হেলালী ফেরদৌসি, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: জাল বণ্টন নামা দলিলে পৈত্রিক সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে শেখ আমিনুর রহমান মানিক ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী রোমানা আফরোজ রুমা কর্তৃক রকিব উল্লাহর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদ এবং ন্যায় বিচারের দাবিতে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঝিনাইদহের কান্চননগর এইচ.এস রোডের বাসিন্দা মৃত শেখ আসাদুর রহমান জামালের কন্যা জেনিস ফারজানা।
সোমবার (২৮ জুন)সকাল সাড়ে ১১টায় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলনের করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসময় জেনিস ফারজানা বলেন,আমার সহোদর ভাই আমিনুর রহমান মানিক ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী রুমানা আফরোজ রুমা, ঝিনাইদহ জেলা জজ আদালতের নিবন্ধভুক্ত এডভোকেট মাজহারুল আনোয়ার (সবুজ) এবং দলিল সনাক্তকারী সাক্ষী মোশাররফ হোসেন খান এর ষড়যন্ত্রে আমার স্বামী মোঃ রাকিব উল্লাহ, ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ) কমলাপুর পিটিআই, চুয়াডাঙ্গা এর নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, ঝিনাইদহ পিটিশন মামলা নং- ৩৩৭/২০২১ এ দায়েরকৃত মিথ্যা, ভিত্তিহীন ,উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও একটি হয়রানিমূলক, মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আমার দুই ভাই আমিনুর রহমান ও আসিকুর রহমান এবং জাল বন্টননামা দলিল সনাক্তকারী মোশাররফ হোসেন খান গত ১৫/০১/২০১৫ইং তারিখে ৩৬৮নং বণ্টন নামা দলিল ঝিনাইদহ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করেন। আমি এই বণ্টন নামা দলিল সম্বন্ধে জানতে পারি ২০২০ সালে । জাল বন্টননামা দলিল তৈরি করে আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ভুটিয়ারগাতি মৌজার আমার অংশের পুকুর বিক্রয় হয়ে যায়। বণ্টন নামাতে আমার নামে স্বাক্ষর আছে। কিন্তু আমি ওই বণ্টন নামাতে কোনো স্বাক্ষর করিনি। ২০১১ সালে আমাদের আম্মা মারা যাওয়ার আমাদের তিন ভাই বোনের মধ্যে পৈত্রিক জমি-জাগা ভাগাভাগি নিয়ে মনোমালিন্য চলছিল। আমাদের ভাই বোনের মধ্যে যোগাযোগ ছিল না। আমাদের ভাই বোনের মধ্যে সম্পর্ক এতটাই খারাপ ছিল যে, আমি বাধ্য হয়ে ১০/০৮/২০১৪ইং তারিখে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করি। যার জিডি নং- ৪৭৯। এই জাল বণ্টন নামা দলিলের একটি ফটোকপি আমি হাতে পাওয়ার পর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিঃ ম্যাজিঃ আমলি ঝিনাইদহ আদালতে ০৩/১১/২০২০ইং তারিখে মামলা করি। আদালতে আমার হাতের স্বাক্ষর ও টিপ সহি পরীক্ষা করার পর জাল প্রমাণিত হওয়ায় ২৪/০২/২০২১ইং তারিখে তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে আমার দুই ভাই আদালতে হাজির হলে তাদেরকে জেল-হাজতে যায়। জেল-হাজতে থেকেই আপোষ-মীমাংসার শর্তে জামিনে ছাড়া পায় তারা। কিন্তু জামিনে মুক্ত হওয়ার পর আমার দুই ভাই ও ৩নং আসামী আমার সাথে আর কোনো আপোষ মীমাংসার চেষ্টা করেনি। বরং আমার ভাই