All Menu

সব পেশার শেষ পরিণতি রাজনীতি

সাদিক স্যার, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, সাবেক বিচারপতি অমুক, সাবেক আমলা তমুক, সাবেক পুলিশ-সেনা কর্মকর্তা, নায়ক-নায়িকার দল, গায়ক-গায়িকার বহর, ক্রিকেটার-ফুটবলার, ডাক্তার সাহেব এমনকি শিক্ষকদের কেউ কেউ শেষ বয়সে এসে নমিনেশন কেনেন এবং এমপি হতে চান! ক্যারিয়ারের শেষে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাছাই করা আদৌ দোষের কিছু নয়, নিষিদ্ধও নয় কিন্তু সময় হিসেবে কি এটা সঠিক সময়?
একজন মাঠের রাজনীতিবিদ রাজনীতি সম্পর্কে যা জানেন, যত ধরনের চাল খেলতে পারেন, জনগণকে যেভাবে সম্পৃক্ত করতে পারেন সেভাবে উল্লেখিতরা পারেন? পারার কথা নয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা এটাও না। আরও বড় সমস্যা আছে!
একজন পেশাজীবী অবসরের পর এক দুইবার এমপি হতে পারেন! রাজনৈতিক দলগুলো তাদেরকে ইমেজ বাড়ানোর জন্য নমিনেশন দিলেও তাদের ওপর মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছে এমন নজির বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দু’একটি। যাও দু’একজন পেয়েছিল তারা সফলভাবে বিফল হয়ে পরে আর নমিনেশন পর্যন্ত পায়নি। তারা বিভিন্ন সেক্টরের উপদেষ্টা হিসেবে যতোটা পরাঙ্গম মন্ত্রী হিসেবে জনগণ ও মিডিয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণে ততোটা দক্ষ নন। সে কারণেই ব্যক্তিগত প্রোফাইল যত ভারীই হোক তাদেরকে সংসদ সদস্য পরিচয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়! সংসদীয় রাজনীতিতে আরও কিছু সম্মানের পদ-পদবী আছে।
যদিও রাজনীতির জন্য আলাদা কোন নীতি নাই তবুও রাজনীতির মাঠকে পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ, ত্যাগী রাজনীতিবিদের কাছেই রাখা উচিত! একজন অন্য-পেশার মানুষ যিনি জীবনে একটা মামলাও খাননি, থানা-আদালতের মুখোমুখি হননি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়েননি তিনি এলাকায় গিয়ে এমপি হতে পারেন কিন্তু দলের মধ্যকার বিপক্ষদের সাথে এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের সাথে কৌশলে কুলিয়ে উঠবেন না। ফলাফলে তাঁর নির্বাচিত আসনটি উন্নয়নের গতিধারা থেকে বঞ্চিত হবে!
যারা রাজনীতি করেন তারা সার্বজনীন থাকেন না! একটা নির্দিষ্ট দলের ব্যানার বহন করার কারণে আরেকটি পক্ষ বিষোদগার করতে, এড়িয়ে চলতে, অপপ্রচার চালাতে শুরু করে। অথচ রাষ্ট্রের স্বার্থে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের মত নিরপেক্ষ শিক্ষক বড্ড দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে যে রাজনীতি, যে দলাদলি তা আকাঙ্ক্ষিত নয়। আদালত পাড়ায় দলের ব্যানার থাকায় কেউ সুবিধা পায় আবার কেউ বঞ্চিত হওয়ার যে রীতি তা বন্ধ হওয়া দরকার।
ছাত্রজীবন থেকে যারা রাজনীতি করেছে, যারা দলের সাথে ছিল, যারা কর্মীদের সুখ দুঃখ দেখেছে, যারা রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি, যাদের মাথায় মামলার পর মামলা ছিল, বিরোধী পক্ষের আঘাত যাদের শরীর বহন করে তাদেরকে রাজনীতির লড়াইয়ে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। যারা রাজনীতির ‘র” বোঝে না তাদেরকে রাজনীতিতে সুযোগ দিলে স্থানীয় রাজনীতিতে দলীয় কোন্দল আরও বাড়বে।
