হৃদয়কে প্রশান্তি দেয় এমন একজন মানুষ আপনার জীবন বদলে দিতে পারে। যে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আপনার অপারগতায় আঘাত করে না, আপনার দুর্বলতা নিয়ে হাসাহাসি করে না সেইতো বন্ধু। আপনার বিশ্বাসের অমর্যাদা না করা, তাকে ভরসা করতে পারার গুণ যারা নিজের মধ্যে পোষে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বে একজীবন উল্লাসে-সোল্লাসে কাটিয়ে দেয়া যায়। যে আপনার দুঃখ বুঝবে, সুখের সময় আপনার সম আনন্দ উৎসব করবে তাকেই তো বন্ধু বলে। যার অর্জন আপনারও অর্জন-এই ভাবনা বদ্ধমূল না হলে বন্ধুত্বের ভিত মজবুত হয় না।
প্রাত্যহিক জীবনে বন্ধুর সংখ্যা কমে গেছে। বিশ্বাস করা যায়, ভরসা ধরে রাখে এমন মানুষ কম তবে বিরল নয়। দাম্পত্য জীবনে সঙ্গী/সঙ্গিনী, পারিবারিক জীবনে বাবা/ছেলে, প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সহকর্মী/বস, সুখের জীবনে সহপাঠী/শিক্ষক-এদের যে কেউ বন্ধু হতে পারে। উত্তম বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত হতে পার। যার থেকে ক্ষতির আশঙ্কা নাই সেই তো বন্ধু। যে উপকার করে সে উপকারী বন্ধু আর যে নীরব থাকে সে নিষ্ক্রিয় বন্ধু। আমাদের জীবন রেখায় সবাই বন্ধু কেবল কাঠিকরা লোকগুলো ছাড়া। এই অল্প মানুষগুলোকে জীবন থেকে আলাদা করতে পারলে জীবন সুখের হবে।
সেই খেলার সাথীরা যারা শৈশব-কৈশোরের আনন্দ দিনের উৎসবে ভাগীদার ছিল তাদের বন্ধুত্বের ঋণ শোধ করা যায় না। চরম নিরাশার দিনে যারা পরম যত্ন দিয়ে আগলে রেখেছে, আশার কথা শুনিয়েছে, যৌবনের সেই মানুষগুলোকে অবহেলা করা ঠিক না। কেউ যখন সঙ্গ দেয়নি বার্ধক্যে, এড়িয়ে যাচ্ছে কৌশলে, সেই সময়ে যে প্রাণগুলো জীবনে নতুনত্বের সঞ্চার করেছে তাদের ঋণ ভুলে যাওয়া যায় না। যারা যারা আমাকে গন্তব্যে যেতে সাহায্য করেছে, যারা যারা মন্তব্য করে সঠিক পথ চিনিয়েছে তাদের সবার সাথে বন্ধুত্বের বন্ধন তৈরি হয়েছে। সেই চালক যিনি জীবন প্রবাহিত করে আবার শেষ প্রান্তও বাতলে দিয়েছেন তার সাথের বন্ধুত্ব অকৃত্রিম ও অনুপম না হলে চলে না।
আমরা যা তা বন্ধুত্বের যোগফল। এই যে হাসি-তামাশা কিংবা দুঃখ-বেদনা এর সর্বত্রই বন্ধুত্বের ছাপ আছে। কোথাও কোথাও বড় ভুলের মাফ আছে! যারা তিমির রজনীতে দেখিয়েছে পথ, খুশি করতে ডেকে এনেছে চাঁদ তাদের ঋণ কি করে ভোলা যায়? বন্ধুত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার সম্পর্ক নাই, নাই অবিশ্বাসের সুযোগ। বন্ধুত্বের খাতিরে বোহেমিয়ানগিরি চলে কিন্তু বজ্জাতি চলে না। বন্ধুত্বের কল্যাণেই নীরস জীবন সরস হয়। শুঁকিয়ে যাওয়া নদীতেও প্রাণ ফিরে আসে। স্থবির হওয়া জীবনে টেনে আনে চঞ্চলতা! বন্ধুত্ব এক অসীম ক্ষমতার নাম যা জীবনকে উপভোগ্য করে তোলে।
কৈশোরের বন্ধু এবং যৌবনের বন্ধুত্বের মাঝে তফাৎ আছে। শৈশবে বন্ধু হয় কিন্তু যৌবনের বন্ধু বাছাই করে সেদিকে ঝুঁকতে হয়। নয়তো ঝুঁকি অনিবার্য। বন্ধুত্বের মুখোশে থাকা ব্যক্তিবর্গ যদি অসৎ হয়, স্বার্থপর হয়, ধোঁকাবাজ হয় তবে জীবন বিষিয়ে দেবে। ধান্ধা-বাজের পাল্লায় পরলে মনে হবে এর চেয়ে একাকীত্বের জীবন সুন্দর। চরিত্রবান বন্ধু, নীতিবান সঙ্গী বিরল নয় তবে কষ্টিপাথরে যাচাই করে বরণ করতে হবে। মোটা-দাগে আপনার মধ্যে বন্ধুর প্রতিচ্ছবির প্রতিফলন হবে। সুতরাং আপনি কে এবং কি হতে চান সেটা আপনার বন্ধুরাই নির্ধারণ করবে। কাজেই বন্ধু গ্রহণে সাবধান হোন। বন্ধু অল্প হোক তবুও ভালো মানুষ হোক। বন্ধুত্বই যে জীবনের জীয়নকাঠি। সবকিছুর আগে নিজের ভালো হওয়া জরুরি।
রাজু আহমেদ।
প্রাবন্ধিক।
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।