All Menu

কেবল অভাব শুধু অভিজাত্য কোনটাই নয়

‘আপনার সন্তানকে অভাব শেখান’-কিছুদিন আগে এটা পড়ে যারা আপ্লুত হয়েছিল তারাই ‘আপনার সন্তানকে আভিজাত্য শেখান’-শুনে মুগ্ধ হয়েছেন! যারা অভাব শেখাতে চেয়েছিলেন তারা এখন আভিজাত্য শেখাতে চাইছেন! অথচ সন্তানকে দু’টোই শেখানে উচিত। প্যারেন্টিং আপনার ইচ্ছানুযায়ী হবে! তবে আপনার অর্থনৈতিক সক্ষমতা, সামাজিক অবস্থান সন্তানকে বোঝাতেই হবে। আপনি এটা লুকাতে চাইলেও ধরা পরে যাবেন।
আপনার সামর্থ্য আছে অথচ সন্তানকে তার পছন্দের জিনিস দিচ্ছেন না-এমন কষ্ট সন্তানকে কখনোই দিবেন না। বাল্যকালের একটা বাইসাইকেলের অভাব এখনো অনুভব করি। আবার আপনার সামর্থ্য নাই অথচ ঋণ করে, ঘুষ খেয়ে, চুরি করে সন্তানের আহ্লাদ মেটাচ্ছেন-এর পরিণাম কখনোই ভালো হবে না। স্কুল পড়ুয়াদের আর ওয়ান ফাইভ দেদার খেসারত অনেক অভিভাবকেই দিতে হচ্ছে! কাউকে কাউকে সন্তান হারিয়েই দিতে হচ্ছে! সন্তানকে বিপথগামী করার অনেকগুলো পন্থার এটি একটি। অভাব এবং আভিজাত্যের মাঝে সমন্বয় করে সন্তানকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। সন্তানের ওপর নিজের ইচ্ছা চাপাতে যাবেন না। আপনি যা পারেননি তা সন্তানের থেকে আদায় করার বাসনা বাদ দিন। আপনার সন্তানের কীসে ভালো সেটা আপনার থেকে কেউ ভালো বুঝবে না। কাজেই তাকে যেমন জেলখানায় বন্দি করবেন না তেমনি অগাধ স্বাধীনতা দিয়ে ছেড়েও দিবেন না।
সন্তানকে চিন্তায় অভিজাত করে গড়ে তুলুন। অতিরিক্ত ভোগের ক্ষেত্রে গরীব রাখুন। তবে কৃপণ করে নয়! তাকে যোগ্য করে গড়ে তোলায় সর্বাধিক বিনিয়োগ করুন। সন্তান নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে সে গরীব থাকবে নাকি আভিজাত্যের জীবন যাপন করবে। এ জাতির চেয়ে আরও সভ্য জাতি, এ দেশের চেয়ে আরও উন্নত দেশ সম্পর্কে যেভাবে স্বপ্ন দেখাবেন সেভাবে এখানের ভালোবাসার মত আর কোথাও এমন খাঁটি ভালোবাসা, এখানের প্রকৃতির মত আর কোথাও সুন্দর প্রকৃতি নাই-সেটাও জানাবেন। প্যারিসের আইফেল টাওয়ার দেখার স্বপ্ন যেমন জাগাবেন তেমনি গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগের উৎসাহও জন্মাবেন।
কেবল দারিদ্র্য আর শুধু আভিজাত্য সুন্দর জীবনের কথা বলে না। দু’য়ের মিশেলেই তাকে বোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যে বয়স্কদের সম্মান করতে জানবে। ভিক্ষুকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াবে। যে একবেলা কষ্টে থাকার মর্ম বুঝবে এবং একচেটিয়া ভোগের পানসে সময়ের ব্যথাও বুঝবে। সন্তানকে সুশিক্ষা দিলে সন্তান জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
আপনার সন্তান লেগ পিচ ছাড়া কিছুই খায় না, নরম বিছানা ছাড়া শুতে পারে না-এ শিক্ষা দুনিয়ার আসার আগেই নিয়ে আসেনি। বাবা-মা থেকে পেয়েছে। কাজেই সন্তানকে সেভাবে গড়ে তুলুন যে পিঁয়াজ-মরিচের সাথেও সখ্য করতে পারে আবার সেভেন স্টারেও চলতে পারে। খাপ-খাওয়ানোর জন্য শিক্ষাই মুল। দারিদ্র্য-আভিজাত্যের বহুলাংশে মস্তিষ্কে সুপ্ত থাকে। চিন্তা প্রসারিত হলে তবেই তো সন্তান সুসন্তান হবে। গরীবের মাঝেও আভিজাত্য পাবে আবার আভিজাত্যেও মাঝেও গরীব হবে
রাজু আহমেদ।
কলামিস্ট।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top