ঋণ কি শুধু টাকা-পয়সা লেনদেনে হয়? ঋণের আরও বৃহৎ ক্ষেত্র আছে। কারো ক্ষতি করলে সেটা ঋণের বড় খাত। সে ঋণ দু’ভাবে পরিশোধ হতে পারে। ক্ষতির বিনিময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কিংবা আমার ভাগের পুণ্য দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করা। ভাবছেন, এ ঋণ আপনি পরিশোধ না করলে কেমনে শোধ হবে? প্রাকৃতিক-ভাবে হবে, ঐশ্বরিক প্রক্রিয়ায় হবে। ঋণ অপরিশোধিত অবস্থায় থাকে না। কোথাও না কোথাও, কোন না কোনভাবে শোধ হবেই। বিনা-স্বার্থে আপনি কারো উপকার করলে সেটার যেমন উত্তম বিনিময় পাবেন তেমনি কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেও সেটার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারো দীর্ঘশ্বাসে আপনি থাকলে শান্তি-বারাকাহ সংক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। কাজ থাকবে, বেতন থাকবে কিন্তু মানসিক প্রশান্তি থাকবে না। টানাটানি-টেনশন ঘুচবে না। কারো ক্ষতি করে কিছুই হবে না-এমন ভাবনায় কাটাতে কাটাতে বৃহৎ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। স্রোতের টান জীবন থেকে বহুদূরে নিয়ে যাবে। আর্থিক ঋণ যখন খুশি পরিশোধ করা যায় কিন্তু কাউকে ক্ষতির মাধ্যমে যে ঋণের সৃষ্টি হয় তা পরিশোধ করা সহজ নয়। সারাজীবন এর দায়ভার বয়ে বেড়াতে হয়। এমনকি ওপারের ফয়সালাতেও স্রষ্টা এই ঋণ মিটিয়ে দিতে অপারগতা প্রকাশ করবেন। যার ক্ষতি করা হয়েছে, যার অধিকার হরণ করা হয়েছে কিংবা যাকে কষ্ট দেয়া হয়েছে সে যদি মাফ না করে তবে প্রভুও স্ব-প্রণোদিত হয়ে এই পাপ-ঋণ ঘুচিয়ে দিবেন না। মানুষের যত কম ক্ষতি করা হবে, আপনার জীবন তত বেশি ঋণমুক্ত। টাকা-পয়সার ঋণ প্রয়োজন থেকে হয় কিন্তু কাউকে ক্ষতির ঋণ মন্দ প্রবৃত্তি থেকে সৃষ্ট। এই পাপ থেকে আমাদেরকে বেঁচে থাকতেই হবে। আমাদের পরোপকারের প্রবৃত্তিতে জীবন সাজাতে হবে। আমার কাজের দ্বারা কেউ যাতে ব্যথা না পায়, আমার কথা কারো চোখে যেনও পানি না আনে। হৃদয় ভেঙ্গে না দেয়। আচরণ যেনও বিশ্বাস হত্যা না করে। আমার হাত মানুষের মঙ্গলের জন্য ব্যবহৃত হলে, আমার পদক্ষেপ অপরের কল্যাণের জন্য বারিত হলে তবেই ছোট্ট জীবন স্বার্থ। কারো ক্ষতি ছাড়া, কাউকে প্রলোভন দিয়ে আশাহত করা ছাড়াও আমরা জীবনকে গড়তে পারি। আমার সাথে সংশ্লিষ্ট ছোট ছোট অধিকারগুলো প্রত্যেক প্রাপককে বুঝিয়ে দেয়া খুব বেশি কঠিন কাজ নয়। ইচ্ছা করলেই দায়িত্ববান হতে পারি। অন্তত কারো হাসিমুখের কারণ হতে না পারলেও যেন অন্যের বেজার চিত্তের সৃষ্টিকারী না হই। আমার কোন কর্মই যাতে কারো ক্ষতির দায় বহন না করে-এই প্রতিশ্রুতিটুকুতেই জীবনের পরমার্থ নিহিত। ক্ষতির দায়মুক্ত জীবন মহৎ-জীবনে অংশ। সে জীবন আপনার হোক, আমারও হোক। ঋণমুক্ত একটা সাদামাটা জীবনের স্বপ্ন-পূরণ হোক- এই প্রত্যাশায়।
রাজু আহমেদ। কলামিস্ট।
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।