কার সাথে কতটুকু সম্পর্ক কিংবা বন্ধুত্ব থাকবে- তা সময় নির্ধারণ করে দেয়! ভেবেছিলেন যাকে ছাড়া বাঁচবেন না তাকে ছাড়াও দিব্যি চলছে। কিংবা জীবনের প্রয়োজনে যে মানুষগুলোর উপস্থিতি-অনুপস্থিতি বিশদ পার্থক্য করতো- আজ তারাও জীবনের আশেপাশে নাই! সেই বাল্যবন্ধু, স্কুলের সহপাঠী কিংবা যৌবনের সহকর্মী- কতজনকে ধরে রাখতে পেরেছেন। সময়ের স্রোত কিংবা প্রয়োজন- কাকে কোথায় টেনে নিয়ে যায়- আগাম আন্দাজও করা যায় নাা। যে মানুষটি সবচেয়ে বেশি ভাবনায় থাকতো, যার শূন্যতা বেদনার ছাপ ফেলতো কিংবা যার সাথে একান্তের আলাপে কেটেছে দীর্ঘক্ষন- সে যদি জীবনের বন্ধন থেকে ছুটে যায় তবে বছরে কতবার মনে পড়ে তার নাম-ছবি-স্মৃতি? কিংবা তার কথা নিয়ে আলাপ করা যায়- এমন মানুষ আশেপাশে কতজন থাকে?
বন্ধুত্ব ধরে রাখা যায় না বন্ধুত্ব থেকে যায়। শত ঝগড়াঝাটি, মান-অভিমান কিংবা হাতাহাতির পরেও যে থাকে সে বন্ধু। কেউ স্বার্থে হারিয়ে যায় কিংবা কেউ রাগ করে কথা বলে না- এমন সম্পর্ক নষ্ট হলে কিংবা মুখগুলো হারিয়ে গেলেও স্থায়ীভাবে মন খারাপ করে না। বরং প্রয়োজনে প্রিয়জন হওয়া মানুষগুলো বিদায় নিলেই সময়ের উপভোগ সুন্দর হয়ে ওঠে। তখন বিশ্বাসভঙ্গের ভয় থাকে না কিংবা মন খারাপের ঢেউ ওঠে না। জীবনে হাজারো মানুষের সাথে বন্ধুত্বের প্রয়োজন পড়ে না। বন্ধুর মত বন্ধু একজন যথেষ্ট। যদি সেই একজনকেও না পাওয়া যায় তবে বন্ধু হয় প্রকৃতি, বই কিংবা কফির মগ! গান শুনতে শুনতে ক্ষয়ে যায় জীবনের আয়ু। ক্ষতিকর বন্ধুর চেয়ে উদাস দুপুরের দিকে চেয়ে থাকা আরও বেশি উপভোগ্য!
জীবনের সৌন্দর্যের জন্য বন্ধুত্বের প্রয়োজন আছে। মানবজীবনের অধিকাংশ বন্ধু বাল্যকালে জুটে। দাম্পত্যের সঙ্গী যদি বন্ধু হয় তবে সেটা খোদার বিশেষ অনুগ্রহ। এছাড়া যারা আসে জীবনের পরতে পরতে তাদের কেউ প্রয়োজনে, কেউ ঠেকে কিংবা কেউ সময় কাটাতে আসে। এরা থাকে না। ঋতুর পালাবদলের সাথে মুখগুলোর পরিবর্তন হয়। এরা সুখের সময়ে যত কাছাকাছি থাকে, বিপদের দিনে টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না। ছায়া মেলে না প্রয়োজনে। সুদিনে যে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানায়, পদোন্নতিতে অভিনন্দন জানায় কিংবা ঘনঘন রাখে খোঁজ- বন্ধুত্বের চেয়ে তার স্বার্থ বেশি। সে আদায় করে নিতে চায়- বিত্ত! অপব্যবহার করতে চায় বন্ধুত্বের চিহ্ন সংবলিত সাইনবোর্ড!
বন্ধু বিশ্বস্ত না হলে তার চেয়ে গরু-ছাগলের সাথে সময় কাটানো উপকারী! কুকুরে সাথে হাঁটতে যাওয়া নিরাপদ। যে বন্ধুরূপে বহুরূপ ধারণ করে সে সুযোগ পেলেই কামড় বসাবে। স্বার্থ ফুরোতেই পালিয়ে যাবে। জীবনে কে থেকে যাবে আর কে ছেড়ে যাবে তা আগাম আন্দাজ করা যায় না। ছোট ছোট কামড়ে, সময়ের ক্ষততে মানুষের শিক্ষা হয়। মানুষ সঙ্গ ছাড়া মানুষের সবচেয়ে ভালো সময় কাটে- যদি সে মানুষ বিশ্বাসঘাতক হয়। যে দরদ ধরতে জানে না, যে মায়া করে না কিংবা যে বিপদে পাশে দাঁড়ায় না সে বন্ধু নয় বরং প্রতিপক্ষ। শান্তির জন্য পক্ষ-বিপক্ষ চিনতে হবে। সাবধান থাকতে হবে আক্রমন থেকে বাঁচার তাগিদে। নজরদারিতে রাখতে হবে বন্ধুত্বের ছদ্মবরণে থাকা শত্রুকে। কেননা দূরের মানুষ ক্ষতির কারণ হতে পারে কম। যত বড় ক্ষতি তা কাছের মানুষ খুব যত্ন করেই করে!
যে বন্ধু সে মনের মানুষ না হলে তাকে ভরসা করে, বিশ্বাস করে ঠকা বোকামি। বরং এড়িয়ে চলাতে মঙ্গল। জীবনে সবচেয়ে বেশি সচেতনভাবে বন্ধু বাছাই ও বরণ করতে হবে। বন্ধুত্ব সেই শক্তি যা চিরকাল মানুষের মনে স্বস্তির বাতাস জিইয়ে রাখে। মনের দরজা খুলে যাকে অভিবাদন জানানো হয়েছে সে যদি ডাকাতি করে বিশ্বাস, লুটপাট করে আস্থাশীলতার দুর্বলতা কিংবা বিকিয়ে দেয় সম্মান- তবে তাকে এড়িয়ে চলা নিরাপদ। কথা তো শত্রুর সাথেও হতে পারে তবে মনের কথা মনের মানুষের সাথে হলে কথাতেও শান্তি নাজিল হয়। হৃদয়ের সুকুন সত্য বন্ধুত্বের পথ গলিয়ে আসে। জীবনের যে কোন ফ্রেমে একজন নিরেট বন্ধুর প্রয়োজনীয়তা বন্ধুহীনরা হাড়ে হাড়ে টের পায়। কাজেই সত্যিকারের বন্ধুত্বের জন্য হৃদয়ের সরলতা দরকার।যার বন্ধু আছে সে নির্ধন হলেও ধনী।
রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
Fb.com/rajucolumnist/
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।