All Menu

সততাই এখন চ্যালেঞ্জিং

প্রতিকি চিত্র।

একজন সৎ মানুষকে দেখলে, সৎ মানুষের সাথে কথা বললে, সৎ মানুষের সংস্পর্শে থাকলে হৃদয় প্রশান্তিতে বিগলিত হয়। শ্রদ্ধায় মস্তিষ্ক অবনত হয়ে আসে। তারা আমার কেউ না অথচ কত আপন মনে হয়। সমাজ ও দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ মনে হয়। তাঁরা কোনদিন জানতেও পারবে না কেউ একজন তাদের সবসময়ের শুভাকাঙ্ক্ষী। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মাত্র কয়েকজন সৎ মানুষকেই চিনি। সততার মুখোশ পরিধান করে অবতীর্ণ হওয়া আর প্রকৃতপক্ষে সৎ হওয়া সম্পূর্ণভাবে বিপরীত বিষয়। সততা এমন এক সৌন্দর্যের পালক যা সবার জীবনের সাথে জড়ায় না। সবাই সৎ হতে পারে না। লোভ তাদেরকে ছাঁইয়ে পরিণত করে অথচ তার বারুদ হতে পারতো। মিথ্যার সাথে গলাগলি করে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার চেয়ে মিথ্যার অপনোদনকারী পরিচ্ছন্ন-কর্মী হওয়া বেশি সম্মানের।

সৎ মানুষের বন্ধু বেশি নাকি শত্রু? সমাজ যে গতিতে আগাচ্ছে, প্রজন্ম যে আদর্শ লালন করছে তাতে সৎ মানুষের বন্ধুর সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি চলে আসছে। অসৎ হওয়ার সুযোগ নাই বলে সৎ থাকা আর অসৎ হয়ে প্রচণ্ড ক্ষমতা দেখানো, অবৈধ কামাইয়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সৎভাবে দায়িত্ব পালন করা, সততায় পরিপূর্ণ সরল জীবনযাপন করা-এই দুয়ের মধ্যে বিশাল তফাৎ আছে। আমরা অনেকেই সুযোগের অভাবে সাধু। অথচ যিনি প্রকৃতপক্ষে সৎ তাঁর থেকে আলাদা সৌরভ ছড়ায়। তিনি কথা ও কাজে ভিন্নতা পোষেন না। দায়িত্ব পালনে আপন ও পরের সাথে আলাদা চরিত্র প্রদর্শন করতে জানেন না।

শুদ্ধাচারের আলাপ বাড়ছে। সত্য ও সততা কি বাড়ছে? ব্যক্তিজীবন থেকে তদূর্ধ্ব-সর্বত্রতেই যে ভাঙনের ঢেউ তাতে রাষ্ট্র বহুলভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কাগজ-কলমে যে টেকসই উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার স্লোগান চলছে তা নির্দিষ্ট মেয়াদের আগে-আগেই মেরামত করতে হচ্ছে। গচ্ছা যাচ্ছে প্রতিশ্রুতি! যে সমাজে অসততার জীবন চ্যালেঞ্জিং হওয়ার কথা ছিল সেখানে সততা বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। অসৎদের জোটের ব্যাপ্তি বড়, তাদের ক্ষমতার হাত অকল্পনীয় লম্বা! অভাবনীয় তাদের উত্থান-প্রদর্শন! তাদের কাছে জিম্মি অফিস-দফতর, বাজার-অন্দর! খাদ্যে ভেজাল থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের চিন্তায় ভেজাল-কোথায় খাঁটির খুঁটি শক্ত আছে? সব শৃঙ্খলা ভেঙে যাচ্ছে। নৈতিকতার অধঃপতনের তীব্র স্রোত বইছে। যে যেখান থেকে পারছে লুট করছে।

তবে যারা পাপের স্রোতেও বুক চিতিয়ে টিকে আছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধায় বারবার অবনত হতে ইচ্ছা করে। এরা দেশের জন্য, দশের জন্য দুর্লভ রত্ন। রাষ্ট্র এদেরকে যোগ্য সম্মান দিয়ে যত্ন করুক। একটা প্রতিষ্ঠানের মাথা সৎ হলে সেবাগ্রহীতাদের বহুবিধ জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারেন। সৎ জীবন আর অসৎ জীবনের যে পার্থক্য তা সম্পদ দিয়ে মাপা যাবে না; প্রশান্তি দিয়ে মাপতে হবে। ন্যায্য অধিকার বঞ্চিতের দীর্ঘশ্বাস ধ্বংসের দামামা নিয়ে অসৎ ব্যক্তির ভালো থাকার উপায় ধ্বংস করে এবং জালেমের সুখকে হত্যা করে। যে সমাজে অসৎ মানুষদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়, অর্থই সবকিছুর মাপকাঠি হয় সেই সমাজে অরাজকতা-বিশৃঙ্খলার মচ্ছব কায়েম হয়। তখন ক্ষতিগ্রস্তের বাইরে আর কেউ থাকে না। ক্ষতের খতিয়ান দীর্ঘ হয়।

মানবিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় অনুশাসন, প্রবল দেশাত্মবোধ সর্বোপরি বিবেকবোধ জাগ্রত না হলে মানুষ আর মানুষ থাকে না। ব্যক্তিজীবনে সততা না থাকলে তাকে ভালো মানুষ বলা যায় না। বক্তৃতায় নৈতিকতা, পোশাকে সাধুতা-এসব ধারণ করা কঠিন নয় কিন্তু লোভ-পাপ মুক্ত থেকে সৎভাবে বাঁচা, দায়িত্বপালন করা এবং সাধারণ জীবনযাপন করা এসব আজকাল সহজ নয়! সরলতার জন্য সাধনার দরকার হয়। সমাজের পচনশীলতার সংক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আদর্শবান হতে হয় এবং আত্মশক্তিতে দৃঢ়তা রাখতে হয়। কালোত্তীর্ণ হতে পারলে তবেই মানুষের মনে সম্মান-সশ্রদ্ধ আসন মেলে। পৃথিবী থেকে রোজ রোজ কত ক্ষমতা ঝরে যায়, কত নক্ষত্রের পতন হয়, কত মানুষ চলে যায়-তাদের আর ক’জন মানুষের চিত্তে সম্মানে জায়গা পায়? এজন্য লোভ-ভোগের অনেককিছু ত্যাগ করে তবেই মানুষ হতে হয়। যে মানুষেরা হবে সৎ ও নীতিবান মানুষ, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল মানুষ। এমন ক’জনকে দেখি? কমে যাচ্ছে ফুল। বিমুগ্ধ করার মত বকুল। যারে মানুষ বলা যায়।

রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top