আপনার দোষে ১২ মাসের মধ্যে সাড়ে ১২ মাস যে বউটির সাথে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকে তাকে অন্তত রোজার মাসে ১৩ পদের তরকারি রান্নার জন্য চাপ দিয়েন না! আপনার এটা খেতে ইচ্ছা করে, ওটা খেতে মন চায় বলে বলে তাকে মানসিক অস্বস্তিতে ফেলবেন না! নারীর অন্যের ভালোবাসা উপেক্ষা করার ক্ষমতা আছে কিন্তু কেউ কিছু খেতে চাইলে সেটা না দিয়ে সে স্বস্তি পায় না! নিশ্চয়ই আপনি হাতির মত খেতে পারবেন না! চোখের ক্ষুধা পেটের ক্ষুধার নিচের দিকে রাইখেন! পেটের ব্যাপ্তি তো দুই গ্লাস পানির কুয়োর আয়তনের! পাহাড় কেমনে খাবেন?
আমাদের মায়েদের রমজান মাসে কিছু পরিকল্পনা থাকে! আপনি ধর্মগ্রন্থ না ছুঁইলেও তারা সকল ব্যস্ততার মাঝেও এক-দুইবার কোরান খতমের চেষ্টা করে! রোজায় আপনার যে শরীরটি ক্লান্ত হয় তেমন একটি শরীর তাদেরও আছে! তাদের কষ্ট, তাদের সামর্থ্যের গুরুত্ব দেওয়ার আপনার সিয়ামেরই অংশ! আপনি যেমন আচরণ করবেন আপনার পরবর্তী বংশধর তেমন আচরণের কিছুটা চর্চা করবে! আপনি অর্ধেক মানুষ হলে তারা সেটার সিকিভাগ পাবে! কাজেই অমানুষ হইয়েন না!
রমজান হচ্ছে সবচেয়ে কম ভোগের মাস! অভাবীর দুঃখ উপলব্ধি করার মাস। মন ও শরীর শুদ্ধ করার মাস! তারপরেও যদি ইফতারের সময় থেকে সাহরির ওয়াক্ত পর্যন্ত ননস্টপ খেতে ইচ্ছা করে তবে বাজার থেকে কিনে খান অথবা নিজে করে খান! এটা করো, ওটা করো, কয়েক রকমের করো-এইসব বলার সময় সহমর্মিতার বোধকে চেপে রাখবেন না! নুন কম-বেশি হইলো বলে ঘর মাথায় লবেন না! উপোষের কালে মস্তিষ্ক সবারই একটু-আধটু গরম থাকে! না-কি?
রমজানে যা খাবেন তার হিসাব দেয়া লাগবে না-এটা ডাহা মিথ্যা কথা! দীর্ঘ দিবস পুণ্যের আশায় উপোষে কাটানোর দিনগুলোতে হারামের টাকার স্পর্শ ঘটাইয়েন না। সুদ-ঘুষের অর্থে যে খাদ্য বক্ষে যাবে তা অসুখ হয়ে ধরা দেবে। কাজেই হারাম থেকে দূরে অবস্থান করে অল্প আমল করলেও সেটা নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে। সত্য ও সততায় নিজেকে বদলে ফেলার জন্য রমজানের মত মোক্ষম সময় আর একটাও নাই!
সিয়ামের নিজের অধীনস্থ কর্মচারীদের যথাসম্ভব ছাড় দিতে পারলে সেটা মঙ্গল। মানসিক স্বস্তি সবচেয়ে বড় দোআ। যাদের দ্বারা কাজ করান, সকাল-সন্ধ্যা খাটান তাদের ওপর রমজানে রহম করলে রব বারাকাহ বাড়িয়ে দেবেন। কাউকে দু’টাকা বেশি দেওয়ার সাধ্য থাকলে বঞ্চিত করবেন না। একটু একটু সদাচার জীবনের উৎকর্ষতা বাড়িয়ে দেবে। মহৎকর্মের চর্চা ব্যক্তি পর্যায় থেকে হওয়া জরুরি। এখনই তো সময়!
একদিন ইয়াতিমদের সাথে, একদিন পথ-শিশুদের সাথে ইফতারি করার চেষ্টা করুন। বাকি দিনগুলো মসজিদে বা জমকালো পার্টিতে ইফতারি করার পরিবর্তে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইফতারি করুন। বাবা-মায়ের সাথে ইফতারি করার সৌভাগ্য আগামী রমজানে নাও থাকতে পারে। ইফতারি তৈরিতে সবাই মিলে কর্ত্রীকে সহায়তা করুন। মাঝে মাঝে তাকে বিশ্রাম দিয়ে আপনিই তৈরি করুন-সবকিছু। এটা খুব বেশি কঠিন কাজ নয়। তবে আগুনের তাপের পাশে দাঁড়িয়ে যারা রান্না করে তাদের অসম্মান কইরেন না!
নারী-পুরুষের ভেদাভেদে আমাদের মানসিকতাই জটিল স্তরে আছে! আমরা কাজ ভাগ করে দিয়েছি! এই ভেদ-রেখা ভেঙে দিয়ে মানবিক মুক্তির পথ সহজ করে ফেলুন। পরিবারের ছোটদেরও শেখাতে হবে, এগুলো সবার সম্মিলিত কাজ! এর চর্চা নবজের থেকেই শুরু করতে হবে। খাদ্য তৈরি ও পরিবেশনে কেবল মা বা নারী নির্ভরশীলতার অভ্যাসকে ভেঙে-চুরে দিতে হবে। আমরা তো পুণ্যই চাই-নাকি? তবে বদলাতে হবে মানসিকতায়, পরিবর্তন আনতে হবে আচরণে। সহমর্মিতা থাকতে হবে প্রত্যেক কাজে। তবেই তো এগিয়ে চলা সহজ হবে।
রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।