যারা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য, সেটা যে দলেরই হোক, গুজব ছড়ায় তারা কি হাশর মানে না? নিশ্চয়ই গুজব সরাসরি মিথ্যাচার। মিথ্যার পরিণতি জাহান্নাম। অথচ দু’পক্ষকেই তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য গুজব ছড়াতে দেখা যায়। এই পালে মদদ দেয় একদল অরাজনৈতিক অথচ লাভের গুড় খাওয়া ব্যক্তি। এদের কারো কারো কিছুটা গ্রহনযোগ্যতাও আছে। আবার কেউ কেউ সার্টিফিকেটেও ভারী!
গুজব ছড়িয়ে এরা মানুষ হিসেবে কত যে হালকা ও হাসির পাত্র হয়ে যান তা তারা আন্দাজ করতে পারে না! এই গুজবে গণ্ডমূর্খ রাজনীতির কর্মী-সমর্থক যেমন আছে তেমনি আমলা/কামলা, সুশীল এবং শিক্ষকও আছে। মিথ্যার বিচার কেবল পরকালে হবে না। ইহকালেও দেনা চুকাতে হবে। লোকে আপনাকে নিয়ে যে হাসে সেটা মিথ্যাচারের বৃহৎ শাস্তি। আপনি মানসিকভাবে যে ভালো নাই কিংবা অন্যায়ভাবে খুব ভালো আছেন- এটা মিথ্যাচারের ক্ষুদ্রতম শাস্তি। অবৈধ উত্থানের পতনও নিরঙ্কুশ!
কেউ তথ্য দিয়ে গুজব ছড়ায় আবার কেউ ধর্ম দিয়েও গুজব ছড়ায়। অথচ মিথ্যা সকল পাপের মা। মিথ্যাচারকে ভিত্তি করে যে রাজনীতি তা অর্থনৈতিক মুক্তি দিতেও পারে, কাউকে মার দেওয়া এবং কারো হাতে মার খাওয়ার ফয়সালা করতে পারে, পদ দখল কিংবা জেলের ঘানি টানা নিশ্চিত করতে পারে কিন্তু পুলসিরাত পার হওয়া সহজ করবে না। মানুষের মুক্তির চিন্তা করলে গুজব ছেড়ে দিন। নিজে বাঁচুন। গুজব ছড়িয়ে আপনি বিবেকহীন কাজ করছেন।
যেটা জানেন না সেটার সত্য/মিথ্যা নিশ্চিত না হয়ে প্রচার করাও বড় পাপ। ভিত্তিহীন তথ্যে কারো জীবনহানী ঘটতে পারে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হতে পারে। যারা গুজব ছড়িয়ে জমিনে অশান্তি সৃষ্টি করে তারা কাফের। যারা আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ তাদের মুখে বাকওয়াজ মানায় কিন্তু আপনি ইমাম হয়ে, আপনি শিক্ষক হয়ে কিংবা আপনি বিবেকবান হয়ে গুজব ছড়াতে পারেন না। এটা আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না। যাদের পক্ষে আপনি গুজব ছড়ান তাদের জিতে আপনার লাভ হবে সামান্যই। কিন্তু যে গুজব ছড়ান তাতে আপনার ক্ষতি হবে বিশাল। গুজব তথা মিথ্যাচারকে বৈধতা দানের কোন সুযোগ নাই।
সে সত্য আপনার পক্ষে এবং যে সত্য আপনার বিপক্ষে- তার মধ্যে বিপক্ষের সত্যকে আড়াল করে স্বার্থের সত্য প্রচার করাও অন্যায়, শাস্তিযোগ্য পাপ। যখন আপনার উদ্দেশ্য মহৎ না হয় তখন আপনার আংশিক তর্কসম্মত কথাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আপনার কাজ সার্বজনীন গ্রহনযোগ্যতা হারায়- হেতু আপনার মাকসাদ মন্দ! কারো ওপর অত্যাচারের কালে আপনি সুখ পান আবার কারো মন্দ দিনে আপনি কষ্টে মরে যান- এসব মুনাফেকি। নিজের নফসের সাথে আপনি জুলুম করছেন। যেহেতু মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে বিবেক পেয়েছেন সেহেতু সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতে শিখুন।
দল-মত, ছেলছেলার উর্ধ্বে ওঠে সার্বিক সত্যকে প্রতিপাদন করতে চেষ্টা করুন। আপনার কোন মিথ্যাচারে কোন গোষ্ঠী বা রাষ্ট্রের সামান্যতম ক্ষতি হলেও সেটার কৈফিয়ত দিতে হবে। দুনিয়ার বিচারক ও বিচারালয় ত্রুটিহীন নয়। বিবেক দিয়ে সত্য, করণীয়/বর্জনীয় সাব্যস্ত করুণ। গুজব ধারণ করে, শেয়ার করে এবং সেটাকে অন্যের বিশ্বাসের ঘরে ঠাঁই দেওয়ানোর অপচেষ্টা আপনাকে দলকানা হাস্যকর প্রাণীতে পরিণত করে। বিবেকবান মানুষ হিসেবে সেটা করবেন কেন? আপনার না শিক্ষা আছে?
র’বরের পাকড়াওকে ভয় করুন। যেদিন কেউ কারো কোন উপকারে আসবে না। তাঁর পাকড়াও থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হবে না।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।