All Menu

একাকীত্বের জীবন না হোক

জীবন যে গতিতে চলছে তাতে একদিন একা একা মরে যেতে হবে! হয়তো বিছানায় ঘুমের মধ্যে, নয়তো বাথরুমের মেঝেতে! কেউ বাসায় থাকবে না!শেষ পানিটুকুও মুখে দেয়ার কেউ থাকবে না। স্ট্রোকে কিংবা হার্ট এ্যাটাকে! ডাক্তারের কাছে নেয়ার লোক থাকবে না! মরে গেছি সেটা জানতে প্রতিবেশীরও একদিন-দুইদিন লাগবে। আত্মীয়-স্বজনদের আরও বেশি সময়! অনেকের মাঝে থেকেও একা থাকা এবং সম্পূর্ণভাবে একা থাকার মধ্যে তফাৎ আছে! যে একাকীত্বে ভোগে সেই কেবল উপলব্ধি করতে পারে।

মানুষ দিন দিন পরিবার থেকে-বিচ্ছিন্ন হচ্ছে! সচ্ছলদের সন্তানেরা বাবা-মাকে একা রেখে বিদেশে থাকছে! চাকুরীজীবীদের বাবা-মা গ্রামে থাকছে!কখনো কখনো ঈদ-কোরবানিতে দেখা হয়। কালেভদ্রে ফোনে ফোনে চিকিৎসা! অক্ষম সময়ে কথা বলার লোক নাই, কিছু প্রয়োজন হলে এনে দেয়ার মানুষ নাই! অসুখে ওষুধ কিনে দেয়ার বাহক নাই! খোদার ইচ্ছার ওপর ভর করে অসীমতায় তাকিয়ে থাকা। পরিবারগুলো ক্রমশ ছোট হচ্ছে! চাচা-ফুফুদের সাথে মতের বৈপরীত্য বাড়ছে! মামা-খালাদের সাথে দূরত্ব বাড়ছে!

চাকুরীজীবীরা সন্তান-সংসার রেখে দূরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে! কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষিপ্ত থাকছে। এই যে একা থাকা, কথা বলার মানুষ না থাকা, দেখার মানুষ না থাকা এটা চিন্তার জগতকে যেভাবে দুশ্চিন্তার দিকে সংক্রমিত করছে তেমনি শারীরিক অসুস্থতা এবং অকালে বার্ধক্য প্রবল করছে। একা থাকা মানুষদের চিন্তাভাবনা যেভাবে কলুষিত হতে পারে, নানাবিধ দুর্ভাবনা যেভাবে চেপে ধরতে পারে তারচেয়েও অধিক হারে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে!

একটা বয়সের পরে মানুষের পাহারাদার দরকার হয়, কথা বলার, একসাথে খাওয়ার, আড্ডা দেয়ার জন্য সঙ্গী-সাথীর প্রয়োজন হয়। সেই সময়টাতে যদি মানুষ একা থাকতে বাধ্য হয় তখন বিভিন্ন রোগ এসে সঙ্গ দিতে শুরু করে। যে মানুষ একা একা বাস করে তার ঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ হয় না, নিয়মিত ঘুম হয় না। ঘুমুতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে জাগাও নিয়মমাফিক হয় না। কাজেই মৃত্যু এড়ানো-যোগ্য অসুস্থতায়ও কোন নার্সিং না পেয়ে মৃত্যুর সাথে সাক্ষাৎ হয়। অন্তত ডাক্তারের সাথে শেষ দেখাটাও হয় না।

পরিবারকে সময় দিতে হবে। মৃত্যু পর্যন্ত যাতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হেসে-খেলে আনন্দ-ফুর্তিতে কাটানো যায় তার বন্দোবস্ত করতেই হবে। একা থাকা, কথা জমিয়ে রাখা এসব বিভিন্নভাবে মরনব্যাধি আমন্ত্রণ করে। মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পরিবারের সঙ্গে থাকা জরুরি। বিচ্ছিন্নভাবে সময় কাটালে নানাবিধ জটিলতা ও অসঙ্গতি দৃশ্যমান হয়। তখন আয়ু কমে আসে! অল্পবয়সে রোগে-শোকে জাপটে ধরে। মানসিকতার যে বৈকল্যের সূত্রপাত হয় তা ঘুচতে মরণ লাগে!

ব্যস্ততার অজুহাতে, পয়সার লোভে, স্বার্থের যোগে পরিবারকে যাতে ঠকানো না হয়! যে ঠক তাদের সয়ে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল সেই ঠক এমন সময়ে ক্ষতিপূরণ হয়ে ফিরতে পারে যখন অক্ষমতার সময়। বয়সের নির্দিষ্ট ফ্রেমে শারীরিক তেজ হ্রাস পায়, দুর্বলতা ছায়া ফেলে। তখন যদি ভরসার হাত না থাকে, বিশ্বাসের ছায়া না পড়ে তবে জীবন দুর্বিষহ হবে। দুঃখ-কষ্টের বাউন্ডারি অসীম হবে। একদিন ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর খবর হবে অথচ মুখে পানি দেয়ার কেউ থাকবে না। বাথরুমে অথবা মেঝেতে হোঁচট খেয়ে মরণ হবে যে সময়কে কেউ জানবে না! বুকের ব্যথায় দুমড়ে-মুচড়ে যাবে যে ডাক্তার এবং ওষুধ আনার মানুষ থাকবে না। এমন মৃত্যু আজকাল খুব বাড়ছে। চারপাশে অহরহ হচ্ছে।

পরিবার, পরিবার এবং পরিবার-এর কোন বিকল্প নাই। এখানে সময় বিনিয়োগ করুন। যত্ন হয়ে ফেরত আসবে। আজ হয়তো শরীর-মনের তেজে বাহাদুরি চলছে কিন্তু অসহায়ত্বের সময় তো এখান থেকে একটুখানি দূরেই জমছে। যারা ধরবে হাত এবং যারা রাখবে খোঁজ তাদের ব্যাপারে অবুঝ হওয়া ঠিক নয়। সুস্থ থাকার জন্য, সেবার পাওয়ার জন্য আজ-কাল কিছু পাওনা করুন। যত্ন করে ঋণী করুন। তবেই গল্প বলার মানুষ পাবেন। ভরসা করার লাঠি পাবেন। একা বাঁচা কঠিন। একাকী মৃত্যুবরণ আরও কঠিন। অসহায়ত্বের সময় জীবনে না আসুক। সবার সাথে হাসি-কান্নায় সময় কাটুক।

রাজু আহমেদ।
কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top