বিধান দাস, নিজস্ব প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আলোচিত মৎস্যজীবী লীগ নেতা শাকিল হত্যা মামলার প্রধান আসামী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এদিকে কারাগারে নেওয়ার সময় আদালতে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গেলে বাঁধা এবং হামলার চেষ্টা করেন চেয়ারম্যানের সাথে থাকা লোকজন। এসময় সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন হত্যা মামলার প্রধান আসামী ও বালিয়াডাঙ্গীর ভানোর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। সংবাদ সংগ্রহে বাঁধা ও হুমকি প্রদানের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে গেলে জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মামুনুর রশিদ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী এ্যাড. সৈয়দ আলম ও আসামী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. আবেদুর রহমান। দু’পক্ষের আইনজীবীরা জানান, উচ্চ আদালতে আগাম জামিন চেয়েছিলেন মামলার প্রধান আসামী। উচ্চ আদালত জামিন না দিয়ে তাকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশনা প্রদান করেন। বৃহস্পতিবার ছিল উচ্চ আদালতের বেধে দেওয়া সময়ের শেষ দিন।এদিন দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন শাকিল হত্যার প্রধান আসামী ভানোর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।
আসামী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড.ইউসুফ আলী, এ্যাড. আবেদুর রহমান, এ্যাড. আব্দুল হালিম, এ্যাড. শেখ ফরিদ জামিনের জন্য প্রার্থনা করলে বাদীপক্ষের আইনজীবী এ্যাড. সৈয়দ আলম ও রাষ্ট্র-পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. শেখর চন্দ্র রায় জামিনের বিরোধিতা করেন। পরে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী এ্যাড. সৈয়দ আলম জানান, শুনানিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এবং দু’পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পর আদালত জামিন না মঞ্জুর করে প্রধান আসামী ইউপি চেয়ারম্যানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই সাথে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ময়না তদন্তের রিপোর্ট, আহতদের জখমী সনদপত্র এবং তদন্তের অগ্রগতি জানাতে আদালতে স্ব-শরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আসামী-পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. আবেদুর রহমান বলেন, বিচারক পুনরায় জামিনের জন্য আগামী ১৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন। গণমাধ্যম-কর্মীদের তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তুলতে বাঁধা প্রদান-কালে কোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থানরত প্রত্যক্ষদর্শীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আদালত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আদালতে একজন হত্যার মামলার মুল আসামীর সাথে এতো লোকজন আসলো কিভাবে? কারাগারে নেওয়ার সময় সাংবাদিকরা যখন ছবি তুলে তখন চেয়ারম্যানের লোকজন সাংবাদিকদের কাজে বাঁধা ও হামলার চেষ্টা করেন। আদালতের মতো জায়গায় সন্ত্রাসীদের এমন ঘটনা সত্যিই আমরা হতাশ। ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী বলেন, এটি একটি আলোচিত হত্যাকাণ্ড। এ মামলার প্রধান আসামীর আত্মসমর্পণের খবর পেয়ে আদালত চত্বরে গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ এবং ছবি তুলতে বাঁধা দেয় চেয়ারম্যানের সাঙ্গপাঙ্গরা। বাঁধা উপেক্ষা করে গণমাধ্যমকর্মীরা ছবি তোলার চেষ্টা করলে চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের সাথে মারমুখী আচরণ করে-যা মোটেই কাম্য নয়। খোদ আদালত চত্বরে যদি চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী এমন ঘটনা ঘটাতে পারে, তাহলে ইউনিয়নে কি অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। উল্লেখ্য, ৩ সেপ্টেম্বর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের হলদিবাড়ী বাজারে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের সাথে ওই ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা সাঈদ আলমের পরিবারের মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে সাঈদ আলমের ভাই মৎসজীবী লীগ নেতা শাকিল আহমেদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। পরে বালিয়াডাঙ্গী থানায় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ ২০ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন শাকিলের বড়ভাই যুবলীগ নেতা সাঈদ আলম। সেই মামলায় ঢাকা থেকে ৪ জন, দিনাজপুর থেকে ২ জন এবং বালিয়াডাঙ্গী থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় র্যাব ও ডিবি পুলিশ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।