আমিনুর রহমান মানিক তার ২য় স্ত্রী রুমানা আফরোজ রুমাকে দিয়ে আমার স্বামী রাকিব উল্লাহ এর উপর মিথ্যা নারী নির্যাতনের চেষ্টার অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন ঝিনাইদহ আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ২৭/১২/২০২১ইং তারিখে আমার স্বামী স্বেচ্ছায় থানায় গেলে গ্রেফতার হয়। আর ১৬ দিন জেল হাজতে ছিল। গ্রেপ্তার হবার কারণে তার কর্মস্থল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। জেলে থাকাকালীন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তাকে জামিন দেয় এবং ঝিনাইদহ সদর থানাকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়। তিনি বলেন,আমার স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের কোনোরূপ প্রমাণ না পাওয়ার ফলে থানা থেকে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তাকে এই মামলা থেকে আমার স্বামীকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলা হয়। ২০/০৬/২০২২ইং তারিখে আদালতে আমার করা জালিয়াতির মামলার ধার্য দিন ছিল। উক্ত তারিখে আমার ছোটো ভাই আসিকুর রহমান রতন আদালতের কাঠগড়ায় উঠে তার ভুল স্বীকার করে আর তার দ্বারা আমার যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা সে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করে। জেনিস ফারজানা আরো বলেন,মানুষ যখন অসহায় বোধ করে তখন ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় একজন উকিলের নিকট শরণাপন্ন হন। আমিও সেই রূপ আশা নিয়ে এডভোকেট মাজহারুল আনোয়ার (সবুজ) এর কাছে গিয়েছিলাম। রুমানা আফরোজের পক্ষের উকিল মাজহারুল আনোয়ার (সবুজ)।গত ২১/০৬/২০২২ইং তারিখে সবুজ স্যারের সাথে কথা বলার সময় আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি আমার স্বামী নারী নির্যাতনের মতো কাজ করতে পারেন কি না? তিনি আমাকে বলেন, “না আপা, এটা একটা মিথ্যা মামলা। আপনাকে প্যাঁরে ফেলে একটা ব্যাল্যান্স করে আপোষ মীমাংসা করে দেবো বলে আপনার স্বামীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।” আমি তাকে এই মিথ্যা মামলা থেকে সরে আসার অনুরোধ করি। তিনি আমাকে বলেন, “এখন এই মামলা থেকে সরে আসার নিয়ম নেই।” আমি সবুজ স্যারকে জানাই তার চাচা বিশিষ্ট ঠিকাদার আমার বাসায় গিয়েছিল আর বলেছিল, আমার ভাই আমিনুর রহমান মানিক উকিল কে ভুল বুঝিয়ে এই মিথ্যা মামলা দিয়েছে। মানিকের সাথে কোনো ভাবে মীমাংসা করা যায় কি না। তার কাছে আমি যেন মন খুলে কথা বলি। আমি ঠিকাদার চাচাকে জানায় যতক্ষণ না আমার ভায়ের মধ্যে ঈমান আসবে ততক্ষণ আপোষ মীমাংসা করা সম্ভব না। রুমানা আফরোজের পক্ষের উকিল মাজহারুল আনোয়ার (সবুজ)এর সাথে আমার যে কথা হলো সেগুলোও ভিডিও রেকর্ড করেছি। সবুজ উকিল আমাকে বলে, “এভাবে রেকর্ড করা ঠিক না।” আমি বলি সাংবাদিকদের সাথে মামলাটি নিয়ে কথা বলবো বলে ডকুমেন্ট রাখছি। সবুজ স্যারের সাথে কথা শেষ হলে চলে আসি। উকিল বারের অন্য একজন উকিলের সাথে দেখা করার জন্য। কিছুক্ষণ পর বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে সবুজ উকিল আমাকে ডাকে, আমি আবার সবুজ উকিলের চেম্বারে যায় তখন