All Menu

অহেতুক যুক্তি দাঁড় করানো আচরণ

প্রতিকি চিত্র।

পরের যে ভুলে দুয়োধ্বনি দেই, সমালোচনায় মুখর হই সেই একই ভুল কিংবা আরও বড় ভুল যখন নিজে করি তখন সেটার স্বপক্ষে যুক্তি খাড়া করাই! আমি যে ভুল-সেটা না মেনে আরও ডজন ডজন ভুল প্রতিষ্ঠা করি! অথচ ভুল স্বীকার করলে জীবনের অর্ধেক সমস্যা মিটে যেত! দুঃখিত শোনালে-কত পর আপন হতে পারতো! কত ঘর আরো স্থায়িত্ব পেতো। মানুষ নিজের দোষ দেখে না, নিজের ভুল মানে না! নিজের পক্ষে এবং পরের বিপক্ষে এই যে অবস্থান এটাই মানুষকে দাম্ভিক বানায়! নিজের ফাঁদে নিজেকেই জব্দ করে!

যারা ভুল স্বীকার করতে পারে, অপরের কাছে ক্ষমা চাইতে জানে তারা কখনোই পরাজিত হয় না! নিজের ভুল বুঝতে পারার ক্ষমতা যাদের আছে, দুঃখিত হওয়ার বিবেক যাদের কাছে তারা সম্মানিত হয়। কিন্তু যারা সবক্ষেত্রে তাদের চিন্তাকে শুদ্ধ ভাবে, কাজকে সঠিক মনে করে, অপরের মতামতকে অগ্রাহ্য করে তাদের ভুলের সংখ্যা স্তূপাকৃতির হয়! একরোখা মনোভাব কত মেধাকে, কত কত সম্ভাবনাকে অপচয় করেছে তার ইয়ত্তা আছে? যে ভুল করে না সে মানুষের পর্যায়ে নাই!

একই কাজে যারা নিজের অংশ সঠিক ভাবে এবং পরের অংশে ত্রুটি দেখে তারা বন্ধুত্বের পথে হুমকি! সহকর্মী থেকে সহমর্মী হওয়ার পথের বাঁধা! ডবল-স্ট্যান্ডার্ড চরিত্রগুলো নিজের পক্ষে সব আলো দেখে এবং আশপাশের ভাগে অন্ধকার রাখে! যারা পাছে কথা কয় তারা সহাবস্থানে জন্য বিপর্যয় বয়ে আনে! কখনোই নত না হওয়া, অপরাধ করেও অপরাধ-বোধ কাজ না করা, নিজের দোষ অন্যের দিকে চাপিয়ে দেয়া-এসব ভালো মানুষের বৈশিষ্ট্য নয়। ভুল করা অপরাধ নয় কিন্তু ভুল করে সেটার স্বপক্ষে সাফাই গাওয়া রীতিমত অন্যায়! ঘোরতর পাপ। কেন জানি না-অধিকাংশই এ অন্যায়কে জীবনাচারের পোশাক বানিয়েছি!

নত হওয়া মানে হেরে যাওয়া নয় বরং প্রচণ্ড শক্তি সঞ্চয় করে উঠে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি ও চেষ্টা। ভুল না করে কেউ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি! সেই ছোটবেলায় বারবার বর্ণমালা চিনতে ভুল করেছিলাম বলে আজ মনের ভাব বলতে ও লিখতে পারি! অহেতুক যুক্তি দাঁড় করানো অপদার্থের আচরণ! ভুল করার পরে সেটা স্বীকার করলে নিশ্চয়ই জেল ফাঁস হয় না বরং ভবিষ্যতে সেই জাতীয় ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটার আত্ম-শপথ হয়। খোঁড়া যুক্তির জন্য বাচাল খেতাব জুটতে পারে কিন্তু ভুলের সংশোধনী হয় না! ভুল শোধরানোর একমাত্র উপায়, ‘ভুল করেছি’ স্বীকার করা এবং ক্ষমা-প্রার্থী হওয়া!

এই-যে বড়ত্বের বড়াইয়ে,, পদ ও পদবীর দোহাইয়ে, ক্ষমতা ও দম্ভের জেরে কেউ কেউ ভুল করেও অনুশোচনা করেন না সেটা কি তাদেরকে বড় করে? মোটেই না। হাসিমুখে অজ্ঞতার কথা বলুন, অভিজ্ঞতার ঘাটতির কথা বলুন, অসাবধানতার কথা বলুন। আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল-সেটিও বলুন। তবেই তো আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। ভুলের প্রায়শ্চিত্ত আপনাকে ছাড়বে কি-না সেটা পরের বিবেচ্য বিষয় কিন্তু আপনার যে স্বচ্ছতা, আপনার যে মহানুভবতা সেটা প্রতিষ্ঠিত হবে। ধমক দিয়ে থামিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু সত্যকে শিশুও বোঝে! সঠিক-বেঠিকের পার্থক্য পাগল/নির্বোধ ছাড়া সকলের থাকে! আপনার কথা ও আচরণের বিচার করে আপনি কেমন সেটার আন্দাজ লোকসমাজ রাখে!

ভুল অকপটে স্বীকার করুন, কার্পন্যহীন ভাবে ব্যর্থতার কথা বলুন। কখনোই ভুলের পক্ষে সাফাই গাইবেন না! ছোট্ট ছোট্ট এমন ভুল-যে ভুলের বড় কোন শাস্তি নাই সেগুলো যদি স্বীকার করতে ভুলে যান তবে বিশ্বাস-ভরসার স্থলে আপনার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে ওঠে। ছোট্ট ছোট্ট ব্যাপারে দুঃখিত হলে পরবর্তীতে আপনার বড় ভুলও ক্ষমার চোখে দেখা হয়! ভুল বুঝতে পারার সাথে সাথে ক্ষমা চাওয়া, বিনীত হওয়া-আপনকে আরও আপন করে তোলে! যদি উল্টো পথে চলি, উল্টো মুখে হাঁটি তবে অপছন্দের তকমা মেখে সারাজীবন দূরের মানুষ হয়ে কটিয়ে যেতে হবে!

রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top