরমা অবস্থানে থাকে। যাদের জিহ্বা থেকে তেল উগড়ে পড়ে, কণ্ঠ থেকে রস খসে নামে তাদের ওপর আধা জগত সন্তুষ্ট! যাচাই-বাছাই ছাড়া কান কথা বিশ্বাস করা ছাগলের সংখ্যা বাড়ছে! কারো বিরুদ্ধে কানে লাগানোর সাথে সাথে এদের অবোধ জেগে ওঠে, প্রতিশোধে নাগা হতে চায়! অথচ গিবতকারী মিথ্যাবাদী। নালিশ প্রদানকারী সুযোগবাদী!

আপনার আশেপাশে এমন অনেক আছে যারা কাজের নামে ঠনঠন! অথচ সব কাজের ক্রেডিট তাদের! সব বাজে কাজে তাদের হাজিরা সর্বাগ্রে থাকবে! এদের জিহ্বা পায়খানার প্যানের চেয়েও অপবিত্র! এদের মস্তিষ্ক ড্রেনের চেয়েও নোংরা। একটু সুযোগ পেতে এরা জাতিকে বিপদে ফেলতে পারে! এক কথা একেকজনের কাছে একেকভাবে লাগিয়ে কী পরিমান পশু হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে তা সে জানোয়ার জানেই না। জানোয়ার ভাবে জিতছে কিন্তু কতজনের ঘৃণায় যে সে ডুবছে সেটার হদিস তার কাছে নাই!

ভাবছেন, এমন মানুষ চিড়িয়াখানায় পাবেন? ওরে না! আপনার কর্মক্ষেত্রে পাবেন, আপনার ধর্মক্ষেত্রেও পাবেন! এরা নিজের কথার চেয়ে পরের দোষ বেশি বেশি জানায়। নিজের উন্নতির চেয়ে পরের ক্ষতি চেয়ে উর্ধ্বাকাশে অনুরোধ পাঠায়! এরা বন্ধুত্ব নষ্ট করে, বিশ্বাস ধ্বংস করে! এরা গলাকে হংসের গলার মত লম্বা করে পরের দোষ পরকে চেনায়! অথচ নিজে যে ময়লার বাগাড়, ছড়ায় যে মিথ্যার আঁধার সে বোধ অবোধের থাকে না! গালি শুনে শুনে জীবনের বাকিপথ খালিতে কাটাতে হয়!

একপক্ষ এই প্রজাতির নালায়েককে ব্যবহার করে স্বার্থ উদ্ধার করে। কওমের সর্বনাশ ঘটায়! শত্রুর শেকড় লম্বা হতে থাকে। অতঃপর স্বার্থোদ্বারের টুলকে চুলোয় পোড়ানো হয়, লাথি-গুতোয় ছাই সাগরে নিক্ষিপ্ত হয়! ছাই হয়তো বুঝতেই পারে না যে অপরাধ কে করেছিল কোনকালে! যারা প্রায়শ্চিত্তের রেশ প্রজন্মে প্রজন্মে বহন করতে হয়! চুবুনি খেতে হয় ঘাটে-পথে! রাতে-সাথে! এরা মানুষের চেয়ে অমানুষ বেশি! বন্ধুর চেয়ে শত্রুর রথি!

পিছনে গিবতকরাদের, মিথ্যা-মিথ্যি নালিশ সাজানোদের কিংবা গিজব ছড়ানোদের দুনিয়াটাই নরক হয়ে ওঠে! মানুষের ঘৃণা, লাথিগুতা খেতে খেতে ঘুরতে হয় জীবনের পথে পথে। অবশ্য এরা নির্লজ্জ-বেহায়া হয়! পৃথিবীর গভীরতর অপমানকেও এরা পুরস্কার ভাবে! এদের জং ধরা বিবেকের শান হবে তেমন অনল ধরণীতে নাই! দোযখের অনলে না পোড়া পর্যন্ত এদের স্বভাব বদলাবে না! পৃথিবীর কোন অপমানের এদের বোধ জাগবে না! এরা অর্ধ জানোয়ার হয়ে জন্মায় এবং পূর্ণ পশু হয়ে মৃত্যুবরণ করে! আগুন এদের সব কিছুর দেনা-পাওনা সুদাসলে একদিন উগড়ে দেবেই! বহুরূপী চরিত্রের ফয়সালা করবেই!

সবার কাছে ভালো সাজা মানুষগুলো পয়জন। এদেরকে যদি চিহ্নিত করা না যায়, বাদ দেয়া না হয় মস্তিষ্ক থেকে তবে জীবন নরক হয়ে উঠবে। ক্ষোভ-রোগ বৃদ্ধি পাবে। যাদের কথায় কথায় রস, আচরণে খসখসে তারা বহুরূপী জোঁক! নিজের স্বার্থের জন্য এরা জগতের রূপ বদলে দিতে পারে! নিজে ভালো সাজতে, বাড়তি সুযোগ বহাল রাখতে এরা কেবল আদর্শ নয়, শরীর-মন সব বন্ধক দিতে পারে! এ-ই জাতীয় মানুষ পশুদের সমাজে পশু সাজতে নিজেকে বিলিয়ে দেয়! আদর্শ বিকোয়!

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top