ভালো ভালো কথা বলা এবং নিজের ভেতর থেকে ভালো হওয়ার মধ্যে তফাত আছে! ভালোত্ব প্রকাশের অভিনয় করা এবং ভালোর লালন করা মোটেই এককথা নয়! কাগজের ভালো, কলমের ভালো আর নিজে ভালো-এখানের ফারাকটুকু যারা ধরতে ও ধারণ করত পারে তারাই শুধু সত্যের জন মরতে পারে! এই যে নীতিকথা সেটার প্রতিফলন যদি নিজের মধ্যে না থাকে তবে চুপ থাকা উত্তম! রটানো আর ঘটানো এককথা নয়! কথার ভালো বদলে গিয়ে কাজের ভালো হলে সেটা উভয় পক্ষের জন্যই কল্যাণের। অন্যায়ও করবে এবং নীতিকথাও বলবে-এমন কলুষিত ডাবল-স্ট্যান্ডার্ড চরিত্র-ওয়ালাদের ডবল-ত্রিপল পাপ হয়! মুখ ও মনের মিল থাকা বড্ড জরুরি। কাজের পাপের মাফ হলেও কথার তাপ নিজেকে পোড়াতেই ফেরত আসবে!
নীতি-হীনতা কি শুধুই দুর্নীতি? মোটেই না। এর আরও অধিক ধরণ আছে। অসততার মতই অসত্য-অন্যায় সয়ে যাওয়াও অন্যায়। স্বার্থের জন্য সত্য লুকানো অপরাধও। খোদার সাথে আপনার যে চুক্তি তা ভঙ্গ হলে সে অপরাধ তিনি মাফ করতে পারেন কিন্তু কারো অধিকার কেড়ে নিলে, কাউকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করলে, ব্যক্তিগত ক্ষোভে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ নষ্ট করলে সে হক খোদা মাফ করবেন না! নীতিকথা বলে বলে যে-সব অন্যায় করা হবে সেটার জন্যই আগুনের কাঁচি তৈরি আছে! যেটা নিজের মধ্যে নাই সেটা অপরের থেকে আশা করা ঠিক নয়! সেটা কাউকে করতে বলা, মানতে বলাও উচিত নয়।
আমরা যতজনে ভালো কথা বলি, সত্য ও সততার পক্ষে লিখি সেই সংখ্যক মানুষ অন্তঃ-প্রাণ ভালো হলে এই সমাজ সেটার আলো দিয়ে করতো কি! কবেই তো সব অন্যায়-অনাচার ঘুচে যেত! সর্ষেতেও ভূত আছে! মুখের ভালোর সাথে যার অন্তরের ভালো না মিলবে, কথার সাথে যার বিশ্বাসের পার্থক্য থাকবে সে মানুষ নিরেট মন্দ মানুষের চেয়েও জঘন্য ও ঝুঁকির! ভালো ভালো কথা বলাদের, আলোর আড়াল হলে যাদের চরিত্র বদলে যায় তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব রাখা উচিত!
কথা ও কাজে যাদের যতবেশি অমিল তাদের থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ততবেশি প্রবল। এরা স্বভাবে স্বার্থপর অথচ কথায় সাধু! এরা মুখোশে দরবেশ অথচ চরিত্রে লম্পট, এরা বাইরে বুজুর্গ অথচ ভেতরে আগাগোড়া ভণ্ড! এদের থেকে যত দূরে থাকা যাবে মানুষের সম্পর্কে ততবেশি উচ্চ ধারণা থাকবে! যত কাছে যাবেন ঘৃণা বাড়তে থাকবে। ‘মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ’-তখন আর কবিগুরুর এই বয়ানের ওপর ঈমান রাখা যাবে না!
যাদের বাহিরের রূপের চেয়ে ভেতরে রূপ ভিন্ন/কুৎসিত তারা মানুষ হিসেবে ভয়ঙ্কর! হয়তো স্বভাবে জানোয়ার। এদের দ্বারা ক্ষতি ছাড়া উপকারের আশা নাই। তারা প্রয়োজনের সময় যে কাউকে মাথায় তুলতে পারে আবার স্বার্থ ফুরালে আছাড় মারতে একমুহূর্তও ভাবেও না, দেরীও করে না! এরা ইচ্ছামত মানুষের বিশ্বাস ভাঙে, ভরসার ডালপালা ধ্বংস করে! সম্পর্ক-দূরত্ব স্বার্থের বেড়াজালে বন্দি করে! এরা মানুষকে সম্মান করতে জানে না। এরা কায়দা করে ফায়দা আদায়ের কৌশলে যে কাউকে ব্যবহার করতে পারে। হেনস্তা করতে পারে, গালি শোনাতে পারে! আপন-পরের বিবেচনা এদের অভিধানে থাকে না। এরা মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে জানে না।
অন্তরের বিশ্বাস এবং মুখের কথা যেদিন মিলে যাবে সেদিনই মানুষ আসলে মানুষ হয়ে উঠবে। যে মানুষ ছদ্মবেশী সে আসলে দরবেশ হতে পারে না; সাজতে পারে! যে নিজেকে লুকায়, মিথ্যার ছায়া ফেলে, সে কোন বিচারেই ভালোমানুষের কাতারবন্দি নয়! চাটুকারদের থেকে উত্তমের তকমা পাওয়া এবং প্রকৃত-ভাবে উত্তম হওয়ার মাঝে ভেদ আছে। যেদিন এই দুইয়ের দূরত্ব কমে আসবে সেদিন মানুষেরা মানুষ হয়ে উঠবে! উন্নত মানুষ আর মহৎ আত্মার মধ্যে কিছু ফারাক থাকেই! নয়তো সুন্দরের সৌন্দর্য কোথায়! বড় পেশাজীবী এবং বড় মানুষের মধ্যে যে দূরত্ব তা মুছে গেলে আলোর ঝলকানি হবে। কথা, চরিত্র ও আচরণের আঙিনায় সেই সুদিনের প্রত্যাশায়! বাঁধভাঙা আলোর ঢেউ আসবেই!
রাজু আহমেদ।
প্রাবন্ধিক!
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।