আশরাফুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: জেলার বিভিন্ন মসজিদের ইমামগণকে নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মতবিনিময় সভা করেছে বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি (নাটাব) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা। “যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে” রবিবার দুপুরে শহরের কাঁঠাল বাগিচাস্থ শিশু শিক্ষা নিকেতন মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নাটাবের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিম উদ দৌলা চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ এস.এম মাহমুদুর রশিদ। প্রধান আলোচক ছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ মোঃ তৌহিদুল ইসলাম। নাটাবের রাজশাহী জোনের মাঠ কর্মকর্তা মোঃ শামীম রেজা। জেলা নাটাবের সদস্য মো. আনিসুর রহমানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায়-৩০ জন ইমাম অংশগ্রহণ করে। সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করা হয় এবং জেলা নাটাবের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মনোয়ার খান চান্নার সুস্বাস্থ্য কামনা করে দোয়া করা হয়। বক্তারা, যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধে জেলার মসজিদের ইমামগণের প্রতি বিশেষ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। সামাজিকভাবে সচেতনতার মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলেও মতামত ব্যক্ত করেন আলোচকগণ ও নাটাব নেতৃবৃন্দ। আলোচকগণ ও বক্তারা বলেন, যক্ষ্মা রোগ শুধু মানুষের ফুসফুসেই হয়না, হাড়েও হয়। হাড়ে যক্ষ্মা রোগ প্রায় ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ হয়। ৫০% লোকের মেরুদণ্ডে এই রোগ হয়। ফলে আক্রান্ত রোগী সামনে বা পেছনের দিকে বাঁকিয়ে যায়। আক্রান্ত হলে হাঁটুতে এবং পায়ের গোড়ালীতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসা নিলে সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। যক্ষ্মা রোগীকে সঠিকভাবে ঔষধ সেবনের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এতে ডটস উল্লেখযোগ্য-ভাবে ভূমিকার রাখে। বক্তারা আরও বলেন, একটানা ৩ সপ্তাহের বেশী কাঁশি হলে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে হবে। হাঁচি ও কাঁশির মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগ সংক্রমণ হয় এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে যাওয়া মানুষদের আক্রান্ত করে ফেলে। সাধারণত: রোগ প্রতিরোধ কমে মানুষরা এই রোগে বেশী আক্রান্ত হয়। যক্ষ্মা রোগ দেখা দিলে নিয়মিত, পরিমিত ও ক্রমাগত এবং সঠিকভাবে ঔষধ সেবন করাতে হবে। সমাজ থেকে এই রোগ প্রতিরোধে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের সচেতনতায় পারে কঠিন রোগ যক্ষ্মা থেকে সমাজ তথা দেশকে রক্ষা করতে। মানুষের নখ ও চুল ছাড়া সব স্থানেই যক্ষ্মা রোগ হতে পারে। তাই সমস্যা হলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ টিবি ক্লিনিকে আধুনিক মেশিনে মাত্র ১ ঘন্টায় যক্ষ্মা রোগ পরীক্ষা করা যায় এবং ফলাফল দেয়া হয়। সন্দেহ হলেই টিবি ক্লিনিকে পাঠিয়ে পরীক্ষা করে নেয়ার অনুরোধ জানান বক্তারা। বক্তারা আরও বলেন, ডটস্ এর মাধ্যমে সমাজের প্রতিনিধির তত্বাবধানে যক্ষ্মা রোগীকে সঠিকভাবে ঔষধ খাওয়ানো হচ্ছে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা সেবা নিয়ে ঔষধ সেবন করলে যক্ষ্মা ভালো হয়। নিয়মিত ও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চিকিৎসা না নিলে পরিণতি ভয়াবহ যা এমডিআর রোগীর সংখ্যা বাড়বে বলেও বক্তারা বলেন। নাটাব যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সামাজিক কুসংস্কার, অজ্ঞতা, অবহেলা, অর্থনৈতিক সংকট ও তথ্যের অভাবে যক্ষ্মা রোগীরা চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে চান না, চিকিৎসা নিলেও নিয়মিত ওষুধ সেবন এবং পূর্ণ সময় চিকিৎসাও গ্রহণ করেন না। নাটাব সরবারের ডটস্ কর্মসূচির অংশীদার হিসেবে রোগীদের চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন করে তোলার ব্যাপারে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে। এর আগেও জেলা নাটাবের উদ্যোগে ইমাম, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী, সাংবাদিক, ক্রীড়া সংগঠক, সাংস্কৃতিক কর্মী, এনজিও কর্মী, সুশীল সমাজ, পরিবহন শ্রমিক ও রিকশাচালকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি (নাটাব) এর জন্ম হয় ১৯৪৮ সালে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশব্যাপী যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতার মাধ্যমে কাজ করে আসছে নাটাব।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।