কাউকে খোঁচা দিয়ে আমরা কি পাই জানি না কিন্তু যাকে খোঁচা দেই সে ব্যথা পায়। যে ব্যথায় কেউ কেউ কাঁদে, কারো কারো বুকের পাজর ভাঙে। কাউকে ব্যথা দিয়ে আমিও কি তৃপ্তি পাই ? কোনও সুখ আমাকে কি আলাদা প্রশান্তি দেয়? যদি তৃপ্তি পাই তবে মানুষ হওয়ার পাঠশালায় আরেকবার দীক্ষা নিতে হবে। কাউকে ব্যথা দিয়ে যদি সুখী হই তবে অসুখ এমনভাবে ভেতরকে গ্রাস করেছে যেখানে সব শুদ্ধতা অশুদ্ধ লাগে! সকল দূষণে তৃপ্তির বর্ষণ ছড়ায়! কারো দুর্বলতায় আঘাত করে, কারো আমানতকে খেয়ানত করে যারা পৈশাচিক আনন্দ পায় তারা মানুষ কম, পশু বেশি! যারা মানুষকে নিয়ে হাসে, পরের নিন্দা করে বাঁচে তাদের মনো-বৈকল্যের চিকিৎসা দরকার। ব্যক্তিগত আক্রমণ করা থেকে প্রত্যেকের নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত।
আমরা হাসতে হাসতে মানুষকে কাঁদাই। জনসম্মুখে অপমান করি। অথচ কেউ যদি বড় ধরনের দোষ করেও ফেলে তবে তাকে সবার সামনে বিব্রত করা একেবারেই ঠিক না। একাকী পরিবেশে তাকে বুঝিয়ে বলা উচিত। যত ছোট মানুষ হোক, আত্ম-সম্মান সবার থাকে। কারণে-অকারণে জনে জনে বকাবকি, লোক-সমাজে তাকে ছোট করায় টার্গেটের সম্মানের কতোখানি অসম্মান হয় সে বিচার বিতর্ক সাপেক্ষ কিন্তু যিনি এমন কাজ করেন তিনি সবার কাছে অপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সাবলীল এবং অকৃত্রিম সম্মান প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। এমনকি দীর্ঘশ্বাসের কণায় কণায় তার জন্য অশুভ নিরন্তর হয়। আপনার চোখে যিনি ক্ষুদ্র তিনি তাঁর পরিমণ্ডলে বৃহৎ। হয়তো আপনার চেয়ে বড়। আকাশের মত উঁচু। ক্ষমতা বাহিরের সবকিছু পিষে ফেলতে পারে কিন্তু মানুষ হতে হয় ভেতর থেকে। সেজন্য চেষ্টা থাকাও জরুরী।
কারো বিশ্বাস নষ্ট করার মত বড় পাপ নাই। কারো ভরসায় আঘাত করে সুখে বাঁচা যায় না। অহেতুক মানুষকে খোঁচা দেয়া মানসিক বিকারের প্রথম ধাপ। কারো দুর্বলতা জানলেও সেখানে আঘাত করে জিতে যাওয়ার মানসিকতা চেষ্টা হিসেবে ঘৃণার। বরং কারো দোষ লুকাতে পারলে, কাউকে গোপনে শোধরানোর পরামর্শ দিলে, কারো কোন ভুল আঁকড়ে না ধরলে তবেই তো আত্মার শুদ্ধতা প্রকাশিত হয়। ফুলের সুভাসের চেয়েও মানুষের সুবাস তীক্ষ্ণ । যাকে ভরসা করা যায়, যার থেকে সহযোগিতা আশা করা যায়, যাকে বিশ্বাস করা যায় চোখ বুঝে সেই মানুষের চেয়ে সুন্দর সুগন্ধির উৎস আর কি কোথাও আছে?
সম্ভাবনার উল্টো পাশেই শঙ্কাটুকুও লেপটে থাকে! কাজেই মানুষের থেকেই সবচেয়ে বেশি দুর্গন্ধ বের হতে পারে। যে মানুষ অপরের ক্ষতির মওকা খোঁজে, অপরের মানসিক পরিস্থিতি না বোঝে তাদের সাথে সময় কাটানো কঠিন। যে রোজ রুটিন করে বিশ্বাস ভাঙ্গে, যে মাঝপথে ভরসার হাত ছাড়ে তার দুর্গন্ধে মানবিক অনুভব-অনুভূতি কলুষিত হয়। মানুষের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের সিঁড়ি যারা পিচ্ছিল করে তারা নিজেদের ট্র্যাপেই একসময় নিজেরা হারে। সবাই ছাড় দিতে পারে, মাফ করতে পারে চোখ বুঝে কিন্তু প্রকৃতির শোধ ফিরে আসে অ-শোধের দেশে। যেটুকু ভেজানো হয় সেটুকু ভিজতে হয়-প্রস্তুতির বিহিতে!
মানুষ হিসেবে ভালো মানুষ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। যে মানুষকে ব্যথা দেয় না, দেয়া কথা ফিরিয়ে নেয় না-সেই তো মানুষ। ধরার সুযোগ থাকার পরেও ক্ষমা করার মাঝে সৌন্দর্য আছে। খারাপ কথার বাইরে লুকিয়ে আছে জাগতিক সকল মাধুর্য। ইচ্ছে হলে নিজেকে দুষিত করার সুযোগ আছে আবার সুবাস ছড়িয়ে মানুষকে মুগ্ধ করার, মানুষকে বুকে টানারও বিপুল সুযোগ আছে। আপনি কোন পথে নিজেকে জাহির করবেন সেটা দ্বারাই সময় আপনাকে মূল্যায়ন করবে। তবে আপনি ভালো হলে একটি পরিবর্তিত সংসার-সমাজের স্বপ্ন দেখতে পারি। নিশ্চয়ই সে সৌভাগ্য থেকে সমাজের বৃহৎ স্বার্থকে বঞ্চিত করা বুদ্ধিমানের অভিধানে সংযোজিত হবে না।
রাজু আহমেদ।
কলামিস্ট।
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।