All Menu

আর একফোঁটও ঘৃণা নয়

প্রতিকি চিত্র।

প্রিয়গণ, প্রতিশোধ ভুলে যান। কোন অপরাধ বা ভুলের জন্য প্রতিশোধ গ্রহণে সংকীর্ণ প্রাপ্তি ঘটে। যদি ক্ষমা করতে পারেন তবে তার মহত্ত্ব বিস্তীর্ণ। যদি আপনাকে অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা হয়রানি করা হয় তবে আইনের কাছে ন্যায্যতা দাবি করেন। আজ সুযোগ পেয়ে কারো ওপর প্রতিশোধ নিতে চড়াও হলে তার রেশ ভবিষ্যতেও থেকে যাবে। যারা ভুল করেছে তাদের বুঝিয়ে দিতে যদি অনুরূপ ভুলের পুনরাবৃত্তি করি তবে আশরাফ আর আতরাফে পার্থক্য থাকলো কোথায়? কোন দলের অন্ধ সমর্থকের চেয়ে মানবিকতার মানুষ হয়ে ওঠা জরুরি। প্রতিহিংসা দিয়ে নয় বরং ভালোবাসে, আগলে রেখে এবং সমতা নিশ্চিত করে যাতে সামনের দিনগুলোতে মিলিত হই। ভুল করলে ঘৃণা কতখানি বাড়ে, মানুষ কীভাবে রিঅ্যাক্ট করে এবং কত গভীর উত্তাপ ছড়ায়- তার সবখানি দৃষ্টান্ত বোধহয় গত কয়েকদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্পদ ধ্বংস করে, কাউতে পুড়িয়ে/গুলি করে মেরে কিংবা অকথ্য নির্যাতনের পরে পেট ভরে ভাত খাওয়ালে, নরম বিছানায় শোওয়ালে এবং গতিময় যানবাহনে চড়ালেও তার শোধ পূর্ণ হয় না বরং ক্ষোভ বাড়ে। কাজেই ভবিষ্যতে জন্য যারাই যে সিদ্ধান্ত নিবেন তা ভেবে নিয়েন। যতটুকু পারেন জনতার ভালোবাসার কামাইয়ের চেষ্টা করবেন; ভুলেও একফোঁটা ঘৃণা নয়। ঘৃণা জমতে জমতে যখন গণবিস্ফোরণ ঘটে তখন অস্তিত্বই বিলুপ্ত করে দেয়।

কারো উপর চড়াও হলে, অন্যায্যভাবে অধিকার কেড়ে নিলে কিংবা জনসম্পদ লুটপাট করলে কেমন পরিণতি ঘটে তা নতুন করে বলার নাই। পতনের জ্বাজ্জল্যমান দৃষ্টান্ত সবার সামনে। অতীতের ভুলগুলো থেকে, ক্ষতগুলো দেখে যাতে সবাই শিক্ষাগ্রহণ করে। পাঁচ কিংবা পঁচিশ বছর বাদে আবার মূল্যায়ণের আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে। ভুলের পুনরাবৃত্তি হলে পাঁচ মাসেও পতন হতে পারে। তখন যাতে বিদায়ের জন্য আসিটুকু বলার ফুসরত থাকে। যে বিদায় নেবে তারচেয়ে যাতে যে বিদায় দেবে সে বেশি কাঁদে। অতীত দেখিয়েছে, আমরা ক্ষমতা পেলে কর্তব্য ভুলে যাই। লাভের নামে লোভে ডুবি। গণধিকৃত হতে হতে রাষ্ট্র ছাড়া হতে হয়। ভবিষ্যত শাসকদের সাবধান হওয়া ও শিক্ষা নেওয়া জরুরি। সব নীতকথা ভুলে আবার যদি অতীতের অপশাসন আগতদের মস্তিষ্কেও চাপ তবে জনতার চেয়ে ক্ষমতা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জনতার মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে ক্ষমতায় থাকাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আলোচনায় সমাধান মেলে না এমন কোন সমস্যা নাই। অহমিকা, জেদ কিংবা গোঁয়ার্তুমিতে যাতে তরী না ডোবে। নতুন সূর্যের অপার সম্ভাবনা যাতে লুটপাট না হয়। দুর্বৃত্তায়নের ফলে যা কিছু ভালো তা ধ্বংস না হোক। শহীদ সাইদ কিংবা শন জয় করে যাওয়া মুগ্ধ এবং আরও অগণন তরুণ- যাদের জীবনের বিনিময়ে মুক্তি, সেই শোক শক্তি হয়ে রাষ্ট্রের হাল শক্ত করে ধরুক। জনতার রায়ে যারাই শাসনে আসবে তারা আর কোনদিন স্বৈরাচার হয়ে না উঠুক।

