All Menu

পছন্দ রুচি চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়

কিছু কিছু মানুষ তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা অন্যের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেয়! তাদের আশেপাশে ঘুরতে থাকা, সাথে চলতে থাকা, কথা বলতে থাকা ব্যক্তিদেরও যে নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ আছে তা বেমালুম ভুলো যায়! এরা নিজের সুখ দিয়ে অন্যের সুখ পরিমাপ করে! নিজের বাঁচতে হবে বলেই অন্যদের বাঁচিয়ে রাখে। যারা কারো ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য খোঁজে না, মান-অভিমানে ভাষা বোঝে না তাদের সাথে জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে! আবেগ-অনুভূতিতে আঘাত করা মানুষেরা আপন হয়ে ওঠে না!

এরা ইচ্ছামাফিক অবহেলা করে কিংবা এতো অধিক ভালোবাসে যা বাড়াবাড়ি রকমের ভালো! কারো মেজাজ-মর্জি না বুঝে, চাওয়া-পাওয়া না জেনে এমন এমন কথা বলে ফেলে বা এমন কাজ করে থাকে যা বিরক্তির সৃষ্টি করে। যারা না বোঝে চোখের ভাষা, না জানে মনের চাওয়া তাদের আচরণে বিরক্তির উদ্রেক করবেই। তাদের সঙ্গ অত্যাচার মনে হবে। এরা নিজের মনগড়া কড়কড়া কথা বলবে, যা নিজের স্বার্থকে সাপোর্ট করে তা যেকোনো উপায়ে সাধনে সচেষ্ট হবে।

মানুষ আসলে শান্তির সঙ্গ চায়। কথা বলার মানুষ চায়। তাকে বুঝবে, তার চাওয়াগুলো খুঁজবে, পছন্দ-অপছন্দকে সম্মান করবে, মাঝে মাঝে বিস্মিত করবে, একান্তে কাটানোর ক্ষণ বের করবে, কতিপয় সুখস্মৃতি পুঁজি করবে-মনের এই চাওয়াতেই জীবন যায়! কিছু মেলে, কিছু অধরাই রয়ে যায়! মন খারাপের দিনে ভরসা হবে, মেঘলা দিনে বৃষ্টি আনবে, রোদের দিনে ছায়া হবে-তবেই তো ভালোলাগা, অনুভব করা উপলক্ষ তৈরি হবে! যারা মন খারাপের মশলা নিয়ে ঘোরে তারা মনের মানুষ হয় না!

সবার পছন্দ-অপছন্দ একইরকম না! রুচিতেও ভিন্নতা আছে! নিজের পছন্দ সেরা, ভাবনা সঠিক, কথা খাঁটি-এমন বিশ্বাসে অন্যের সুখ যেন বিধ্বস্ত না করি! যা ভালো তাতেও কারো আপত্তি থাকতে পারে। একজনের বিশ্বাস, ভালোলাগা সরাসরি বদলে দেয়া ঠিক নয়। বাতিল করার চেষ্টাও উচিত নয়। বড়জোর বিতর্ক করতে পারি! আলোচনায় বলতে পারি ‘এভাবে হলে কেমন হয়!’ কিন্তু জোর করে ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়া উচিত হবে না; খাদ্য তো নয়ই!

আমাদের লক্ষ্য শান্তি-স্বস্তি! ভিন্নমতে থেকেও, ভিন্ন রুচিতে রেখেও সেটা বহাল রাখা সম্ভব। দরকার হচ্ছে পারস্পরিক সম্মান-শ্রদ্ধাবোধ! অন্যের বিশ্বাসকে স্বীকৃতি মানে এই নয় যে, সেটাও মেনে গেলাম! বরং প্রত্যেকের পছন্দ-ইচ্ছাকে স্বতন্ত্রতা দিয়ে মিলেমিশে থাকার নামই সংসার। যেখানে ত্যাগ-বিসর্জন থাকবে, অনুভব-অনুভূতি প্রাধান্য থাকবে এবং সহনশীলতা-সহানুভূতি রাখবে। ভালোবাসা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জন্ম হলেও সেটার জন্য আনুকূল্য প্রতিষ্ঠা করতে হয়। সেটার জন্য দরকার দ্বিপাক্ষিক ত্যাগ এবং সহাবস্থানের সাম্যনীতি!

ভয়ে বাধ্য হয়ে মেনে যাওয়ার মধ্যে আনুগত্য থাকে না। সেখানে সম্মানের ধারণা নস্যি। ভয় পাওয়া এবং ভালোবাসা পরস্পরের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। বাধ্য করা আর ভালোলাগা থেকে কবুল করা-দুইয়ের ব্যবধান বোধগম্য হলে তবেই মনের পথ সুগম হবে। দমিয়ে কাজ আদায় করা যায় কিন্তু ভালোলাগা বাঁচিয়ে রাখা যায় না বরং খুঁচিয়ে খুঁটিয়ে মনের দেশে ব্যথা জাগানোর অবস্থা ধারাবাহিক হয়! বুঝলে তবেই মানুষ ভজবে! ভিন্নতাতেই বৈচিত্র্য ভরা।

রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top