All Menu

উপকার শোধ হয় কিন্তু ঋণ শোধ হয় না

যারা বিরত থাকতে পারত কিন্তু আপনার উপকার করেছিল, তাদের উপকার শোধ করতে পারবেন কিন্তু ঋণ শোধ হবে না। যারা দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল, বিপদের দিনে ভরসা হয়েছিল তাদের সেই সময়ের মূল্য দিতে পারবেন? সেই আন্তরিকতার শোধ দিতে পারবেন? যারা আপনার জন্য বাড়তি সময় ভেবেছিল, ঝড়ঝাপটা সয়েছিল, পরের অনেক কথা শুনেছিল তাদেরকে কখনোই অসম্মান করা ঠিক নয়। যখন অনেক আপন মানুষের সাপোর্ট পাননি অথচ খুব দরকার ছিল তখন আপনাকে যারা পরামর্শ দিয়েছিল, পাশে ছিল, টাকা ধার দিয়েছিল এবং আপনার জন্য ভেবেছিল সেই তাদের ঋণ পরিশোধ করা যায় না।

কৃতজ্ঞ থাকুন। সমস্যা ফুঁড়িয়ে গেলে যারা অকৃতজ্ঞ হয় সময় তাদের চিনে রাখে। তারচেয়েও বড় কথা, যারা মানুষের উপকার করতে ভালোবাসে তারা অকৃতজ্ঞদের থেকে আঘাত পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে। অ-কৃতঘ্ন তো পশুরাও হয় না; মানুষের অভিধানে এ দোষটি থাকাই উচিত নয়। অর্থ থাকলেই কারো উপকার করা যায় না। উপকার করতে মন লাগে। পরের জন্য যারা বাড়তি যন্ত্রণা সয়, মনে খুলে পাশে দাঁড়ায় তাদেরকে প্রাপ্য ধন্যবাদটুকু না দিলে সম্পর্কের অসম্মান হয়। জীবনের গলিপথে যারা যেখানে যতটুকু উপকারে আসবে তাদেরকে হাসিমুখে ধন্যবাদ জানান। কারো উপকার করা কারো দায় নয় বড় সদগুন যা চর্চা করা বাধ্যতামূলক নয়। সুতরাং যারা উপকারের মত মহৎকর্ম করে তাদেরকে কখনোই ব্যথা দেয়া ঠিক নয়। প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ার পরে অকৃতজ্ঞের মত আচরণ করা উচিত নয়।

উপকারী বন্ধু, সহকর্মী এবং সঙ্গী পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। নিজের খেয়ে যারা বনের মোষ তাড়ায় তাদের যন্ত্রণা কেবল তারাই জানে। অথচ তাদের থেকে উপকৃত হয়ে যখন সামান্য সৌজন্য-বোধটুকুও না দেখান তখন আপনার শিক্ষার দীনতা প্রকাশ পায়। কোন মানুষ তার নিজের অবস্থানে সম্যকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কারো না কারো থেকে উপকৃত না হলে মানুষের পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়-জীবনের কাজগুলো মসৃণ হয় না। সুতরাং যে যেখানের হেল্পিং হ্যান্ড, যার থেকে যেটুকু সহযোগিতা আসে তাদের কাছে ততটুকু কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। ধন্যবাদ দিলে আন্তরিকতা বাড়ে। প্রশ্ন উঠতে পারে, যে কাজ মজুরি দিয়ে করাই সেখানে কৃতজ্ঞ কেন থাকবো? মজুরি মালিক-শ্রমিকের বাহ্যিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে কিন্তু আত্মিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কৃতজ্ঞাবোধের বিকল্প নাই।

এই ধরুন, যারা স্বেচ্ছায় রক্ত দেয়, বিভিন্ন ভলান্টিয়ারমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ না থাকলে মানবতাই ভূলুণ্ঠিত হবে। কত বিপন্ন জীবন কত মানুষের বিনামূল্যের রক্তে রক্ষা পেয়েছে, কত মানুষকে অজানা মানুষ ভয়াবহ বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে, সেসবের কি ইয়ত্তা আছে? যখন আর্থিকভাবে খুব ঠেকেছেন, ধার চেয়ে অনেক আপনজনের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন তখন যে মানুষটি আপনার সম্মান রক্ষায় স্বার্থ-হীনভাবে অর্থ দিয়েছে, সুযোগ দিয়েছে তার এই উপকারকে কোন সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করবেন? ধারের কাছে ফেরত দিলে উপকার শোধ হবে কিন্তু ঋণ কি শোধ হবে? ধন্যবাদ দিন, বিনীত থাকুন। মানুষ মানুষের জন্য-সেই প্রত্যয় থেকে কেউ যাতে বঞ্চিত না হয়।

রাজু আহমেদ।
কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top