কোন অর্জনের কৃতিত্বে আমি নয় বরং আমরা কিংবা কোন অধিকারে আমার নয় বরং আমাদের- এই শপথে চলতে পারলে দেশটা সোনার দেশ হয়ে উঠবে। আমি কিংবা আমিত্ব- ভয়ানক খারাপ শব্দ/ব্যাপার। দাঁড়ি টুপি দেখলেই জঙ্গি না ভেবে কিংবা সংখ্যালঘু পেলেই চেপে না ধরে যদি সমতায় চলি, সর্বত্র সাম্য এবং মানবিকতা রাখি তবে সোনার দেশ গড়া যাবে। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সোনার দেশে বৈষম্যের আঁচড়ে কোনভাবেই লাগতে দেওয়া যাবে না। আর কোন অশুভ শক্তি যাতে ক্ষমতায় খুঁটি গাড়তে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। নয়তো স্বপ্ন মুকুলেই ঝরে যাবে। তিপ্পান্ন বছরে কম জঞ্জাল জমেনি। তারুণ্যের শক্তিতে এবার সেসব সাফ হবে- আশায় বুক বেঁধেছি। যদি অতীত আমাদের শেখাতে পারে তবে এক পয়সা ঘুষ, কাউকে দমন-পীড়ন কিংবা ঘৃণা কামাইয়ের মত বোকামিতে আর ভবিষ্যত জড়াবে না। অবিচারের ও অন্যায্যের ময়লা চিন্তা ও কাজে লাগানো উচিত হবে না। তবে যদি প্রতিহিংসা মাথাচাড়া দেয়, অতীতের দলান্ধের ভাবধারা বজায় থাকে তবে আবারও পালাতে হবে। এমনও হতে পারে, পালানোর জন্য তখন কোন দেশে ঠাঁই পাওয়া যাবে না। এক আকাশ ঘৃণা কুড়াতে হবে। এই যে বাড়াবাড়ি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিনাশ, লুটতরাজ কিংবা নির্যাতন- এসবও ইতিহাসের দলিল হবে। এমন মহৎ অর্জনকে অল্পতেই বিনষ্ট হতে দেওয়াটা বোকামি হবে। আমাদের উত্তরাধিকারী প্রজন্মের সামনে যাতে মুখ লুকাতে না হয়। এই বাংলাদেশ আমাদের। ভুল থেকে শিখে যাতে আগামী দিনের স্বপ্ন সাজাই। রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে হোক।

