ঠকা কবুল করেই কেবল ঠকাতে পারি! পাহারা দিয়ে কাউকে বিশ্বস্ত রাখা যায় না। বিশ্বস্ততার প্রতিশ্রুতি যদি কেউ ভঙ্গ করে তবে নজরদারি করে তা আটকানো যায় না। পৃথিবীর আরেক প্রান্তে বসে কেউ বিশ্বাসের অমর্যাদা করলেও, যার সাথে সে বিশ্বাস জড়িত, যাকে করা হয়েছে বঞ্চনা, তার দায় শোধ করতে হবে। ঠকালে, পৃথিবীর কেউ না জানলেও, তা বিনিময়বিহীন যাবে না। স্রষ্টা আছেন এবং তিনি সৃষ্টিকে বেনজর ছেড়ে দেননি। পৃথিবীর পাঠ শেষ কথা নয়। হাশরে বিচারের আসর বসবে। যে ঠকেছে এবং যারা ঠকিয়েছে- বাতচিত হবে। ন্যায়বিচারকের রায় শোনা যাবে।
ঠকানোর ক্ষমতা কেবল মানুষের নয় বরং সময়ের থাকে কিংবা সুখেরও থাকে। যেটুকু আমানতের খেয়ানত ঘটবে, যে কথার বরখেলাপ করবে কিংবা যে গোপনে কারো অধিকার বঞ্চিত করে তার প্রতিশোধ ভিন্ন উৎস থেকে তীব্র স্রোত হয়ে জীবনে ফিরবে। কারো চোখের পানি, কারো অভিশাপ কিংবা কারো নির্ঘুম রাতে প্রার্থনা/নালিশ ফয়সালাবিহীন যাবে না। দুনিয়াতেই শাস্তির অনেকখানি মিটিয়ে ফেলা হবে। যে মানুষ ঠকিয়েছে পরিস্থিতি তাকে ঠকাবে। যে বুক ভেঙেছে কিংবা কথা রাখেনি- সময় তাকে অসম্মান দেখাবে। মানুষ যা রেখে যায় তা ফিরে পায়। উৎস ভিন্ন হতে পারে কিন্তু ফল বদলায় না। কর্মের ফল ফিরবে। কাঁদালে কাঁদবে। ঠকালেও ঠকবে।
বিশ্বস্ত থাকা হক, বিশ্বস্ত পাওয়া অধিকার। কারো হক ঠকালে অধিকারে প্রবঞ্চনা ঘটবে। সুখের পিদিম অস্তাচলে যাবে। অন্ধকারেও যদি এমন অপরাধ ঘটে যার সাথে কারো সুখ নষ্টের হিস্যা জড়িয়ে থাকে তবে স্রষ্টা সেটা দেখেন। ভালো সময়, খারাপ সময় ঘুরেফিরে আসে। প্রত্যেক সময় অতীতের ফিরিস্তির সাক্ষ্য দেয় এবং ছাপ রাখে। যদি ক্ষতি সামলে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে, যদি বুকভাঙা ব্যথা সহ্য করার শক্তি থাকে তবে মানুষকে কাঁদানো যায়। তবে ঘোষণা দিয়েও ঠকানো যায়! গোপনে ঠকাতে পারলাম বলে আত্মতৃপ্তি অনুভব করার সুযোগ নাই। পাপের প্রতিশোধ আয়ু ফুরাবার আগেই জীবনের মুখোমুখি হবে। তখন হয়তো প্রায়শ্চিত্তের পথ থাকবে না বরং খেসারত দিতে হবে।
কাউকে ঠকানো পাপ। যার সাথে দু’টাকার চাওয়া-পাওয়া তাকে ঠকানো আর যার সাথে জীবনের লেনদেন তাকে ঠকানোর মধ্যে ফারাক আছে। যে মানুষ তার সঙ্গীকে অন্ধ বিশ্বাস করে, ভরসায় আগলে রাখে কিংবা আপন ভেবে একসাথে বাঁচার স্বপ্ন দেখে- তাকে কোন শর্তেই ঠকানো যায় না। কাউকে ঠকিয়ে সাময়িক ছাড় পাওয়া যায় বটে তবে পার পাওয়া যায় না। জীবন দু’দিনের। এর একদিন ঠকালে, বাকিদিন ঠকতে হবে। একদিন কাঁদালে অসীম সময় কাঁদতে হবে। যার প্রতি জুলুম কর হয়,কায়নাতের বাকিসব মাজলুমের পক্ষ নিয়ে নেয়।
কখনো যদি ঠকো তবুও ঠকিও না। তুমি কাউকে ঠকালে স্রষ্টার তাবৎ সৃষ্টিকূল তোমাকে ঠকাতে প্রতিযোগিতা করবে। শাস্তি হিসেবে কিচ্ছু করার দরকার নাই শুধু তোমার মানসিক স্বস্তি কেড়ে নেওয়াই যথেষ্ট। এটাই প্রতিশোধ। কেউ তোমাকে ঠকালে ধৈর্য ধারণ করো। ফল পাবে এবং তোমার তা পছন্দ হবে। অন্যায়ভাবে তুমি ঠকলে তার বিনিময়ে পুরস্কার অপেক্ষা করে। চোখের পানির মূল্য আছে। যে অশ্রু জড়ায় তার খেসারত বাড়ে। কখনোই কাউকে পাহারা দিয়ে, প্রতিশ্রুতি নিয়ে কিংবা শাস্তি দিয়ে বিশ্বস্ত রাখা যায় না; যদি ব্যক্তি এসব গুণ ধারণ করতে না চায়। কাজেই জবরদস্তি নয় বরং তাওয়াক্কুলের পথ তালাশ করা উত্তম। নিজেকে সৎ রাখা জরুরি।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।