All Menu

ভালোবেসেই ভালোবাসার ঋণ পরিশোধ করতে হয়

প্রতিকি চিত্র।

আচরণে বোকামি থাকলেও যেনও নষ্টামি না থাকে। কিছু কিছু খেয়ানতের ভর্তুকি হয় না। ঋণ খেলাপি হলেও আশায় বুক বেঁধে আবার ঘুরে দাঁড়ানো যায়। একবার যদি ফুরিয়ে যায় বিশ্বাস, ভেঙ্গে যায় ভরসার সিঁড়ি তবে তা নতুনভাবে মেরামত করে আবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসতে যুগান্তরের অপেক্ষায় কাটাতে হয়। চরিত্র হারিয়ে গেলে, ব্যক্তিত্ব পঙ্গু হয়ে গেলে গর্ব করার মত আর কী থাকে? কারো জন্য দিওয়ানা হওয়া মোটেই মন্দ নয় তবে সেখানে বোধ-বিবেক উপেক্ষা করে যদি সবকিছু বিনিয়োগ করতে হয় তবে সে ব্যবসার ব্যাপারে নতুন করে ভাবা দরকার। আত্মসম্মান ফুরিয়ে গেলে গর্ব করার মত আর কী অবশিষ্ট থাকে?

পৃথিবীর কোন প্রলোভনে চরিত্র, ব্যক্তিত্ব এবং সততা খোওয়ানো ঠিক নয়। সম্পদ না থাকতে পারে তবুও সম্মান থাকা চাই। কেউ যখন কারো ইশারার পুতুল হয়ে যায় তখন তার নিজস্বতা বলে কিছু থাকে না। এমন কোন ষড়যন্ত্রের কৌশল হয়ে ক্ষমতায় বসাও ঠিক নয় যেখানে সিদ্ধান্তের জন্য তৃতীয়পক্ষের আদেশের অপেক্ষায় থাকতে হবে। ব্যক্তিত্ব-বান মাত্রেরই আলাদা সৌন্দর্য ও সুগন্ধি আছে। ব্যক্তিত্ব-বানের কথার ওজন তাঁর নিজের ওজনের চাইতেও বেশি অথচ ব্যক্তিত্বহীনের কথার ওজন বাতাসের চেয়েও হালকা। যে ভালোবাসে আর যে জোর করে দখল করে তাদের মধ্যকার পার্থক্য স্থূল। চিরন্তন নিয়মে মানুষ ব্যক্তিত্বের সুধায় মুগ্ধ হয়।

কথায় কথায় ধমকানি থাকলে তাকে কে সম্মান করে? ভয় আর সম্মানের মধ্যকার পার্থক্য উপলব্ধি করে যারা মানুষের সাথে আচরণ করেছে তারাই কেবল বেঁচে আছে। বাকিরা নিজেদেরকে বেচে দিয়েছে ধ্বংসের কারখানায়। যে মানুষকে সম্মান দিতে জানে না সে কারো থেকে সম্মান পাবে- সে আশা অবান্তর। কাউকে গালাগাল করে, অশ্লীলতার হাটবার বসিয়ে সময় কাটানো যায় তবে সময়কে উপভোগ্য করা যায় না। বিনীতকে জিম্মি করে স্বার্থ আদায় করলে, দুর্বলকে পদাঘাত করে বড়ত্ব জাহির করলে কিংবা অধীনকে পেষণ করে সম্পদ ও সুযোগ তৈরি করলে ভালোমানুষের দফতর হতে তার নাম কর্তন হয়। অবজ্ঞা আর উপেক্ষা দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না। ভালোবেসেই ভালোবাসার ঋণ পরিশোধ করতে হয়!

ভালোবাসি ভালোবাসি বলার অন্তরালে যদি স্বার্থ কিংবা ভোগের উপলক্ষণ থাকে তবে অনুভূতি মরে যায়। কেউ নিজস্ব লাভের জন্য কারো নিকটবর্তী হয়- এটা বোঝার পরে সেখানে বাধ্যবাধকতায় রেসপন্স করা লাগতে পারে কিন্তু আন্তরিকতা অবশিষ্ট থাকে না। হুমকি দিয়ে পৃথিবীর সুন্দরতম সৃষ্টিগুলো সম্পন্ন করা যায় নি। অথচ ভালোবেসে অযুত-নিযুত-বার হৃদয় জয় করা গেছে। ইচ্ছা যদি সৎ হয় তবে তাতে নিজের জন্য ও অপরের জন্য কল্যাণ থাকে। অথচ ইশারায় যদি মন্দ আভা থাকে তবে ক’দিন বাদেই দুর্গন্ধময় লাভার উপস্থিতি প্রকট হয়। দখল করার সুযোগ থাকার পরেও জয় করার মরণপণ চেষ্টা চালাতে হবে। আন্তরিকতাতেই সম্পর্কের সমৃদ্ধি ঘনীভূত হয়।

পৃথিবীতে কথার মত দামী এবং সুন্দর আর কিছুই আবিষ্কার হয়নি যদি সেসব কথা কল্যাণকামী হয়। কাউকে মন্দ কথা বললেও, বকা দিলেও সেটাকে সুন্দর পোশাক জড়িয়ে দিয়েন। অন্যকে মানসিক কষ্ট দিলেও খুব যত্ন করে দিয়েন যাতে কেউ টের না পায়। যখন অপরের সেই কষ্টের ভর্তুকি আপনাকে শোধ করতে হবে তখন যাতে আপনি টিকে থাকতে পারেন- সেরকম করেই নিজেকে তৈরি রাখবেন। কাউকে কষ্ট দিলে তার রেশ ঘুরে ফিরে আপনার দিকে প্রত্যাবর্তন করবেই। সাময়িক ছাড় পেলেও ভাববেন না, দুনিয়াতেই সব হিসাব-নিকাশের দফারফা হয়েছে! আরেকটা জীবন আপনাকে মূল্যায়ন ও পুরস্কার-প্রতিশোধের অপেক্ষায় আপনার পথ চেয়ে আছে!

কাউকে ঠকাবেন না কিংবা ভোগাবেন না। মানুষের দীর্ঘশ্বাসের চেয়ে ভয়ংকর কোন অস্ত্র নাই। কারো বুকভরা কষ্টের কারণ হলে আপনার সামনে এগিয়ে চলা শেকলের মত কোন বাঁধায় থামিয়ে রাখবে। বরং মানুষের ভালো থাকার, মানুষকে ভালোবাসার আয়োজন করুন। কাউকে ঘৃণা করে ঘৃণিত জীবনের সাথে সখ্যতা বাড়িয়ে কী লাভ? মানুষের জন্য বিনীত থাকুন। মানুষকে যথাযথ সম্মান ও প্রাপ্য বুঝিয়ে দিন। দম্ভ-দেমাগের পোশাক ছিঁড়ে ফেললে, অহংকার-ঈর্ষা বিলুপ্ত করতে পারলে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতে পারি। এমন জীবনের নামে অভিশাপের ঢেউ উঠবে না। কারো ক্ষতির ভর্তুকি দিতে কোন অর্জনের ছিঁটেফোঁটাও কর্তিত হবে না বরং মানুষ কীর্তিতে মহীয়ান হবে। ভালোর জন্য সংগ্রাম করলে সম্মান বাড়ে। অন্যকে সম্মানিত করলে নিজেরও সম্মান বাড়ে।

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top