All Menu

ক্ষতের খতিয়ান দ্বিগুণ হয়েই কপালে জোটে

প্রতিকি চিত্র।

কেউ আঘাত দিলেই প্রতিশোধের নেশায় পাগল হয়ে উঠি? কখন এর জোরদার জবাব দেওয়া যায় সেই মওকা খুঁজি! আচ্ছা, ছেড়ে দিলে কেমন হয়? ভুলে গেলে ক্ষতি হয়? বিশ্বাস করুন, আপনি প্রতিশোধ নিলে যে ক্ষতি হতো তার চেয়ে অধিক শিক্ষা সে অন্যকোন ক্ষেত্র থেকে পাবে। কাউকে ঠকানো, আঘাত করা, ব্যথা দেওয়া, অপমান করা কিংবা তাচ্ছিল্য করা- এসব বিনিয়োগ। কাউকে বঞ্চিত করা কিংবা কারো বিশ্বাস ভঙ্গ করার পাপ মাফ করার এখতিয়ার খোদাও একচ্ছত্র-ভাবে তাঁর কাছে রাখেননি। বান্দার হকের সাথে যা কিছু জড়িত তা ক্ষতিগ্রস্ত কর্তৃক ক্ষমা না হলে খোদাও মাফ করবেন না- স্পষ্ট ঘোষণা আছে। কাজেই কারো অধিকার হরণ করলে, কারো ন্যায্যতা অসম্পূর্ণ রাখলে তার বিনিময় সুদসহ ফেরত আসবে। নিশ্চয়ই তা মঙ্গলজনক কিছু না!

কোথাও কারো ক্ষতি করে এসেছেন অথচ দু’জনেই ভুলে গেছেন কিন্তু ক্ষতি ভুলে যায়নি। জীবনে এমন বিপর্যয় নেমে আসবে, এমন দুর্বিপাকে জড়াবেন যা আকাঙ্ক্ষিত ছিল না অথচ পূর্ব পাপের ফল ভোগ করতেই হবে। সুতরাং ক্ষতিগ্রস্ত যদি শোধ নাও তোলে, মেনে যায় তাও দীর্ঘশ্বাসের অভিশাপ হানিকারকে তাড়িয়ে বেড়াবে। সৌভাগ্য রুখে দেবে, আলো নির্বাপিত করে রাখবে। ঠকিয়েছে অথচ সে ঠকেনি, ব্যথা দিয়েছে অথচ ব্যথা পায়নি কিংবা অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে অথচ শান্তিতে থেকেছে- এমনটি সাধারণত ঘটে না। এই পৃথিবীর যিনি পরিচালক তিনি অনন্য সাধারণ সূত্রে জগত-সংসার পরিচালনা করেন। যার জন্য ক্ষতের খতিয়ান দ্বিগুণ হয়েই ঘাতকের কপালে জোটে। কেউ রেহাই পায় না।

সুখ নাই কেন, বরকত পাই না কেন কিংবা ভালো মানুষ নাই কেন?- এমন অভিযোগে দিনের অধিকাংশ ফুরিয়ে ফেলি। অথচ আমার নিজের বিচার একবারও করিনা। পাওয়ার সময় ষোলআনা আর দেওয়ার সময় ফুটো পয়সা নীতিতে স্বভাবের রীতি বানিয়ে ফেলেছি। কার কীভাবে ক্ষতি করা যায়, কার অগ্রগতি-সমৃদ্ধি রুখে দেওয়া যায়?- এহেন কুচিন্তায় দিন অতিবাহিত করি। আড়ালে অন্যের সমালোচনার আসর জমাই! কারো বিপদ শুনলে সুখে গদগদ হই। এরপর নিজে পরীক্ষায় পড়ি। তখন ভাগ্যকে দোষারোপ করি। নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভাগ্যের দোষ আর অন্যকারো ক্ষতির কথা শুনলে তা পাপের শাস্তি বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করি। কাজী নজরুলের ভাষায়, “আমরা সবাই পাপী;
আপন পাপের বাটখারা দিয়ে
অন্যের পাপ মাপি!”- এটা আমাদের জীবনদর্শন হয়ে দাঁড়ায়।

যারা কারো ক্ষতি করেছে তাদের সাময়িক চাকচিক্য দেখে দুঃখ পাওয়ার কারণ নাই। ওসব মরীচিকা। আড়ালে তাদেরও দুঃখ ভারী। কারো ক্ষতি করে, কাউকে পদানত করে কিংবা কারো চোখের জলের কারণ হয়ে চূড়ান্তভাবে কেউ কখনোই ভালো থাকতে পারে না। কোন অভিযোগ-অনুযোগ কিংবা আক্রমণ ছাড়াই দীর্ঘশ্বাস পাপের প্রায়শ্চিত্ত সুদ-আসলে তুলে লয়। যার হক অরক্ষিত হয়েছে, যার বিশ্বাসের অমর্যাদা হয়েছে তার মাল মালিকের দরবারে নালিশ জানায়। কারো অন্যায়ের ফর্দ যখন লম্বা ফিরিস্তি হয় তখন অধঃপতন ঘনিয়ে আসে। ঘোরতর বিপদের সামনে দাঁড়ায়! নিজেই নিজের বিনাশের কারণ হয়ে ওঠে। নিজেই নিজেকে অমর্যাদা-অপমানের পথে ঠেলে দেয়।

যারা ধৈর্য ধারণ করেছে তারা কামনার চেয়েও উত্তম ফলাফল লাভ করেছে। কিছু অভিযোগ, কতিপয় অপমান এবং কতক ব্যথা ইগনোর করতে হবে। তাৎক্ষণিক রিঅ্যাকশনে হিতে বিপরীত ফলাফল ঘটাতে পারে। প্রকৃতির যে ভারসাম্য নীতি তাতে যা বিনিয়োগ করবেন তা দ্বিগুণ হয়ে ফেরত আসবে। সেটা ভালো হলে ভালো পাবেন আর মন্দ হলে জীবনের ছন্দ কেটে দেবে। কারো জন্য শুভের প্রার্থনা করলে নিজের দিকেও সেটার কল্যাণ ফেরত আসবে। আবার কারো ক্ষতি করার, কাউকে বিপদে ফেলার কিংবা কারো এগিয়ে চলার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে সেসবের অকল্যাণও নিজের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। সবর, সবর এবং সবর। যেদিন গেছে সেদিন একেবারেই যায়নি।

যে সয়েছে সে অধিক পেয়েছে। এখনই চাই- এমন চিন্তকরা পরিণামে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভয়ানক হাইপার-টেনশনে ভোগে। চিরকাল অতৃপ্তির অসুখ বয়ে বেড়ায়। দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে না। প্রত্যেক দিনের বদলা নিতে আগত দিন সমাগত হবে। অতীতে যা ঠেলে যাচ্ছি ভবিষ্যতে সেটার প্রতিরূপ ফেরত আসবে। কাজেই সাধ্যমত উপকার করলে, স্বার্থহীন সৎ থাকলে এবং বিনয়ী মানুষেরা আগামী দিনগুলোতে অসুখী হবে না- এ গ্যারান্টি স্রষ্টার। যারা ক্ষতি করে তাদের বুকে আরও বড় ক্ষত হবে। যারা বিশ্বাস ভঙ্গ করবে তাদের বিশ্বাসের অমর্যাদা হবেই। কে শুরু করেছে এইটা দেখা জরুরি। চুপ থাকুন- আপনাকে লজ্জিত হতে হবে না। বিনীত হোন- অসম্মান আপনাকে ছুঁইবে না।

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top