All Menu

প্রজন্মের ঋণ আছে

এই প্রজন্মের একটা বড় ব্যর্থতা আছে! নীতি-হীনতার এমন কোন শাখা নাই যাতে তার বিচরণ নাই এমন কেউ যদি নীতিকথা বলে, ওয়াজ-নসিহত করে তখন তারে বাম পায়ের জুতা খুলে দু’টো আঘাত করতে না পারার চেয়ে বড় কোন ব্যর্থতা নাই! ঘুষ-দুর্নীতির মচ্ছবে যারা তাদের বিচরণ ক্ষেত্রকে কচ্ছপ গতি দিয়েছে তাদের আঘাত না করলে বিবেকের ভবিষ্যৎ বলে আর কিছু থাকবে না!

নীতি-নৈতিকতার ধার না ধরে যারা আখের গুছিয়েছে তাদেরকে ভর সমাজে ন্যাংটো না করলো এই সমাজ-সংসার মানুষের বাসযোগ্য থাকবে না! যাদের লোভের ক্ষুধা তাদেরকে দমাতে না পারলে তাদের ক্ষমতায় পেটের ক্ষুধার্তরা কাহিল হবে। পাপ করেও যার গলা বড়, দায়িত্ব পালন না করেও যার প্রচার বেশি, ঘুষ গ্রহণ করেও যার অট্টহাসি তাকে দমাতে না পারলে, তার নীতিকথা থামাতে না পারলে সমাজে মানুষের বিচরণ ক্ষেত্র কমে যাবে!

যারা অর্থের কাছে বিবেক বিক্রি করে, ঘুষ দিতে বাধ্য করে, কর্মকালে ফাঁকি মারে তাদেরকে বয়কট করা দরকার। ঘৃণার সবটুকু শক্তি দিয়ে তাদেরকে স্মরণ করা না হলে নির্দোষকেও কৈফিয়ত দিতে হবে! অন্যায়কারী এবং অন্যায়ের প্রশ্রয়দানকারীর পাপের মধ্যে খুব বেশি তফাৎ নাই। অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিকভাবে সোচ্চার না হলে সব কিছু ধ্বংস হবে। যারা অপকর্মের বংশ বাড়ায় তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে, ‘তোমরা ক্ষমতার জোরে যা ইচ্ছা করতে পার কিন্তু ক্ষমতার বাইরে গেলে লাথি-গুতায় পাপ ফেরত পাবে! ইতিহাস এভাবেই পাল্টা প্রতিদান দিয়েছে!

অন্যায়কারী শেষ পর্যন্ত শান্তিতে থাকতে পারে না! কোথাও না কোথাও ঠিক আটকায়! সীমাহীন ভোগে! ঘুষখোর, অপরাধ-কারক আর কোথাও হোক বা না হোক তবে পারিবারিক অশান্তিতে ভোগে! যে সংসার মানুষের দীর্ঘশ্বাসে টাকা ঢোকে, খাবারের সাথে হারামের সাক্ষাৎ ঘটে, কাউকে আঘাত করার রক্তাক্ত হাত ফেরে সেখানে দাম্পত্যের বিবাদ তুঙ্গে থাকে! এক ছাদের তলে দু’জন দু’মেরুতে পাশাপাশি তবু একলা থাকে! সন্তান কথা শোনে না! ছেলে-মেয়ে নেশার আসক্তিতে ভোগে! যে অর্থে মানুষের অধিকার হারানোর স্পর্শ তা শান্তির ঠিকানা দিতে ব্যর্থ হয়!

বদমাশ-জোচ্চোরের একদল নীতিবাক্যকে সাইনবোর্ড বানিয়েছে! ভণ্ডামিকে বানিয়েছে ব্যবসা। মানুষকে ঠকানোর জন্য ভদ্রতার, সততার যে মুখোশ আঁকড়ে ধরেছে তা সহজ-সরল মানুষকে বিব্রত করছে! কেউ যখন মিথ্যা বলে, অপরাধ করতে করতে নীতিকথা বলো তখন জিহ্বায় দাগ দিয়ে পারলে পরম শোধ হত! যে ঘুষ নিয়ে ধরা খায় তার পিঠে ঘুষখোর সেঁটে দিতে পারলে এই প্রজন্মের ব্যর্থতা ঘুচত! রাজনীতির নামে মানুষ খুনিদের প্রকাশ্যে বিচার দেখতে পেলে লোভ ঘুচত!

যারা দেশটা বিক্রি করে, বিভিন্ন চেতনা দিয়ে জনগণকে ঠকায়, চেয়ারের অপব্যবহার করে তাদের শহর-নগরের প্রবেশদ্বারে প্রকাশ্যভাবে থুথু দিতে পারলে তবে প্রজন্মের দায় কিছুটা হলেও কমতো! নীতি-হীন মানুষগুলোকে সমাজের অন্ধকারে নিক্ষেপ করা তরুণ-যুবাদের দায়িত্ব। যৌবনের শূন্যতা যেন ঘুচানো যায়!যারা মিথ্যা প্রলোভন দেখায়, মাইকে মোটা মোটা কণ্ঠে সততার কথা বলে অথচ তারা চরম অসৎ তাদেরকে দমিয়ে দিতে না পারলে এই তারুণ্যের কোন মূল্য নাই।

পায়ের জুতা তরুণের হাত হয়ে অসৎ মানুষের পিঠে না ওঠা পর্যন্ত এই জাতির আসল উন্নতি ও পরিবর্তন ঘটবে না। আমাদের রাস্তাঘাটে পরিবর্তন হয়েছে বটে কিন্তু সৎ চরিত্রের অধঃপতন হয়েছে জঘন্য আঙ্গিকে। সবকিছু ভেঙে চুরে গড়ার দায়িত্ব তরুণ-তরুণীকেই নিতে হবে। এই প্রজন্মের এই দেশের কাছে অনেক ঋণ আছে। কিছু তো শোধ দিতেই হবে! অন্যায়-অপরাধের প্রতিবাদেই প্রথম ফুট স্টেপ পড়ুক।

রাজু আহমেদ।
কলাম লেখক
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top