All Menu

গ্রহণের নয় বরং সাহায্য বাড়িয়ে দেওয়ার হাত হোক

প্রতিকি চিত্র।

চলতে পথে দু’চারজন যারা হাত পাতে তাদের ফিরিয়ে দিয়েন না। সামর্থ্যের মধ্যে কিংবা আপনার অংশের থেকে হলেও দান করুন। রোজ এককাপ চা কম নিলে কিংবা নাস্তার খরচ থেকে কিছু কমালে আপনার দিকে প্রসারিত একটি হাত আর খালি ফেরে না। কোথাও থেকে যদি ভিক্ষার টাকা না বাঁচে তবে দু’পা বেশি হেঁটে হলেও কিছু খুচরো টাকা পকেটে রাখুন।

মলিন মুখে যারা আপনার মুখোমুখি হয় তাদেরকে সন্তুষ্ট করুন। ভিক্ষুকের সন্তুষ্টিতে ক্ষমতাধর মহান সত্তা আপনার ওপরও কতোখানি খুশি হয়ে যান তা ভাবতেও পারছেন না! ভিক্ষুকের ছদ্ম-বরণে কিছু ভাঁওতাবাজ-ভণ্ড আছে বটে, তবে এই ক্ষোভে যদি দান বন্ধ করে দেন আর তাতে সাহায্য প্রয়োজন এমন কেউ যদি বঞ্চিত হয় তবে আপনার কর্তব্যের একাংশ অনাদায়ী থেকে গেলো। কৈফিয়ত দিতে হতে পারে,

ভিক্ষা গ্রহণের জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হাতের চেয়ে ভিক্ষা দিতে পারে- সেই হাত উত্তম। দানে সওয়াব কী হবে সে হিসাব পরে কিন্তু আপনার দিকে ধেয়ে আসা বিপদের তীর অন্যদিকে যাবে- এতে কোন সন্দেহ নাই। যে দান করে তার মন সবখানে বড় থাকে। কোথাও আটকে না থাকা, ঘনিয়ে আসা বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া, আশা পূরণ হওয়া কিংবা সুস্থ থাকার অন্তরালে সাহায্যপ্রাপ্তদের দোয়া থাকে। অসহায় মুখ-গুলোর দিকে তাকিয়ে হলেও দু’পাঁচ টাকা হাসিমুখে দিয়েন। মনে রাখবেন, দানের সৌভাগ্য ও সামর্থ্য সবার হয় না। অঢেল থাকার পরেও যারা দানে কৃপণ হয় খোদা তাদের পছন্দ করেন না। দান করলে দাতার মর্যাদা বাড়ে।

ধর্মীয় দানের শর্ত আছে। তবে আপনি যদি লোক দেখাতেও দান করতে চান তবে সেটাকেও নিরুৎসাহিত করি না। যার সাহায্য প্রয়োজন সে উপকৃত হলে সেটাই প্রশংসনীয়। ধনীর সম্পদে গরীবের হক আছে। দানের মাধ্যমে, যাকাত-ফিতরায় সেসব পরিশোধ করতে হবে। বড় মাছ কেনার সময়, ব্যাগ-ভর্তি বাজার করার কালে কিংবা বিলাসিতা-ভোগের সময় যে জীর্ণশীর্ণ দেহের অন্ধকার মুখটি আপনার দিকে করুণ চোখে হাত বাড়িয়ে দেয় সেটাকে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় বিবেক একবারও সংকেত দেয় না? পাষাণ হবেন না। মাত্র পাঁচ টাকাই তো! ভেবে দেখুন, প্রতিদিন কতভাবে কতটাকা নষ্ট হয়! রোজ রোজ আপনি যেখানে যেখানে ঠকেন, খেসারত-গচ্ছা দেন তাও টাকার অঙ্কে অনেক!

ভিক্ষা দিন- মানসিক অশান্তি দূর হবে। বালা-মুসিবতের ক্ষয় হবে। হাজারো ভণ্ড ফকিরের মাঝেও যদি একজন প্রকৃত অসহায় থাকে তার দোয়ায় আপনার ভাগ্য বদল হয়ে যাবে। প্রশ্ন তুলতে পারেন, ভিক্ষুকের দোয়ায় যদি দাতার ভাগ্য বদলে যায় তবে ভিক্ষুকের নিজের কপাল খোলে না কেন? আপনি অবিরত পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। যিনি আপনাকে গণি বানিয়েছেন সেই সত্ত্বাই আরেকজনকে ফকির করে রেখেছেন। সম্মান ও সম্পদের জন্যে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন। আপনার সম্পদে তার হক রেখেছেন। আপনি যদি দানের ক্ষেত্রে কৃপণতা দেখান তবে রব সেখানে বারাকাহ কমিয়ে দিবেন। এখনো প্রশ্নের উত্তর পাননি তাইতো! ফকির নিজের জন্য দোয়া করেন না বরং আপনার সম্পদ বাড়বে এবং তার প্রাপ্তিও বাড়বে- এই দোয়াতেই ফকিরের দিন কেটে যায়!

ভিক্ষা করা ভালো কাজ? মোটেও না। পৃথিবীতে হালাল কাজের মধ্যে নিম্নতম হালাল ভিক্ষাবৃত্তি। আত্মসম্মান যাদের আছে এবং যারা শারীরিকভাবে সুস্থ তারা ভিক্ষার মত অসম্মানের কাজ করতে পারে না। সবাই কাজ করে দিন-গুজরাণে সক্ষম নয় এটা যেমন সত্য পাশাপাশি এটাও ধ্রুব সত্য যে, কিছু লোক সক্ষম হয়েও ভিক্ষাবৃত্তি করে। কে ভিক্ষা করে আর কেন করে সেই বিচারের বিতর্কে ভিক্ষা দানের মত মহৎকর্ম থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না। অনেক সময় আমরা ভিক্ষা দেই না আবার ভিক্ষুককে রুক্ষ ভাষায় ধমকে দেই। এটা একেবারেই অনুচিত। কোরআনে ভিক্ষুকদের ধমক দেওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আছে।

অনেক সময় দানের অক্ষমতা থাকতে পারে। সামর্থ্যেরও সীমাবদ্ধতা আছে। বিনীতভাবে এবং হাসিমুখে সেটা বলা উচিত। ভিক্ষুকও জানে দশ জায়গায় হাত পাতলে সে এক-জায়গা থেকে পাবে। কাজেই ভিক্ষা না দিয়ে উদ্যত হয়ে মারতে ওঠা, অমানবিক-ভাবে ধমক দেওয়া, কাজ না করার জন্য গালি দেওয়া-এসব শিষ্টাচার পরিপন্থী। আবারও বলছি, সাধ্য থাকলে পাঁচ দশ টাকা দান করুন। দানের মানসিকতা ও দানের সক্ষমতা তৈরি করুন। অবৈধ ও অপ্রয়োজনে অর্থ অপচয় না করে ছদ্মবেশী ভিক্ষুককে দিলেও অন্তত তার ওপর নির্ভরশীল বাবা-মা, স্ত্রী ও সন্তানেরা সেটা দিয়ে জীবন গুজরান করবে। পরোক্ষ ক্ষেত্র থেকে হলেও ভালোকাজের বিনিময় পাবেন।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top