যত মন ভাঙা আঘাত, যত দুঃখ-বেদনার কারন- ভালোবাসার মানুষ, একান্ত প্রিয়জন। যত উপেক্ষা কিংবা আশা-প্রত্যাশার আত্মহত্যা সেসবের অন্তরালে বিশ্বস্ত মানুষ। প্রকাশ্য শত্রু কারো কোন বড় রকমের ক্ষতি করতে পারে না। যদি বিতর্ক বসে খুন নাকি হৃদয় ভাঙা- কোনটা ভয়াবহ, তবে হৃদয়ের ক্ষতগুলো বেছে নিতে হবে। শত্রু আঘাত করলেও তার জন্য আফসোস হয় না। শত্রুর আঘাত মোকাবিলায় মানসিক প্রস্তুতি থাকে। শত্রুকে রুখে দিতে জোরদার সচেতনতা থাকে। সবকিছুর পরেও শত্রু ক্ষতি করবে সেটা সহজে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যে মনের মানুষ, যারা আপন মানুষ, যারা কাছের মানুষ কিংবা যাকে ভরসা করে তুলে দেওয়া হয় স্বপ্ন, যার কাছে জমা থাকে সব বিশ্বাস, সে যদি মন ভাঙনের আঘাত করে, অশ্রুপাতের কারন হয় তবে সে দুঃখ কোথায় রাখা যায়? কার কাছে বলা যায়?
মন খারাপের কারন জানুন, দুঃখ পাওয়ার উৎস খুঁজুন – কাছের মানুষ, আপন মানুষ। যাকে কল্পনাতেও অবিশ্বাস করা যায় না সেও কলিজা ভাঙার আদিগন্ত কারন হয়। যে থাকে নিঃশ্বাসে সে যদি বিশ্বাস ভঙ্গের কারন হয় তবে সে আঘাত সামলে ওঠা মুশকিল। যাকে নিয়ে স্বপ্ন থাকে, যাদের ঘিরে কারো দুনিয়া ঘোরে তারাও যে প্রয়োজনে প্রিয়জন হয়েছিল- তা কে জানতো? যাদের ঠাঁই হয়েছিল হৃদয় মাঝে তারাও যে মনের ঘরে অব্যর্থ নিশানায় তীর-ধনুকে আঘাত করবে তা কল্পনাতেও থাকে না। সবাইকে অবিশ্বাস করে মানুষ যে মন-প্রাণে বাঁচে না।
মানুষের এই জীবনে ছোট্ট দুঃখের কারনগুলোতে শত্রুর নাম থাকলেও বড় বড় দুঃখগুলো কাছের মানুষ পরম যত্ন করে উপহার দেয়! যে থাকে বিশ্বাসের পুরোটা জুড়ে সে যদি মনের খুনী হয় তবে সে বিচারের ভার কার কাছে দেওয়া যায়? যাদের সাথে মিশে থাকে জীবন, যারা স্বপ্নে ঘোরে আমরণ তারা যখন অদৃশ্য শত্রুর ভূমিকায় থাকে তখন সচেতনাতেও খুব বেশি লাভবান থাকা যায় না। যার সাথে সঙ্গ, যাদের সাথে ফুরোয় দিন কিংবা যাদের সাথে হয় কথা- তারা মিলেই পরিবার। এখানে সব দুঃখ জমা রাখা যায়, বিপদে ভরসা পাওয়া যায় কিংবা সুখেরও ভাগাভাগি হয়। অথচ?
যারা মিছরির ছুড়ি নিয়ে ঘোরে, সুযোগ পেলে হৃদয়টারে এফোঁড়-ওফোঁড় করে তাদেরকে চেনার পরে তাদের সাথে থাকা যায় কিন্তু বাঁচা যায় না। যারা যত্ন করে মিষ্টি কথায় আঘাত করে, যারা আড়াল হলে নিন্দার ঝড়ে তুফান তোলে তারা কেউ দূরের মানুষ? প্রকাশ্য শত্রুদের এমন অলস সময় নাই। তারা শক্তি দিয়ে শরীরে আঘাত করে অথচ আপনজনের লক্ষ্য থাকে মন। তারা সুযোগ পেলেই মন্দির ভাঙার পাপ কামায়! মনভাঙায় তাদের চেয়ে পারঙ্গমতা আর কারো নাই। ভালোবাসার মানুষ, প্রিয়জন, কাছের মানুষ অবশেষে বিশ্বাস হত্যা করে, প্রতিশ্রুতি অবজ্ঞা করে এবং মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে নিজের তৃপ্তি খোঁজে। আপনজনের আঘাত থেকে আসলে বাঁচার উপায় নাই। যারা হাসতে হাসতে কাঁদিয়ে দেয়- এই ভূবনে তাদের নামের আগেই প্রিয়জন লেখা হয়।
প্রতাশা করি, কোন প্রিয়জন দুঃখের কারন না হোক। যার স্থান ভালোবাসায় এবং আবাস হৃদয়ে সে যাতে আজীবন সেখানে থাকে। শত্রুর আঘাত দু’দিনেই মন থেকে মিলিয়ে যায় কিন্তু যে বন্ধু সে আঘাত দিলে তা মনে গেঁথে থাকে দীর্ঘকাল। যাকে বুক পেতে ভালোবাসা দেওয়া হয় সে যদি একবার পিঠ দেখিয়ে পালিয়ে যায় তবে সে আর আপন হতে পারে কি-না, তা তর্কসাপেক্ষ। প্রিয়জনের ওপর একবার ঘৃণা জমে গেলে সে মনের মনিকোঠায় আর থাকে না। জীবনে দুঃখ থাকুক তবে যত দুঃখের কারন তার কোথাও আপন মানুষ, প্রিয় মানুষ কিংবা বিশ্বস্ত মানুষের নাম-ছায়া জড়িয়ে না পড়ুক। মনে আঘাত পেলে সে মানুষের বাঁচা কি না বাঁচায় তেমন কোন তফাৎ থাকে না বরং জিন্দা লাশে পরিণত হয়। আপনজন যেন মস্ত সুখের কারন হয়েই বাঁচে। মিলেমিশে মনের ঘরে থাকে।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।