সবুজ উকিল আমাকে বলে, মোবাইলে আমি যে রেকর্ড রেখেছি তা ডিলেট করে দিতে। আমি রাজি হই না। সবুজ উকিল আমাকে বলে, উকিলের কথা রেকর্ড করা অন্যায়। আমি বলি যদি অন্যায় করে থাকি আমাকে পুলিশে দিয়ে দেন। সবুজ উকিলের মহুরি আমার মেয়ের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। আমি বাধা দিলে আমার আমার মাথায় আঘাত করে। আমি সরে গেলে সবুজ উকিল আমার মেয়ে ফারজানা আফরিন মৌমিতার কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়। আমিত সবুজ উকিলের কাছ থেকে মোবাইল নিতে গেলে সবুজ উকিল আবারও আমার মাথায় আঘাত করে। উকিল বারের উকিলরা আমাকে ঘিরে ধরে। বারবার আমাকে মোবাইল থেকে রেকর্ড মুছে ফেলার জন্য চাপ দিতে থাকে। আমি বলি আমি যদি অন্যায় করে থাকি আমাকে পুলিশে দিয়ে দেন। অনেক উকিল আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আমাকে উকিল বারের সভাপতি রবিউল স্যারের কাছে নিয়ে যায়। সভাপতির রুমে মিটিং চলছিল সেখানে ২০/২৫জন উকিল উপস্থিত ছিল। তারা সবাই আমাকে সবুজ স্যারের সাথে কথা বলার সময় আমি যে রেকর্ড করেছি মোবাইল থেকে ডিলেট করে দেয়ার জন্য বলে। আমি বার বার বলি, আমি কোনো অন্যায় করে থাকলে আমাকে পুলিশে দিয়ে দেন। উকিল বারের সভাপতি রবিউল ইসলাম আমাকে জানায়, যদি আমি ডিলেট না করি তাহলে আমার যে দুটি মামলা কোর্টে চলছে কোনো উকিল আমাকে আইনি সহযোগিতা করবে না। আমি বার বার বলি, আমি অন্যায় করলে আমাকে পুলিশে দিয়ে দেন। তখন উকিল বারের সভাপতি রবিউল স্যার সবুজ উকিলকে মোবাইল পুড়িয়ে ফেলার, ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন। দুইজন উকিল আমার মোবাইল নিয়ে মটর সাইকেলে করে উকিল বার থেকে বেরিয়ে যায়। তখন আমি ঝিনাইদহ সদর থানায় এসে একটি অভিযোগ দায়ের করি। থানা থেকে তদন্ত অফিসার আমার অভিযোগটি গ্রহণ করেন এবং ফোর্স নিয়ে উকিল বারে গিয়ে, সভাপতি উকিল বারে না থাকায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সভাপতি রবিউল ইসলাম, সেক্রেটারি লাকী স্যারের সাথে কথা বলেন। সভাপতি জানায়, আমার (OPPO A31, ০১৯৭৪-৭৪৫০৭৬) মোবাইল ফোনটি তার কাছে আছে।জেনিস ফারজানা বলেন,আমার স্বামী রাকিবুল্লাহ যে নির্দোষ তার প্রমাণ এই মোবাইলে রেকর্ড আছে। আমি খবর পেয়েছি মোবাইল থেকে সমস্ত রেকর্ড ডিলেট করে দেয়া হয়েছে।প্রশাসনের উচ্চ তদন্তের মাধ্যমে এবং কেড়ে নেওয়া মোবাইল ফোনে কি কথা রেকর্ড করা আছে এবং কি ভিডিও ধারণ করা আছে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তা উৎঘাটন সম্ভব। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে এবং মিথ্যা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত নারী নির্যাতনের চেষ্টা দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, কাঞ্চননগর ও ভুটিয়ারগাতি মৌজার পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্য সকল জায়গা-জমি ফেরত পাওয়া, দোষী ব্যক্তিদের প্রশাসনের মাধ্যমে শাস্তির দাবি এবং পৈত্রিক জমি উদ্ধারসহ মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে পরিত্রাণ পেতে জেনিস ফারজানা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।