সব পেশাজীবীদের শেষ পরিণতিতে রাজনীতির পদ-পদবি পাওয়ার বাসনা, সাংসদ হওয়ার দৌড় লক্ষণ হিসেবে শুভলক্ষণ নয়। এমন মানসিকতা সেবা প্রদানের জীবনে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার প্রশ্ন উঠতে পারে। দপ্তর সামলানো আর কর্মী-সমর্থক সামলানোর মধ্যে যোজন যোজন তফাৎ। হুকুম দিয়ে, কাগজের ভয় দেখিয়ে অধীনদের দমিয়ে রাখা সহজ কিন্তু বিরোধী-পক্ষের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে হবে, দু’চার গা হজম করতেও হতে পারে-সেই সাহস, সম্মানের সেই ঠুনকো অবস্থা কি সাবেক শিক্ষক-আমলার আছে? দু’চার ডজন মামলায় হাজিরা দেয়ার শক্তি, জেল-জরিমানায় কাটানোর ধৈর্য তাদের আছে? যদি থাকে তবে বেশ। রাজনীতিতে নতুন-ধারা সূচিত হবে। কিন্তু যদি না থাকে তবে বৃহৎ-গোষ্ঠী তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হবে।
সবাই আসলে ক্ষমতার মধ্যে ঢুকতে চায়। এর একমাত্র এবং শুধুমাত্র পথ নির্বাচন। এখানে ক্ষমতার অপব্যবহার করা যায় আবার ক্ষমতার ব্যবহারও করা যায়! রাজনীতি ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হলে কি পরিণতি হয় তার কিছুটা আলামত রাষ্ট্র দেখেছ। একজন পোড়-খাওয়া রাজনীতিবিদ একটু হলেও জনগণের মঙ্গলের কথা ভাবেন। জনতার কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখেন। যারা শৈশব-কৈশোর থেকে দলের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম সয়েছেন তারা জনতার কাছাকাছি আসতে পারেন। ধৈর্য ধরে সুখ দুঃখের কথা শুনতে পারেন। এসি রুম থেকে রাজনীতির মাঠের উত্তপ্ত কড়াইয়ে তারা কি করে নানা মত সামলাবেন, গালি-বকা সহ্য করবেন, রাজনীতির ভেতরের রাজনীতি ট্যাকেল করবেন সেটাই ভয়ের! রাজনীতিটা রাজনীতিবিদের হাতে রাখা যায় কিনা? অন্তত কিছু বছর তৃণমূলে কাজ করা, নির্বাচনের আসনের নেতাকর্মী-ভোটারদের পর্যন্ত পৌঁছা-এ অভিজ্ঞতা দেখা দরকার।
একজন ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত স্যার সাংসদ নির্বাচিত হওয়া ছাড়াও তার এলাকাকে, গোটা দেশকে আরও বহু-কিছু দিতে পারতেন। এরপরেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন রাষ্ট্রের বৃহৎ স্বার্থে কাউকে দরকার তাকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী করে,উচ্চ সম্মানের উপদেষ্টা বানিয়ে তাদের সেবা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু জটিল সমীকরণের নির্বাচনে অ-রাজনীতিবিদের জন্য সুবিধার জায়গা হবে না। সব পেশার শেষ পরিণতি রাজনীতি হলে প্রকৃত রাজনীতিবিদরাও যেভাবে বিব্রত হন, তাদের ভক্ত-অনুরক্তরাও হতাশ হন! রাজনৈতিক দলগুলো সবাইকে নমিনেশন দিতে পারবে না। কাজেই রাজনীতির বাইরের হাই-প্রোফাইলের যারা নমিনেশন বঞ্চিত হবে তাদের জন্য তাদের অনুসারীদের মন খারাপ হবে। নমিনেশন না কিনলে মন খারাপের সুযোগ সৃষ্টি হতো না!
রাজু আহমেদ।
কলামিস্ট।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top