আপনাকে ঠকিয়ে কেউ ভালো থাকতে চায়। আপনাকে খুঁটিয়েও কেউ ভালো থাকে। তবে ভাববার বিষয়, কাউকে ঠকিয়ে কেউ জিতে যেতে পারে? বিশ্বাস ভেঙ্গে কেউ মনজিলে মাকসাদে পৌঁছে? আপনি যে ঠকেছেন সেটা সাময়িকের। ক্ষতির ক্ষতের রিকোভারি হবে। চোখের জল মুছে আপনি আবার দাঁড়াবেন, হেসে উঠবেন। কিন্তু যে ঠকিয়ে গেলো? বিশ্বাস করুন, একটা জীবন তাকে হীনমন্যতায় ভুগতে হবে। সে যেভাবে আপনাকে ঠকিয়েছে সেভাবে তাকে কেউ ঠকিয়ে যায় কি-না, তার বিশ্বাস ভাঙ্গে কি-না সেই দুশ্চিন্তায় প্রত্যেক প্রহর তাকে তটস্থ থাকতে হবে। শাস্তির এরচেয়ে কঠোর রূপ আপনি দেখেছেন কখনো?
কেউ আপনাকে অপমান করে সুখ পায়, তাচ্ছিল্য করে তার বড়ত্ব জাহির করে। আপনার দুর্বলতায় সামর্থ্যের খোঁটা দিয়ে মন খারাপ করে দেয়? সহ্য করুন। কারো খোঁচানিতে যখন রিঅ্যাক্ট না করবেন তখন সে একা একাই হেরে বিপর্যস্ত হয়। আপনার ইগনোর করার ক্ষমতা পাল্টা প্রলেপ হিসেবে তাকে মনঃকষ্টে ভোগাবে। অপরের কথা শুনে মন খারাপ করে দিন খোয়ালে, আড়ালে চোখের জল জড়ালে সে ক্ষতি আপনার। একটু একটু করে উপেক্ষা করতে শিখুন। সুখের সময় যাদের পাবেন দুঃখের দিনে তারা আপনার না। কাজেই কারো কথায় দমে যাবেন না। আপনার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিবেন। নিজেকে নিয়ে ভাববেন। প্রিয়জনদের প্রায়োরিটি দিয়ে আগলে রাখবেন।
খুব কম অভিযোগ করবেন। পাননি বলে ভেঙ্গে পড়বেন না। এই দুনিয়ার সব আপনার হবে না। অনেককিছু আপনার হলেও সামলে রাখতে পারবেন না। আপনি ভাবছেন আপনার তাও ছেড়ে যাচ্ছে? যেতে দিন। কম আশা করবেন। স্বপ্ন এবং দুরাশার ভেদ ও ব্যাপ্তি বুঝবেন। নিজের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন অথচ পাননি এমন শোকও মানুষের কয়েক দণ্ডের অবসানের পরে আর থাকে না। জীবন কেটে যাবে। যা কিছুতে কল্যাণ ভাবছেন তার সবকিছু আপনার জন্য কল্যাণকর নাও হতে পারে। তিনি নিশ্চয়ই বেস্ট প্ল্যানার। স্রষ্টাতে সর্বদা আস্থা রাখুন। সাময়িকের অপ্রাপ্তিতে দায় ও বদনাম দিলে বারাকাহ সংকোচন করে দেওয়া হয়। কাউকে ঠকাবেন না। নিজের কাছে নিজে বিশ্বস্ত থাকবেন। জগত ও জীবন আপনাকে দু’হাত ভরে দিবে। মাঝে মাঝে বিস্মিত হবেন। এতোসব নেয়ামতের কোনটিকে অস্বীকার করবেন?
আমরা ক্ষুদ্রতর। নিজেকে যত ছোট ভাবা যাবে বড় হওয়ার পথ তত প্রশস্ত হবে। হম্বিতম্বি সারশূন্য। অহমিকা-দম্ভ এসব চিরস্থায়ী হয় না। দুর্বলতা থেকে যে যাত্রা সেটা পরিণামেও দুর্বলতা বয়ে আনে। মাঝখানের দিনগুলোতে ফেলা পদক্ষেপগুলোই মানুষকে মরার পরেও বাঁচিয়ে রাখে। একটা দুঃখও চিরস্থায়ী নয়। প্রত্যেকটা দিনের শেষ নতুন ভোরের আগমনীর অপেক্ষায় রাখে। কাজেই তোমাকে ঠকিয়ে নিঃশেষ করে দেওয়ার ক্ষমতা সসীমের কেউ রাখে না। তোমাকে যিনি দেখে রাখেন, যিনি দু’হাত ভরে দেন তিনি ন্যায়বিচারের প্রশ্নে সংশয়াতীত সৎ।কেউ ঠকিয়ে গেছে মানে তোমার জয়ের পথ স্পষ্ট হচ্ছে। কেউ কাঁদিয়ে দিলে হাসির রেখা প্রকাশ্য হচ্ছে। সবর করো।
উপকারের খোঁটা দিয়ে কাউকে ব্যথা দেওয়া ঠিক নয়। আবার উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধও থাকা উচিত। অপমানের আঘাত সাংঘাতিক বেদনার কারণ। কথা দিয়ে কাউকে বেদনা দেওয়া ঠিক নয়। জিহ্বার ব্যবহার সার্বিকের কল্যাণকামী হোক। মানুষের হৃদয়ে জায়গা পাওয়ার মত সৌভাগ্য আর কিছুতে নাই। তাইতো স্বার্থহীন ভালোবাসার পথ উন্মুক্ত রাখতে হবে। বিনিময়-হীনতার আশায় ভালোবাসতে হবে। বড়ত্ব-আমিত্বের অহমিকা দমিয়ে রেখে যোগ্যকে সম্মান দিতে হবে। প্রশংসা না করার যে ব্যাধি, ধন্যবাদ না বলার যে রোগ তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কাউকে ঠকানো এবং কারো মনঃকষ্টের কারণ না হয়ে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বিশ্বাস-ভরসায় জড়াজড়ি করে থাকতে হবে। জীবন পরম সুন্দর যদি নিষ্কলুষ মনের সৌন্দর্য অবারিত হয়।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।