All Menu

এই যুগের আসমানি বিবি হাজেরা

ইয়াকুব নবী ইমন, নিজস্ব প্রতিনিধি, নোয়াখালী, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন:

আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,

রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।

বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,

একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।

একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,

তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।
পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের কল্পনার সেই আসমানী কোথায় আছে জানা গেলেও আসমানী চরিত্রের এই যুগের আসমানী চির দু:খীনি, দু:খ যার নিত্যসঙ্গী নোয়াখালীর বিবি হাজেরার খোঁজ রাখেনা কেউ। স্বামীর মৃত্যু ১৮ বছরেও বিধবা ভাতা মেলেনি হতভাগা এই বিধবা বিবি হাজেরার। স্বামীর মৃত্যুও পর পর দুই সন্তানেরও মৃত্যু হলে হাজেরার জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। বিধবা ভাতার জন্য জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরলেও কোন কাজ হয়নি। বর্তমানে বিধবা হাজেরা দুই নাতিকে নিয়ে একটি ভাঙ্গা ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। নি:স্ব হাজেরার কপালে জোটেনি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মুজিব বর্ষের ঘরও।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, বেগমগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ খানপুর মসজিদ বাড়ির নুর নবীর মৃত্যু হয় ২০০৪ সালে। স্বামীর মৃত্যুর পর দুই সন্তান নিয়ে শুরু হয় বিধবা বিবি হাজেরার জীবন যুদ্ধ। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। পর পর দুই সন্তানও বিবি হাজেরাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায়। দুই সন্তানের মৃত্যুর পর অনেকটা নি:স্ব ও অসহায় হয়ে পড়েন বিবি হাজেরা। একমাত্র পুত্র বধূ ও দুই নাতিকে নিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আবারও সংসারের হাল ধরেন বিবি হাজেরা। সম্প্রতি টানা টানির সংসার ছেড়ে পুত্র বধূ বাপের বাড়িতে চলে যায়। সংসারে আয়ের কোন উৎস না থাকায় বর্তমানে দুই নাতিকে নিয়ে অন্যের ভাঙ্গা ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছে অসহায় বিবি হাজেরা। জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী এই নারীর পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে স্বজন ও এলাকাবাসী। এলাকার প্রবাসী হাসানসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর এই নারী দুই সন্তানকে নিয়ে পুনরায় সংসার শুরু করেন। এক-পুত্রকে বিয়েও করান। একজনকে বিদেশ পাঠান। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। একে একে তার দুটি সন্তানই মারা যায়। ধারা দেনা করে এক ছেলেকে বিদেশে পাঠালেও বিদেশে অসুস্থ হয়ে দেশে এসে সে মারা যায়। তার ধারদেনাও এখনো শোধ করা যায়নি। এরমধ্যে দুই সন্তানকে রেখে পুত্র বধূও বাবার বাড়ি চলে যায়। অসহায় বিবি হাজেরার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। দুই নাতিকে নিয়ে অনেক দু:খে কষ্টে দিন পার করছেন তিনি। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা অসহায় ভূমিহীনদের জন্য ঘর করে দিলেও এই বিধবা নারীর ভাগ্যে তাও জোটেনি। স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা ভাতার কার্ডের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েও কোন লাভ হয়নি বলে অভিযোগ করেন সংগ্রামী নারী বিবি হাজেরা। তিনি বলেন, এলাকার মেম্বারসহ বিভিন্ন জনে কাছে গিয়েছি। তারা বার বার বলছে বিধবা ভাতার কার্ড নাই। আমার বয়স হয়নি তাই বয়স্ক ভাতাও পাবোনা। এখন আল্লাহ ও এলাকাবাসী ছাড়া আমার আর কেউ নেই। তবে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার নাছরুল্লাহ আল মাহমুদ। তিনি বলেন, আমি আপনাদের মাধ্যমে এই প্রথম বিষয়টি শুনেছি। আমাদের ইউনিয়ন সমাজ কর্মীর মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর বেগমগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহমেদ উল্যাহ সবুজ সরেজমিন গিয়ে বিধবা বিবি হাজরাকে দেখে আসেন। তিনি নিজের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সহযোগিতার পাশাপাশি সরকারী ভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসির আরাফাত জানান, আমরা ইতিমধ্যে ওই বিধবা নারীর খোঁজ খবর নিয়েছি। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। এই বিধবা নারীকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারী ভাবে যতটুকু সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top