All Menu

সমাজে সুখ নয়, অসুখ সংক্রামক

আমরা একজনের বক্তব্য শুনেই রায় দিয়ে ফেলি! কারো কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণাও পোষণ করি! অথচ ভুলে যাই, যিনি যখন বলে তখন তাকেই সত্য-সঠিক মনে হয়! কারো যদি একটু কাঁদার, অভিনয়ের ভালো দক্ষতা ও ক্ষমতা থাকে তবে তাকে পরাজিত করে এমন সাধ্য কার! পৃথিবীতে বোধহয় মানুষের মুখোশে এমন কোন ফেরেশতারও আগমন ঘটেনি যে নিজের দোষ এবং পরের গুণ নিরপেক্ষভাবে বলবে! যদি তাই হতো, তবে বাহ্যিক আইন-আদলতের প্রয়োজন হতো না। প্রত্যেকের বিবেক বিচারক হতো এবং নিজেই বাদী-বিবাদী-সাক্ষীর ভূমিকা নিতো! বাস্তবে এসব হয় না; হলে কিঞ্চিৎ-আংশিক!

আমরা প্রত্যেকেই গ্রাম্য মোড়লদের চরিত্রও কিছুটা ধারণ করি! কেউ যখন কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তখন অভিযোগকারীর তুলনায় অভিযুক্তের দিকে আমাদের রি-অ্যাকশান আরো জোরালো থাকে! সিমপ্যাথি দেখিয়ে কায়দা করে কিছু ফায়দা যদি আদায় করা যায়! খোঁজ নিলে জানা যাবে, বেশিরভাগ মধ্যস্থতাকারী চতুরের ভূমিকায় বহুফায়দা লুটেছে! মিঠা মিঠা কথা বলে অসৎ উদ্দেশ্য সাধন করেছে। কারো লোভ সম্পদে আবার কারো নজর শরীরে! কেউ কেউ তো আবার আগে যা সমস্যা ছিল, সালিসি করতে গিয়ে সে সমস্যা আরও বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে! যেখানে বিচ্ছেদ হতো না, দূরত্ব বাড়তো না সেখানেও চরম পরিণতিতে ঠেকেছে!

মধ্যস্থতাকারীদের ভাষা কিঞ্চিৎ সুমিষ্ট হয়, অন্তরে যে ইচ্ছা থাকে মুখে তার রেশ রাখে না! অতঃপর, অতঃপরের ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ মধ্যস্থতাকারীর সম্পর্কে খোঁজ নিলে জানা যাবে, তিনি যে সমস্যার সালিসদার সেটার থেকে চৌ-গুন সমস্যা তার জীবনে ঘোরে! তার দক্ষতা হচ্ছে, তিনি হাড়ির খবর পরশীকে জানতে দেন না! এবং নিজের অশান্তি ট্রান্সমিট করে অন্যের শান্তিকে চিরতরে হত্যা করেন!

সমস্যা সমাধানের ভার কাকে দেয়া হচ্ছে সেটা বিবেচনায় রাখা উচিত! অবশ্য যিনি সমস্যাগ্রস্ত তার বোধ-বুদ্ধি হৃাস পায়! তিনি তখন আয়ুর্বেদ-ওঝা, ফকির-প্রজা কারো পরামর্শ ফেলতে পারেন না! বলতে বলতে এমন কারো কবলে পড়েন যে জীবনে যা ছিল আগুন সেখানে ঘি ঢেলে এখন ফাগুনের আশায় বসে থাকেন! জীবনে তুকতাক সমস্যা থাকবে, জটিল হবে আবার সহজ হবে! নিজেদেরকে অথবা আপন কাউকে দিয়ে সমস্যার জট খোলাতে হবে। হ্যারিকেন এমন কারো কাছে দেয়া ঠিক হবে না যিনি আলো কেড়ে নিয়ে বাঁশ উপহার দিয়ে চলে যাবে!

আমরা আসলে কাউকেই চিনি না! দু’দন্ডের পরিচয় তো দু’রের কথা দুইবার জীবন পেয়েও মানুষ চেনা কঠিন! আপনার ব্যথার কথা, আপনার কস্টের গান এমন কাউকে শোনাবেন না যে সেখানে আরও কঠিন কথা, জটিল সুর যুক্ত করে দেবে! আপনার সাময়িক দুর্বলতা জেনে কেউ কেউ আপনাকে স্থায়ীভাবে জ্বালাতন করতে পারে! নিজেকে বিশ্লেষণ করতে শিখুন। ভুল স্বীকার করে, ক্ষমা চেয়ে, নত হয়ে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। দেয়ালে পিঠ ঠেকার আগে কারো দ্বারস্থ হবেন না যেনো! সমাজে সুখ সংক্রামক নয়, অসুখ সংক্রামক। কথা হজম করতে শিখুন। ভালো থাকবেন এবং ভালো রাখবেন।

উল্লেখ্য যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা তৃতীয়পক্ষের দ্বারস্থ হয় এবং তাদেরকেই বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top