যেখানে সম্ভাবনা প্রকট তার উল্টোপাশেই শঙ্কা প্রবল। ভালোবাসার বদলে ভয় নয়, শাসনের নামে শোসন নয় কিংবা ক্ষমতার বদলে ঘৃণা যেন আর না জমে। যে তরুণেরা জিতিয়েছে তারা উদ্দেশ্যে পৌঁছানোর আগেই যাতে হেরে না যায়। খোলা চোখে চারদিকে সচেতন দৃষ্টি পড়ুক। ঘৃণা নিয়েও কিছুদিন থাকা যায় কিন্তু টেকা যায় না- এই সত্য যাতে কারো বিস্মরণ না হয়। সুদিন সমাগত হলে তবেই এই জয় জনতার। ইচ্ছাকৃত কিংবা লোভ-মোহের ভোগে অনুশোচনা এলে তবে আত্মহত্যা শ্রেয় হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও স্থাপনা, সংখ্যালঘু এবং তাদের সম্পদ, ধর্মীয় উপাসনালয়, ভিনদেশী এবং ব্যক্তিগত আক্রোশ- এসবে কারো প্রভাব ও কারো কুমন্ত্রণায় কোন ধ্বংসযজ্ঞে মাতবে না। মনে রেখো, ভুলের ফয়সালায় আবার ভুল করলে সেটারও খেসারত দিতে হয়। হিংসাত্মক এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চরমভাবে নিন্দনীয় ও বর্জনীয়। সময় আবর্তিত হতেই থাকে। সুদিন দুর্দিনে বদলে যায় আবার দুর্দিন সুদিন নিয়ে আসে- দু’দিনের ব্যবধানে। যে তারুণ্য পরিবর্তন এনেছে তাদের নিন্দা হতে পারে এমন কোন কর্মকাণ্ড কোনভাবেই করবে না। নতুন বাংলাদেশের সূচনা হোক। তারুণ্যের শক্তি হোক অগ্রনায়ক। দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারী এবং ঘুষখোরের ঠাঁই সোনার দেশের মানচিত্রে আর না হোক। প্রতিহিংসা কিংবা জিঘাংসা কোন মহৎ উদ্দেশ্যের অনুবর্তিকা নয়।

ভবিষ্যতে ক্ষমতা পেয়ে কিংবা ক্ষমতায় যেয়ে যারা অন্যায় করবে তারা যেন ছাত্রসমাজের মুখগুলো মনে রাখে। অন্যায়ের প্রতিবাদ কখনোই থামে না বরং দ্রোহ নিয়ে সামনে বাড়ে। কোন রাষ্ট্রীয় সেবা দেওয়ার নামে একপয়সা ঘুষ চাওয়ার আগে ছাত্র-জনতার শক্তি যেন মনে পড়ে। এই দেশের অদ্ভূতুরে নিয়মকানুন সংস্কার করার এইতো মোক্ষম সময়। জাতির সামনে শুধরে যাওয়ার/দেওয়ার এবং নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। শাসক যাতে দাম্ভিক হয়ে না উঠে, কেউ যাতে ক্ষমা আঁকড়ে থাকতে না চায় কিংবা না পারে তার সুব্যবস্থা করতে হবে। তারুণ্য যে দেশের নেতৃত্ব দেয় সে দেশ পথ হারবে না বলেই বিশ্বাস। এরপরেও যদি পচন ধরে তবে আর কোন আশা বাকি রইবে না। আমাদের জন্মভূমি সোনার বাংলাদেশ হয়ে উঠুক; কেবল কাগজ কলমের সোনার দেশ নয় বরং শাসক-শাসিতের বৈষম্যমুক্ত বাস্তবিক স্বপ্নের বাংলাদেশ। বিশ্ববাসীর কাছে এক নতুন বাংলাদেশের পরিচয় ঘটবে সেই আশাবাদে বুক বেঁধেছি। বুক ভাঙার ব্যথা আর যেন সহ্য করতে না হয়। অতীত আমাদের যা শিখিয়েছে তার থেকে ভালোটুকু নিয়ে ভবিষ্যত গড়ে তুলব এবং আলো আসবে- এমটাই জয় জনতার প্রত্যশা। আশা নয় বিশ্বাস- এবারে নিরাশার কিছু ঘটবে না। ঘটতে চাইলেও আর ঘটতে দিয়েন না। পরবর্তী শাসকদের ভবিষ্যত যাতে স্বর্ণাক্ষরে লিখতে পারি- সেই সৌভাগ্য হোক জাতির।

রাজু আহমেদ, কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top