All Menu/p>

আমাদের অভদ্র ভাষা ভদ্র ভাষায় বদলে যাক

মোটা হয়ে গেছো? শরীরে গোস্ত কই? আরে এ দেখি টাক হয়ে গেছো! এখনো বিয়ে হয়নি? কিংবা আরে কালারে কালা!- এসব বলে বলে মানুষ বড্ড সুখ পায়! নিজের মধ্যকার অসুস্থতা বাড়িয়ে তোলার টনিক পায়! এই গরীবের সাথে তোমরা কি আর সম্পর্ক রাখবা- এই কথা কয়েকবার শোনায়। মানুষ আসলে ব্যথা দিয়ে মজা পায়। আপনাকে একটু বেকায়দায় ফেলতে পারলে, দমাতে পারলে খুব শান্তি পায়! তার জীবনের সব হার কথা দিয়ে জিতে গিয়ে পোষাতে চায়। অথচ আরও নগ্নভাবে হেরে যায়।

এখনো কিচ্ছু করো না, চাকরি-বাকরি পাবা, আমার অমুক তো তমুক তমুক কাজ করে। তার কত কত যোগ্য আর তোমার মধ্যে তো গুণের কিছুই নাই- এসব বলে বেকারকে, ছোট চাকুরিজীবীকে অসহনীয় যন্ত্রণা দিয়ে সহনীয় পর্যায়ের সুখ পায়! সৎভাবে সাদামাটা জীবন যাপনকারীকে থামিয়ে দবতে চায়। কোথাও দুর্বলতা পেলে, ব্যর্থতার খবরকে মহাকাব্যে পরিণত করতে কিংবা দুর্নাম রটাতে এমন মানুষের জুরি মেলা ভার! পেছনে দুর্নাম ছড়াতে মানুষের চেয়ে মেশিনও বেশি পারে না। বাবারে বাবা!

কথার আঘাত দিয়ে সে বিশ্বজয়ের তৃপ্তি পায়! জঘণ্য রকমের ব্যক্তি আক্রমণ করে মানুষ নিজেদের মধ্যে পশুত্বের মাহফিল করে। পরের ভুঁড়ি নিয়ে তার যত দুশ্চিন্তা তত চিন্তা তার জীবন নিয়েও করে না। বিয়ে হচ্ছে না কেন, বাচ্চা নিচ্ছ না কেন কিংবা চাকুরি পাচ্ছ না কেন- এসব কথা তাদের ঠোঁটের আগায় ইনস্টলেশন করাই থাকে! কেমন আছ জিজ্ঞেস করার বদলে এসব জিজ্ঞেস করে। ওদের চিন্তা-ভাবনা, আফসোস দেখে মনে হয় যেন ওরাই খাওয়ায়, ওরাই পড়ায় এবং ওরাই গড়ে! আপনি ব্যর্থ হলে ওদের আত্মহত্যা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।

অথচ মানুষ একই কথা ঘুরিয়ে বললে তাদেরকে শুভাকাঙ্ক্ষী মনে হয়। মানুষ আসলে ইচ্ছা করলেই আপন হতে পারে। ভাষাও তখন ভদ্র হয়! স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দাও, ওজন বাড়তে দিও না। নিজেকে যত্ন করো, ঠিকঠাক সময়ে খাও। চুলে তোমাকে সুন্দর লাগে, চুলগুলোকে যত্ন করো। তোমার জীবনে যোগ্য মানুষ আসবে- তাড়াহুড়ো না করে অপেক্ষা করো কিংবা চেষ্টা চালিয়ে যাও। তোমার মত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টের চাকুরি না হয়ে পারবেই না- চেষ্টা অব্যাহত রেখো। মানুষ যদি হাসিমুখে কথা বলে, শত্রু না হতে চেষ্টা করে তবে মানুষের চেয়ে মানুষের আপন আর কেউ হয় না। তার চেয়ে সুন্দর-স্নিগ্ধও কেউ হয় না।

কাউকে আঘাত করে কথা বলার মত বড় পাপ আর নাই! অনেকের খাছলত খোঁচা মারা। তারা স্বভাব সিদ্ধভাবেই সোজা কথা বাঁকা করে বলে। তাদেরকে মাফ করা যায়। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ আছে যারা ইচ্ছা করেই অন্যকে আঘাত করে খুশি হয়। ব্যথা দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। কাউকে না খোঁচালে তাদের খাবার হজম হয় না। নিজের সন্তানদের খবর নাই অথচ পড়শীর সন্তানের দুশ্চিন্তায় তার ঘুম হয় না। এদের সাক্ষাৎ, আলাপ এড়িয়ে চললে মোটামুটিভাবে শান্তিতে বাঁচা যায়।

যে কথা শুনে সহ্য করা মুশকিল তা ইগনোর করতেই হবে। সুখে থাকার জন্য, বেঁচে থাকার জন্য গ্রহণ করার চেয়ে এড়িয়ে চলার শিক্ষা বেশি জরুরি। অনেক কথা কান পর্যন্ত আসবে কিন্তু তা মগজে নেওয়া যাবে না। নিজেকে নিজে চিনতে পারলে, নিজর মধ্যে আত্মপ্রত্যয় মজবুত হলে এবং নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিভোর থাকলে কে কী বললো তাতে কী যায় আসে? বরং কারো কথা শুনে, খোঁচায় মন খারাপ করলে, ভেঙে পরলে নিজের ভাগের সময় থেকেই নষ্ট হবে! সুখের অপচয় হবে। পরের কথা বোকারা মন খারাপ করে।

রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।
Fb.com/rajucolumnist/

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top