ব্যক্তি জীবনে আমাদের প্রত্যেকের এক-দুজন কোচ আছে! নান্দনিক ভাষায় বললে, বিনে পয়সার বুদ্ধিদাতা! পুরুষের তুলনায় নারীদের এই কোচের সংখ্যা বেশি! স্বামী/স্ত্রী’র কথা শুনবে কি-না, বাবা-মায়ের কথা রাখবে কি-না, গুরুজনদের মানবে কি-না সেসব পরামর্শ এই কোচদের থেকে নিয়ে তারপর আপত্তি-বিপত্তি যা ঘটানোর তা ঘটানো হয়! সৌভাগ্যের হলেও সত্য যে, এই কোচেরা ভালো পরামর্শ দিয়েছে তার নজির ইতিহাসে বিরল! তবে সাগরেদদের কনসিভ করতে এই কোচেরা বড়ই সিদ্ধহস্ত! তাদের ফায়দা কী সে-সব আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু নয়!
প্রশ্নের শুরুটা নারীদের দিয়েই শুরু করি! কোন সমস্যায় পড়ে বুদ্ধিদাতার দ্বারস্থ হয়েছেন এবং বুদ্ধিদাতা বলেছে এখানে তো আপনার দোষ-এটা হয়েছে কখনো? হয়নি! অথচ আপনার কোন ভুল হয় না-সেই গোত্রের স্ত্রী-সাধু তো আপনি নন। আপনিও ভুল করেন, হয়তো পুরুষের চেয়ে বেশিই করেন! কিন্তু যার কাছে বুদ্ধি চেয়েছেন, যে আপনাকে পরামর্শ দেয় সে কখনোই আপনার দোষ দেখেনি বরং যার বিরুদ্ধে আপনার নালিশ সেটা সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের আগেই আপনার কোচ তাকে দণ্ড দিয়ে রেখেছেন! ইহজীবনে আর সুখী হতে পারবেন-তেমন সম্ভাবনা কি আপনি দেখেন? এমন কোচদের সোহবতে থাকলে আমি দেখি না!
এবার পুরুষের পালা! পুরুষরা সাধারণত দুঃখের কথা বলে বেড়ায় না! তবে কেউ কেউ যে বলে না সে কথা বলার সুযোগ নাই! পুরুষের কোচ বা বুদ্ধিদাতা সাধারণত বন্ধু-মহলের কেউ, সহকর্মী কিংবা বস গোত্রের হয়ে থাকে কোচ নিজেই যদি অশান্তিতে থাকে সে আপনাকে সৎপরামর্শ দিয়ে শান্তির পথে প্রেরণ করবে সেটা সরল বিশ্বাসে ভাববার মত বোকা কেন আপনি? একজন সৎ মানুষ, একজন সুখী মানুষ কেবল ভালো পরামর্শ দিতে পারে! উজির নিজেই যদি বিষাদগ্রস্ত হয় তবে সে রাজাকে স্বস্তির বুদ্ধি দিবে সে আশায় গুঁড়ে-বালি! কাজেই কাকে কোচ বানাচ্ছেন, সে কোন লেভেলের খেলোয়াড় সেটা আগেই ভেবে নিবেন!
যার বুদ্ধি-পরামর্শ আপনার ব্যক্তিগত শান্তি খোওয়ায়, সংসারে অশান্তি ছড়ায় কিংবা পারিবারিক বন্ধন ছোটায় তা একেবারে আপনজনের থেকে পেলেও মানবেন না। যে আপনার কল্যাণকামী নয় তার থেকে শুনতে কানে সুখ লাগে, স্বার্থ হাসিল হয় এমন বুদ্ধিও নিবেন না। যে আপনার কেউ নয়, উড়ে এসে জুড়ে বসে দরদ দেখানো পাখি সে আপনাকে স্বার্থ-ছাড়া সৎ পরামর্শ দেবে সেটা বেকুব হলে বিশ্বাস করতে পারেন। যারা একপক্ষীয় শুনে আপনাকে জিতিয়ে দিতে চায় তারা তো আপনাকে ফাঁদে ফেলে চিরতরে হারিয়ে দিতে চায়! যারা আপনজনের বিরুদ্ধে আপনাকে তাতিয়ে তোলে, যারা আপনার জেদ মাতিয়ে দেয় তাদের উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখুন! আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীর ছদ্মবরণে এরা আপনাকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়! লুকায়িত ফায়দা কায়দা করে আদায় করতে চায়!
জীবনে কোচ দরকার-এটা অস্বীকার করার উপায় নাই। তবে তারা আপনার গুণগুলো যে চোখে দেখবে সেই একই চোখে দোষগুলোও ধরবে! প্রশংসা করে তারা থেমে যাবে না বরং সমালোচনাও করবে। তার আপনাকে শোধরাতে চেষ্টা করবে এবং আপনাকে শান্তি-সুখের ঠিকানা দেবে। কিন্তু তারা যদি ছোট সমস্যাকে বড় করে তোলো, চোখের আড়ে আড়ে বারে বারে দেখে তবে সেখানে ঘাপলা আছে! বুদ্ধিদাতা যদি কুবুদ্ধি দেয় তবে নির্বোধ না হলে বোঝা-মাত্র নিজের পথ মাপতে হবে। সবাই আপনার মঙ্গল চায় না, হয়তো কেউ কেউ চায়। সেই কেউ কেউ-কে খুঁজে পেতে যে সতর্কতা থাকতে হয় সেটা যদি বোঝেন আছে তবে এই সংগ্রামের পথে পা বাড়াবেন! তবে নতুন করে আর কিছু হারানোর থাকবে না। আপনি যখন ভালো বুদ্ধি পাবেন তখন অন্যকেও আপনি ভালো বুদ্ধি দিতে পারবেন!
আপনি যদি কারো কোচ বা মেন্টর হন তবে কখনোই এমন পরামর্শ দেবেন না যা তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিচারক কেবল এজলাসে বসে আর মজলিসে বিচার করে-এমন ধারণা নিয়ে আছেন? সব সাজার জন্য নালিশ, বিচারক এবং সাক্ষীর দরকার হয় না। কারো সুখ ও অধিকার ছিনিয়ে নিলে তার বিচার সময় তার আপন ধর্মে করে! কাউকে নির্ঘুম রাখলে তার থেকে ঘুম কেড়ে লওয়াই প্রতিশোধ। সময়ের আবর্তনে এই কাজটুকু সুচারুভাবে প্রকৃতি করবেই। কারো অভিশাপ নিয়ে, কাউকে ঠকিয়ে কিংবা কারো চোখের জলের কারণ হয়ে কেউ ভালো আছে-এমন দৃষ্টান্ত অন্তত আপনি দেখাতে পারবেন না। যে ঠকিয়েছে সে ঠকেছে! ঠগের কাছেই কেবল ঠকানোর একটিমাত্র ফাঁদ নয় বরং আরও কোটি কোটি ফাঁদ পাতাই আছে।
রাজু আহমেদ। কলাম লেখক।
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।