পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা আমানতের সংকীর্ণ রূপ। অর্থের খেয়ানত না করা আমানতের মাঝারি রূপ! আমানতে বিস্তৃত পরিধির কথা শুনবেন না? আপনার ওপর অর্পিত দায়িত্বগুলো যত্নের সাথে, বিশ্বস্ততার সাথে, সৎ ও নীতিবানের ভূমিকায় বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করাই আমানত রক্ষার শ্রেষ্ঠ রূপ।
মানুষ হিসেবে আমানতদার হলে আপনি বিশ্বস্ত না হয়ে পারবেন না। কারো অর্থ আত্মসাৎ করতে বিবেকের বাধায় পড়বেন। অর্থ ধার নিয়ে ফেরত না দিয়ে পারবেন না! কারো দ্বারা উপকৃত হয়ে তার প্রতি অকৃতজ্ঞ হতে পারবেন না। আপনার ওপর অর্পিত কাজগুলো সমর্পণ না করে পারেন না! যে কাজ আপনার রুটি-রুজির সংস্থান করে সেইখানে ফাঁকি দেয়া, ভেজাল মেশানো-এসব আপনাকে মোনাফেক সাব্যস্ত করে।
কারো গোপন কথা বাজারে তুললে সেটা আমানতে খেয়ানত। কারো দুর্বলতা জেনে সেটার সুযোগ নিলে নিশ্চয় আপনার চরিত্র প্রশংসা প্রাপ্তির পর্যায়ে নাই। যারা সুযোগসন্ধানী এরা ব্যক্তিগত সম্পর্কে, সামাজিক পরিবেশে এবং রাষ্ট্রীয় গণ্ডিতে বড় রকমের হুমকি। যারা নিজের স্বার্থকে সবকিছুর উপরে ঠাঁই দেয় তারা অপরের মনে পাই পয়সার দাম পায় না। একজন আমানতদারের আমানত সর্বত্র রক্ষা পায়। স্রষ্টার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সে ঠকে না। প্রত্যেক পুঁজির বিনিয়োগ যেমন মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে তেমনি চরিত্রের আমানত সুখের গ্যারান্টার।
ব্যক্তি যদি সৎ থাকে, রীতির ক্ষেত্রে নীতি রাখে, দায়িত্বটুকু ঠিকঠাক পালন করে তবে বাহ্যিক অশুভ ধাক্কাধাক্কি করতে পারে কিন্তু টলাতে পারে না। রাষ্ট্র কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব ব্যক্তির কাছে রাষ্ট্রের আমানত। এই আমানতের খেয়ানত করে এই আলোতে ফাঁকফোকর গলিয়ে মুক্তি মিলতে পারে কিন্তু কোনো যুক্তি মহান বিচারপতির মুখোমুখি হওয়ার দিন মুক্তি মিলবে না। সবাই সবাইকে ঠকানোর সিল-সিলা চালু হলে মনুষ্য-বোধ ভূলুণ্ঠিত হবে। বিশৃঙ্খলা নেতৃত্ব দেবে!
আমানতের প্রত্যেক স্তর সুরক্ষিত থাকুক। কাউকে গোপনে ঠকালে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি-গোষ্ঠী হয়তো জানলো না কিন্তু বিবেকে যে ক্ষতের সৃষ্টি হলো সেটার প্রতিশোধ প্রকৃতি গ্রহণ করবেই। পাল্টা ঢেউয়ে ক্ষতির বিনিময় ক্ষতিই আনবে। মানুষের সাথে শত্রুতা বাড়িয়ে, সুন্দর-শুভের বিরোধিতা করে পরিণাম কি? চোরাগলি দিয়ে কেউ কি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারে? কারো ক্ষতি করে যদি অন্তরে সুখ অনুভব হয়, দায়িত্বে ফাঁকি দিয়ে যদি জিতে গেছি’র তৃপ্তি অনুভূত হয় তবে ক্ষমা প্রার্থনা করা দরকার। কেননা এসব মনের পচন ধরতে শুরু হয়েছে-সেটার লক্ষণ।
অপরের প্রয়োজনের নয় বরং নিজের স্বার্থেই উত্তম আমানতদার হতে হবে! কেউ অন্যকে ঠকিয়ে জিততে পারে না। ঠগির চূড়ান্ত ঠক নিজের দিকেই প্রত্যাবর্তন করে। যে অবস্থানেই থাকা হোক, কতিপয় আমানত সবার সাথেই বইছে। সঙ্গীর আমানত, সঙ্গের আমানত কিংবা রিজিকের আমানত! রবের রাখা আমানত কোন সাহসে খেয়ানত করি? বিবেকের কৈফিয়ত হচ্ছে বৃহত্তর বিচারালয়। বোধবুদ্ধি পশুদের চেয়ে উন্নত হোক। নিজের ভালো পাগলেও বোঝে-সেই সূত্রে সুখের জন্য, সুন্দরের জন্য এবং শুভের জন্য আমাদের কথা, কাজ ও চিন্তা বিবেক প্রসূত হোক। কারো কাছে দায় না রেখে দোয়ায় থাকার সুযোগ হাতছাড়া না হোক।
রাজু আহমেদ।
কলাম লেখক।
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।