চাকুরি শুরু করতে না করতেই একদল সহকর্মী তাদের ব্যাংক-ব্যালেন্স, বিত্ত-বৈভবের গল্প শোনাবে। শুনতে শুনতে আপনারও লোভ হবে! তাদের সম্পদের সমপরিমাণ সম্পদ গড়ার জন্য আপনার বেতনের অধিক জমা করার ইচ্ছা জাগবে! যেহেতু আপনারও সুযোগ আছে! তাদের অমুক হয়েছে, তমুক হবে! এবার আপনিও পাল্লা দিয়ে শখ হত্যা করে, পরিবারের সময় ছিনিয়ে নিয়ে সম্পদ জমা করতে শুরু করেছেন! শুধু এটুকু মনে রাখবেন, সামর্থের অধিক সঞ্চয়ের মনোবৃত্তি জীবনকে সহজ করে না বরং আরও জটিল করে। মানসিক দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা বাড়ায়। মাত্রাতিরিক্ত সঞ্চয়ের ইচ্ছা মানুষকে কঞ্জুস ধরনের কৃপণ করে।
যার কাছ থেকে আপনি সঞ্চয়ের গল্প শুনেছেন তার কাজের বয়স ১৫-২০ বছর। তার শখ মরে গেছে। তাকে টাকার নেশায় ধরেছে। আপনার সীমিত আয়ের সবটাই যদি সঞ্চয়ে মনস্থির করেন তবে মোটামুটিভাবে আপনিও মরে গেছেন। সাধ্যের মধ্যে শখ পূরণের বাসনা যদি না থাকে, নিজেকে সম্পদ জড়ো করার গুদাম মনে হয় তবে আপনি ঘুষ খাবেন, দুর্নীতি করবেন! মোটকথা নীতিহীন সবকাজের পক্ষো আপনার অবস্থান ও উপস্থিতি থাকবে। কেবল সঞ্চয়ের মনোভাব ভবিষ্যতকে নিরাপদ করে না বরং আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। এই সঞ্চয় সঞ্চয় খেলায় মানুষ হাশরও হারায়! কারো সাথে প্রতিযোগিতা করে সঞ্চয় করা মানেই মানুষ বাছ-বিচারের বোধ হারায়।
এখনও জীবন শুরুই হয়নি অথচ শুধু সঞ্চয় করার নেশায় পেলে এই জীবনটার রঙ-রস, গন্ধ স্পর্শ করা হবে না। প্রিয়জন সময়-সঙ্গ পাবে না। অধিকাংশের সঞ্চয় সন্তানদের জন্য। কেননা যারা সঞ্চয় করে তাদের খুব কম মানুষেই নিজের সঞ্চয় ভোগ করতে পারে। ওষুধ-পথ্যে কিছুটা কাজে আমে হয়তো! সন্তানের জন্য সম্পদ সঞ্চয়ের চেয়ে শিক্ষা নিশ্চিক করা জরুরি। সন্তান মানুষ হলে তার চেয়ে বড় সঞ্চয় আর নাই।
নীতিপদ্ধতি ভুলে অর্থ কামাই করে তা সন্তানের জন্য সঞ্চয় করলে সেই সন্তান দুঃখের কারন হবে। এক জীবনে কত অর্থ লাগে? আমাদের যে পরিমান লোভ তার সিকিভাগও সুখী জীবনের জন্য লাগে না। অথচ মনুষ্যত্ব খুইয়ে, সামাজিকতা ভুলে, ধর্ম-প্রথা ভেঙ্গে আমরা সম্পদের জন্য শয়তানের সাথে রোজ প্রতিযোগিতা করছি। পরিমান ভাবছি কি না জানি না। যে সম্পদ রেখে যাচ্ছি, যে সন্তান আমাদের উত্তরাধিকারী তা কিংবা তারা আদৌ কাজে আসবে কি না তা নিশ্চিত না। দুর্নীতিবাজ অভিভাবকদের সন্তানরা বিপথগামী- সমাজ সাক্ষ্য দিচ্ছে।
যেহেতু ভবিষ্যত আছে সেহেতু সঞ্চয় প্রয়োজন। তবে সেটা আয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। মাত্রা অতিক্রম করা ঠিক হবে না। সৎভাবে সম্মান নিয়ে জীবিকা নির্বাহের পরে, অপচয় রোধ করে উদ্বৃত্ত অঙ্ক সঞ্চয় করা জরুরি। তবে সেই উৎসে যদি কারো বঞ্চনার হাহাকার থাকে, কারো চোখের পানির মিশেল থাকে কিংবা লেগে থাকে কারো দীর্ঘশ্বাস- তবে তা ধ্বংসের দরজা উম্মুক্ত করবে। বিত্ত-বৈভবের অভাব নাই অথচ সন্তান মানুষ হয়নি- এই জীবনের সব আয়োজন বৃথা। ত্যাগ করে যাদের ভোগের জন্য সম্পদ রেখে যাওয়া হচ্ছে তাদের ধ্বংসের কাজেও এই সঞ্চয় জ্বালানি হতে পারে।
ভোগবাদীরা টাকাকে দ্বিতীয় ঈশ্বর বানিয়েছে। পুঁজিবাদীরা তাতে ঢেলেছে ফুয়েল। অথচ চাহিদার সাথে সক্ষমতা ও নৈতিকতা মিল থাকা জরুরি ছিল। নৈতিকভাবে দেউলিয়া সমাজ ব্যবস্থা সে সুযোগ রাখেনি। তারা শিখিয়েছে, যেভাবে পার কামাই করো এবং জমাও। দেখিয়েছি, টাকার কাছে ক্ষমতা ও সততা অসহায়। অথচ মানুষের বিচার গুণে-মনে হওয়া উচিত ছিল; টাকাতে নয়।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।